ধোঁয়া থেকে বাঁচতে স্কুলে এলপিজি! পরিকল্পনা শিক্ষাদফতরের
মনোযোগের ক্লাসে মাঝেমধ্যেই বিরতি টেনে দেয় কাঠকয়লার কালো ধোঁয়া। ক্লাসের পড়ায় মন দেবে কী, ঝাঁঝালো ধোঁয়ায় সব মনোনিবেশ এক লহমায় উধাও।
কলকাতা, ৭ ফেব্রুয়ারি : কঠিন অঙ্ক হোক বা থেকে ভূগোল। কিংবা ইতিহাস হোক বা ভুগোল। মনোযোগের ক্লাসে মাঝেমধ্যেই বিরতি টেনে দেয় কাঠকয়লার কালো ধোঁয়া। ক্লাসের পড়ায় মন দেবে কী, ঝাঁঝালো ধোঁয়ায় সব মনোনিবেশ এক লহমায় উধাও। পড়ায় মন বসানোই কঠিন, আর অঙ্ক তো মাথায় ঢুকবেই না। এবার স্কুলে সেই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। ধোঁয়া থেকে বাঁচতে স্কুলে এলপিজি গ্যাসের ভাবনা শিক্ষা দফতরের।
কালো ধোঁয়ায় ক্লাস ভণ্ডুল হয়ে যাওয়াটা এখন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে স্কুল পড়ুয়াদের। এই ধোঁয়ার উৎস তো মিড ডে মিলের রান্নার জন্য জ্বালানো উনুন। কালো ধোঁয়ার জেরে পঠনপাঠন ব্যাহত হওয়ার কথা দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষা দফতরে জমা পড়েছে। এবার তাই এই নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে শিক্ষাদফতর। আর তাই উনুনের অত্যাচার বন্ধ করে এলপিজিতে রান্নার ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হচ্ছে খোদ শিক্ষাদফতর।
রাজ্য শিক্ষাদফতরের এক আধিকারিকের কথায়। 'প্রথামিক এবং উচ্চ প্রথমিক স্কুলে পড়ুয়াদের মিড ডে মিল দেওয়া হয়। নিয়ম স্কুলেই মিড ডে মিলের রান্না করতে হবে। গ্রামের অধিকাংশ স্কুলেই কাঠ, কয়লা, শুকনো ডাল দিয়ে রান্নার জ্বালানি জোগাড় করা হয়। এতে যে পরিমাণ ধোঁয়া উৎপন্ন হয় তাতে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ হয়, তেমনই শারীরিক ক্ষতিও হয় শিশুদের। এটা মোটেই ভালো নয়।'
এবার তাই এই ব্যবস্থার উপর রাশ টানতে চাইছে রাজ্য সরকার। যদিও এই প্রক্রিয়া যে খুব সহজ নয়, তা বিলক্ষণ জানেন শিক্ষাকর্তারা। রাজ্যে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি স্কুল রয়েছে। সব জায়গায় একসঙ্গে গ্যাস ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, 'এতগুলো স্কুলে একসঙ্গে এলপিজি চালু করা সম্ভব নয়। তবে আমরা ভেবেছি ধাপে ধাপে কাজটা করব।'
দফতর মূত্রে খবর, সম্প্রতি এই সংক্রান্ত একটি বৈঠক সব জেলার স্কুল পরিদর্শককে ডেকে পাঠানো হয়। তাদের নিয়ে হওয়া সেই বৈঠকেই এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। গ্যাসের সংযোগ নিয়ে যে প্রাথমিক খরচ সেটা রাজ্য সরকারই বহন করবে। তারপর মিলের জন্য দেওয়া টাকা দিয়েই কাজ চালাতে হবে। বর্তমানে প্রাথমিকে ছাত্র পিছু ৪ টাকা ১৩ পয়সা এবং উচ্চপ্রাথমিকে ৬ টাকা ১৮ পয়সা বরাদ্দ রয়েছে। গ্যাসের বিল দিতে হবে সেই টাকা থেকেই।
এতে যেমন সুবিধা আছে, তেমন অসুবিধা তৈরি হওয়ার সম্ভবনা বিস্তর বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। রান্নার জন্য গ্যাসের ব্যবস্থা হলে মিড ডে মিল রান্নার ক্ষেত্রে ঝক্কি কমে যাবে। বর্ষাকালে কাঠ এবং অন্য জ্বালানি জলে ভিজে যাওয়ার ঝামেলাও এড়ানো যাবে। আবার গ্যাস ব্যবহারের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সব স্কুল কতটা নিশ্চিত করতে পারবে সেটা অবশ্য এখনই বড়সড় প্রশ্নের।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, 'বর্ষায় মিড ডে মিল দেওয়া যায় না। জ্বালানি ভিজে যায়। সেই ঝামেলা মিটবে। তবে গ্যাস ব্যবহারের পর্যাপ্ত পরিকাঠামো আছে কিনা সেটাও দেখে নেওয়া দরকার।' যদিও এ ধরনের আশঙ্কা অমূলক মনে করছেন শিক্ষা দফতর। এই বিষয়ে এক কর্তা বলেন, 'এর জন্য অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে কর্মীদের।'