দূষণে ক্ষয়ে যাচ্ছে কলকাতার গর্ব ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
কেন এমন অবস্থা? এক কথায়, দূষণ। মহানগরীর মাঝখানে এর অবস্থান হওয়ায় অবস্থা জটিল হয়েছে। ধর্মতলা, ময়দান, পার্ক স্ট্রিট, রবীন্দ্র সদন চত্বর দিয়ে যে বিপুল সংখ্যক গাড়ি রোজ চলাচল করে, তার জেরে ছড়াচ্ছে দূষণ। এর ফলে ক্ষয়ে যাচ্ছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। একটু একটু করে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে সৌধটি পরিষ্কার রাখার। কিন্তু লাগামছাড়া দূষণের সামনে সেই চেষ্টা খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার মতো। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অধিকর্তা জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, "আমরা নিয়ম করে মার্বেল পরিষ্কার করি। তবে ১০০ শতাংশ পরিষ্কার হয়, এটা বলব না। চারদিকে এত গাড়ি চলাচল করে যে, তাতে পুরোপুরি ক্ষতি আটকানো যাচ্ছে না।"
কীভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে এই শ্বেতশুভ্র সৌধটি? গাড়ির ধোঁয়া বাতাসে মিশে গিয়ে তৈরি হয় সালফার ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড। এর সঙ্গে বাতাসের জলীয় বাষ্প যুক্ত হয়ে অ্যাসিড তৈরি করে। সেই অ্যাসিডের সঙ্গে মার্বেলের বিক্রিয়া হলে তা ক্ষয়ে যেতে শুরু করে।
প্রসঙ্গত, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে বাঁচাতে ইতিমধ্যে এর চারপাশে গাড়ি পার্কিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ধর্মতলা চত্বর থেকে বাস টার্মিনাসও সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। কিন্তু বাস টার্মিনাস সরে গেলও অবস্থা খুব একটা বদলাবে বলে মনে হয় না। কারণ ধর্মতলা থেকে রবীন্দ্র সদন, এই বিরাট এলাকা দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা সম্ভব নয়। অতএব সমস্যা থেকেই যাবে।
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, তাজ মহলকে বাঁচাতে সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা খুবই কার্যকর হয়েছে। আগ্রায় তাজ মহলও একইভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছিল নিকটবর্তী কয়েকটি কারখানার ধোঁয়ায়। শীর্ষ আদালত সব কারখানাগুলিকে তাজ মহলের আশপাশ থেকে পাততাড়ি গোটাতে নির্দেশ দেয়। ফলে তাজ মহলের আর নতুন করে ক্ষতি হয়নি। এখন পুরনো ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ক্ষেত্রে তা হলে আশু সমাধান কী? বলা হচ্ছে, যে যে অংশে মার্বেল পাথর অনেকটা ক্ষয়ে গিয়েছে বা ক্ষয়ে যেতে পারে, সেখানে ব্লকগুলি বদলে দিতে হবে। তাতে অবশ্য দু'টি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত, যে মানের মার্বেল পাথর দিয়ে ব্রিটিশ সরকার সৌধটি তৈরি করেছিল, বিকল্প পাথরও তেমন হতে হবে। নইলে সৌধটি শুধু বাজে দেখতে লাগবে তাই নয়, তা কাঠামোর ক্ষতি করবে। দ্বিতীয়ত, বদলে দেওয়া পাথরও দূষণের ফলে এক সময় ক্ষয়ে যাবে। কারণ কলকাতার দূষণ দিনদিন বাড়বে বৈ কমবে না। সেক্ষেত্রে এই পাথর বদলের প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে!