রাজনৈতিক দলগুলি ছাড়াও যে ইস্যুর বিরুদ্ধে লড়ে জিতল মমতা ও তৃণমূল
বাম-কংগ্রেস-বিজেপির বিরোধিতা ছাড়াও আরও অনেক ইস্যুতে লড়তে হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সরকারে আসার পর থেকেই একের পর এক দুর্নীতি কাণ্ডে নাম জড়ায় তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের। সেই তালিকায় নাম জড়ানোর চেষ্টা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।
১৯৫২-২০১৬ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের ফলাফল একনজরে
সততার যে ইমেজ মমতা তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারে তৈরি করেছেন তা কোথাও গিয়ে ধাক্কা খায়। কিন্তু সেসবকে পিছনে ফেলে তিনি ফের একবার প্রমাণ করলেন বাংলায় ভোট জিততে তাঁর চেয়ে বড় বাজি আর কেউ নেই। ২০১১ সালে যত আসনে তিনি জিতেছিলেন তার চেয়ে বেশি আসনে জেতার ক্ষেত্রে এগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস।
আগের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধলেও এবার একা লড়েছেন মমতা। বিরোধীরা এককাট্টা হলেও বাংলার মানুষের আশীর্বাদ ফের একবার মমতার মাথায়। গত পাঁচ বছরে কোন কোন ইস্যুগুলির বিরুদ্ধে লড়ে জিততে হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তা দেখে নেওয়া যাক।
সারদা কেলেঙ্কারি
ক্ষমতায় আসার দুই বছরের মধ্যেই সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারি কলজে নড়িয়ে দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের। একেরপর এক তৃণমূল নেতা-মন্ত্রী-সাংসদের নাম জড়িয়েছে এই কাণ্ডে। জেলে গিয়েছেন তৃণমূলের সাসপেন্ডেড রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ, প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র সহ একাধিক নেতা।
তবে এই সারদা কেলেঙ্কারি পরপর হওয়া কোনও ভোটেই প্রভাব ফেলতে পারেনি। এবারও পারল না। যদিও বিরোধীদের অন্যতম অ্যাজেন্ডা ছিল ভোটে জিতে চিটফান্ডে প্রতারিতদের টাকা ফেরত দেওয়া।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ
বর্ধমানের খাগড়াগড়ে ২০১৪ সালের শেষের দিকে হওয়া বিস্ফোরণে জঙ্গি যোগ পাওয়া গিয়েছে। একইসঙ্গে এটাও উঠে আসে, এই কাণ্ডে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের যোগের কথা। কিন্তু বিরোধীরা এই নিয়ে চেঁচামেচি করলেও হালে পানি পায়নি কোনও অভিযোগ।
টেট কেলেঙ্কারি
প্রাথমিকে চাকরির জন্য টেট পরীক্ষা নিতে গিয়ে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয় রাজ্য সরকার। কয়েক লক্ষ যুবক-যুবতী হা-পিত্যেশ করে থাকলে এখনও তাঁরা চাকরি পাননি। এই নিয়ে আইনি জটিলতাও তৈরি হয়েছে। ফলে সবমিলিয়ে কয়েক লক্ষ কর্মসংস্থান আটকে রয়েছে।
শিল্প
পশ্চিমবঙ্গে কোনওকালেই সেভাবে শিল্পের পরিবেশ তৈরি হয়নি। ইংরেজ আমলের যে সকল শিল্প ছিল তা ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাম আমলে আবলুপ্ত হয়। বাম সরকারও যে শিল্পবান্ধব পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছিল তাও নয়।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে খানিক চেষ্টা হলেও তা যথেষ্ট ছিল না। সিঙ্গুরের বহুফসলি জমি নিয়ে তো লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে গিয়েছিল। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সরকারের আমলেও একেরপর এক ছোট-বড় কারখানা, কোম্পানি বন্ধ হয়েছে, ইনফোসিসের মতো সংস্থা পাততাড়ি গুটিয়েছে। সেভাবে কোনও বিনিয়োগ আনতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। তবুও মানুষের আস্থা কমেনি।
বেকারত্ব
বহুবছর ধরেই পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্ব এক তীব্র আকার নিয়েছে। রাজ্যে রেজিস্ট্রার্ড বেকারের সংখ্যাই প্রায় কোটি খানেক। কয়েক লক্ষ চাকরি দিয়েছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দাবি করলেও তা কোন খাতে সেটা নিয়ে তর্ক রয়েছে। তাতে বেকার যুবকদের জ্বালা কতোটা মিটেছে সেটাও ভাবার বিষয়। এই নিয়ে বিরোধীরকা তুমুল প্রচারও সেরেছে। কিন্তু রাজ্যের যুব সমাজের সমর্থন মমতাই পেয়েছেন, বাম-কং জোট নয়।
আইন শৃঙ্খলা
পাঁচ বছরের তৃণমূল শাসনে রাজ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছে আইনশৃঙ্খলার। যেকোনও জেলা ধরুন, একেরপর এক দুষ্কৃতী ও তার সঙ্গে তৃণমূলের দলীয় কর্মীদের নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তাতেও জনসমর্থন কমেনি তৃণমূল কংগ্রেসের।
সিন্ডিকেট রাজ
বাম আমলে তৈরি হওয়া সিন্ডিকেট ব্যবসা যেন ঝড়ের গতি পেয়েছে তৃণমূলের আমলে। ছোট-বড় এক একজন নতুন নেতা তৈরি হয়েছেন একে ঘিরেই। এই ঝামেলার কথা স্বীকার করেছে তৃণমূল নেতৃত্বও। সিন্ডিকেট করলে দল করবেন না, মমতা নিজেও এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এর জন্য অনেকের প্রাণও গিয়েছে। তবুও এর বাড়বাড়ন্ত থামেনি।
প্রশাসনের একাংশের তাবেদারি
বাম আমলে যে প্রশাসনকে ব্যবহার করে নানা ঘটনা ঘটানো হতো, সেই একইপথে এবং অবশ্যই একধাপ এগিয়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বামেদের পথে চলেই প্রশাসনের একাংশকে তাবেদারিতে বাধ্য করেছে শাসক দল।
নারদা
বিধানসভা ভোটের আগেই নারদা কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসে। একেরপর এক তৃণমূল বিধায়ক, মন্ত্রী, সাংসদকে ঘুষের টাকা নিতে দেখা যায়। এই ঘটনায় তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে তৃণমূল নেতৃত্ব। তা সত্ত্বেও সব সমালোচনাকে দূরে সরিয়ে ভোটে জিততে কোনও অসুবিধাই হয়নি তৃণমূল কংগ্রেসের। ২০১১ সালের পরে এবছর একা লড়েও অটুট মমতা ম্যাজিক।