Tokyo Paralympics: তালিবানি-গ্রেনেডে আফগানিস্তানে হাত হারানো জ্যাকো প্যারালিম্পিক চ্যাম্পিয়ন
আফগানিস্তানে ফিরে এসেছে অস্থির সময়। তালিবানরা দখলে নিয়েছে দেশ। নতুন নাম হয়েছে আফগানিস্তান ইসলামি আমিরাত। দেশে সঙ্কটের পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের প্যারা-অ্যাথলিটরা টোকিওয় যেতে পারেননি। এই দুই তাইকোন্ডো খেলোয়াড়কে উদ্ধার করে অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি। এরই মধ্যে গ্রেট ব্রিটেনের সাইক্লিস্ট জ্যাকো ভান গাসের সোনা জেতার পর মনে পড়ছে সেই আফগানিস্তানেই তালিবানি হামলায় ভয়ঙ্কর রাতের কথা।
সেনাবাহিনী থেকে সাইক্লিংয়ে
১৯৮৬ সালের ২০ অগাস্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম জ্যাকো ভান গাসের। ২০ বছর বয়সে দেশের সম্পত্তি বিক্রি করে চলে আসেন ইংল্যান্ডে ব্রিটিশ আর্মিতে যোগ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে। ২০০৭ সালে ১০৮ জনের মধ্যে থেকে যে ২২ জন প্যারাট্রুপারকে বেছে নেওয়া হয়েছিল তাঁদের মধ্যে একজন হিসেবে ট্রেনিং শেষ করে প্যারাশুট রেজিমেন্টে যোগ দেন জ্যাকো। ২০০৮ সালে সফলভাবেই আফগানিস্তানের প্রথম সফর সেরে ফিরেছিলেন। বছরখানেক পর ফের যেতে হয় আফগানিস্তানে। সেই সফর শেষ হওয়ার সপ্তাহ দুয়েক আগে, আফগানিস্তানের নির্বাচনের আগে ভান গাসদের পাঠানো হয় শেষ অপারেশনে। কিন্তু সেটাই যে তাঁর সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় যবনিকা টানবে কে ভেবেছিল? এক ভয়ঙ্কর রাত সব কিছু ওলটপালট করে দেয়। সেনাবাহিনী ছাড়তে বাধ্য হন প্রাণ সংশয় নিয়ে। পরে হতে হয় রেসিং সাইক্লিস্ট, নামতে হয় প্যারা ইভেন্টেই!
অভিশপ্ত রাত
ভান গাস সেই ভয়ঙ্কর রাতের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেছেন, এক আত্মঘাতী জঙ্গি আইইডি বা ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস দিয়ে নির্বাচনকে বানচাল করতে চায় বলে খবর এসেছিল আমাদের কাছে। আমরা অভিযানে গিয়ে তাকে ধরে ফেলি এবং আত্মঘাতী বিস্ফোরণের যাবতীয় সরঞ্জাম উদ্ধার করি। এরপর আমাদের শিবিরে ফিরে আসার কথা ছিল। মরুভূমির যে জায়গা থেকে আমাদের হেলিকপ্টারে ওঠার কথা ছিল সেখানে ল্যান্ডিংয়ে সমস্যার কারণে অন্য একটি পিক-আপ পয়েন্টের কথা জানানো হয়। প্রথম পিক-আপ পয়েন্টের রাস্তা নিরাপদ ও আমাদের জানা থাকলেও, নতুনটির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। দুই সদস্যের স্নিপার টিমের একজন হিসেবে ব্যাকপ্যাকে টেলিস্কোপিক ল্যাডার নিয়ে এগোতে থাকেন ভান গাসরা। যেতে যেতে মাঝরাত পেরিয়ে যায়, সেদিন ছিল জ্যাকো ভান গাসের ২৩ তম জন্মদিন। অনেকটা পথ হেঁটে তাঁরা যে জায়গায় চলে আসেন সেটা পরে জানা গিয়েছিল সেখানে তালিবানদের শক্ত ঘাঁটি। জঙ্গিরা সেখানে ঘোরাফেরা করছিল। একটু পরেই বিভিন্ন দিক দিয়ে গুলি উড়ে আসতে থাকে। জঙ্গিদের বাধা প্রতিহত করছিলেন জ্যাকো ও তাঁর সঙ্গী। গুলির আওয়াজ শুনে তাঁরা তল্লাশিও চালাতে থাকেন। এরপরই দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল গুলিবর্ষণ চলে। ৪০-৪৫ মিনিট ধরে। জ্যাকোদের লক্ষ্য করে দুটি আরপিজি বা রকেট প্রপেলড গ্রেনেড উড়ে আসে। প্রথমটি তাঁরা এড়াতে সক্ষম হন। কিন্তু দ্বিতীয়টি তাঁদের খুব কাছে এসে পড়ে। তাঁর সঙ্গী যখন বন্দুকে ম্যাগাজিন ভরছিলেন তখনই রকেট গ্রেনেড জ্যাকোর ল্যাডারে লেগে বিস্ফোরণ ঘটে। তাতেই হাত হারাতে হয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লেগেছিল। ফুসফুসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খুব খারাপ অবস্থায় ব্রিটেনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় জ্যাকোকে। সেখানে ১১টি অপারেশনে জীবনরক্ষা হয়।
বদলে যাওয়া জীবন
মিলিটারি কেরিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল তালিবানি গ্রেনেডে। হাত হারিয়েও মনের জোরে নতুন চ্যালেঞ্জের দিকে ধাবিত হন জ্যাকো। চ্যারিটি ট্রেক-সহ নানা অভিযানে যান। স্কি শিখে কম্বাইন্ড সার্ভিসেস ডিসএবলড স্কি টিমের সদস্য হন। ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা-জাত প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে মানাসলু শৃঙ্গজয় করেন। ২০১২ সালে মাউন্ট এভারেস্টে ওঠার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে পারেননি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রিন্স হ্যারির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ওয়াকিং উইথ দ্য উন্ডেড কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ৩৩৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কুমেরুতে গিয়েছিলেন। জ্যাকোর কথায়, অপারেশন টেবিলে দুবার হৃদস্পন্দন স্তব্ধ হওয়ার পরও মরিনি। সেখান থেকে যে জায়গায় পৌঁছেছি তাতে আমি অভিভূত। একটা সময় আমি নিজেই নিশ্চিত ছিলাম না কোনওদিন হাঁটতে কিংবা দৌড়াতে পারব কিনা তা নিয়েই। এখন আমি প্যারালিম্পিক্সের আসরে! কত মানুষের সমর্থন, ভালোবাসা। আমি অভিভূত। আমাকে দেখে কেউ যদি প্রেরণা পান সেটাই আমার কাছে বিশাল ব্যাপার।
সোনা-সহ দুই পদক
২০১২ সালের লন্ডন প্যারালিম্পিক্সে দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জ্যাকো ভান গাস। সেখানেই প্যারা-অ্যাথলিটদের দেখে খেলাধুলো নিয়ে এগিয়ে যেতে তিনি উৎসাহিত হন। রিও প্যারালিম্পিকে সুযোগ আদায় করতে না পারলেও টোকিওয় পেরেছেন। গতকাল তিনি সতীর্থ ফিন গ্রাহামকে সাত বছরের বিশ্বরেকর্ড ভাঙতে দেখার পর সেই রেকর্ডটি নিজেও ছাপিয়ে যান। আর সেটিই নিশ্চিত করে জ্যাকোর সোনা-জয়। স্বপ্নপূরণ। পুরুষদের পারস্যুট সি থ্রি-তে সোনা জয়ের পর আজ পুরুষদের ১০০০ মিটার টাইম ট্রায়ালের ফাইনালেও ব্রোঞ্জ জিতেছেন জ্যাকো। আফগানিস্তানে তালিবানি হামলা বদলে দিয়েছিল জীবন। প্রাণ সংশয় কাটিয়ে খেলার দুনিয়ায় ফিরে আফগানিস্তানের অশান্ত সময়ের মধ্যে জ্যাকো যেটা টোকিওয় করে দেখালেন সেটা নিশ্চিতভাবেই জীবনের জয়গান।
Round numbers fans: @jacovangass and @FinGparacyclist just won our 1799th and 1800th summer Paralympic medals!#ImpossibleToIgnore pic.twitter.com/0L1Kau6Q5q
— ParalympicsGB (@ParalympicsGB) August 26, 2021
BRONZE and C3 WORLD RECORD for @jacovangass🥉
— ParalympicsGB (@ParalympicsGB) August 27, 2021
What a Games this man is having!#ImpossibleToIgnore #Paralympics pic.twitter.com/yvEqx3cOyJ
(ছবি- জ্যাকো ভান গাসের ইনস্টাগ্রাম)