ভাঙা ধনুকে স্বপ্নভঙ্গ, সোনা জয়ী তিরন্দাজ আজ স্টেশনে চা বিক্রেতা
ভাঙা ধনুকে স্বপ্নভঙ্গ, সোনা জয়ী তিরন্দাজ আজ স্টেশনে চা বিক্রেতা
একটা ভাঙা ধনুক-ই স্বপ্ন ভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়াল প্রতিভাবান তিরন্দাজ দীপ্তি কুমারির কাছে। মেয়েকে পেশাদার তিরন্দাজের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দেওয়ার জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে নেওয়া মায়ের ঋনের টাকা শোধ করতে এখন রাঁচিতে চায়ের দোকান চালান দীপ্তি।
অচিরেই ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের দিকে ফিরে তাকিয়ে উদাসীনে নয়নে তিনি বলছিলেন, "২০০৬ সালে আমি তিরন্দাজি শুরু করি এবং একাধিক জাতীয় টুর্নামেন্টেও অংশ নিই।" ২০১২ সালে দীপ্তি কুমারি ক্যাডেট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে ৬০ মিটারে সোনা জেতেন, ৫০ মিটারে ব্রোঞ্জ এবং ৩০ মিটারে রূপো ধরা দেয় তাঁর কাছে। দীপ্তি বলেন, "ওই সময়েই আমার ধনুক ভেঙে যায়।" তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বাবা-মায়ের পক্ষে নতুন একটি ধনুক কিন দেওয়া সম্ভব ছিল না কারণ তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভাল ছিল না। ঝাড়খণ্ডের লোহারডাগা জেলায় স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে তাঁর মা ৭ লক্ষ টাকা ঋন নিয়েছিলেন যার থেকে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল ওই ভেঙে যাওয়া ধনুকটি কেনার জন্য।
ধনুক ভাঙলেও মন ভাঙেনি দীপ্তির। ২০১৮ পর্যন্ত নিজের স্বপ্নকে তাড়া করে বেড়িয়েছেন। বাঁশের ধনুক তৈরি করে বিভিন্ন ঘরোয়া প্রতিযোগীতা, যার মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল জুনিয়র এবং ন্যাশনাল সিনিয়র লেভেলে অংশ নেন তিনি এবং পদকও জেতেন। কিন্তু কোনও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়া সম্ভব হয়নি তাঁর জন্য কারণ আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগীতায় বাঁশের তৈরি ধনুকেও কোনও জায়গা নেই। দীপ্তিকে যিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন সেই 'গুরু' জানিয়েছেন, যথেষ্ট প্রতিভাবান ও এবং যদি সুযোগ দেওয়া হয় তা হলে ভাল পারফর্ম করবে। দীপ্তি বলছিলেন, "আমি এখনও লক্ষ্য মিস না করে তাতে আঘাত হানতে পারি। আমি যদি একটা চাকরি পাই তা হলে আমার পরিবারকে সহযোগিতা করার পাশাপাশি অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারি এবং পদকও আনতে পারি।"
দীপ্তি জানিয়েছেন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্য মন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সরকারের কাছে তিনি চাকরির আবেদন করেছিলেন যখন মুখ্যমন্ত্রী প্রতিভাবান ক্রীড়াবীদদের চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা ছিলেন কিন্তু এখনও কোনও চাকরির ফোন আসেনি তাঁর কাছে। তিনি বলেছিলেন, "আমার কাছে আর কোনও উপায় নেই, টাকা উপার্জনের কোনও রাস্তা খুঁজে বের করা ছাড়া, আমি বিগত দুই বছর ধরে এখানে চা বিক্রি করছি।"