তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ আমেরিকা, সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের পরিকল্পনা বাইডেনের
ওপেক সম্মেলনের পর সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের
সম্প্রতি সৌদি সফরে গিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মহম্মদ বিন সলমনের সঙ্গে তিনি বৈঠকও করেন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আশ্বাসও দেন। কিন্তু ওপেক সম্মেলনে সৌদি নেতৃত্বাধীন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো রাশিয়ার পাশে থাকে। তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউসের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আমেরিকার সঙ্গে সৌদি আরবের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করতে চলেছেন।
ক্ষুব্ধ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমার মনে হয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট করে যা বলার বলে দিয়েছেন। রিয়াদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আমাদের আমেরিকার সঙ্গে সৌদি আরবের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করার সময় এসেছে। অপেকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই প্রেসিডেন্ট রিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের কথা ভাবছেন। তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন কংগ্রেসের সঙ্গে রিয়াদ আদৌ সম্পর্ক রাখতে চায় কি না, একসঙ্গে কাজ করতে চায় কি না, তা এবার ভেবে দেখতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, এই বিষয়ে এখনও মার্কিন কংগ্রেসে কোনও আলোচনা হয়নি। অন্যদিকে, আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন কমিটির ডেমোক্র্যাটিক চেয়ারম্যান বব মেনেনডেজ ওয়াশিংটনকে রিয়াদের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর বৈঠক
সৌদি নেতৃত্বাধীন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সম্প্রতি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে অন্যতম সদস্যদেশ রাশিয়ার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নভেম্বর থেকে তেল উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর তরফে জানানো হয়েছে, অপরিশোধিত তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও মনে করা হচ্ছে, এই প্রস্তাব রাশিয়ার থেকে এসেছে। এই সিদ্ধান্তে সব থেকে বেশি রাশিয়া লাভবান হবে। কারণ, রাশিয়ার ওপর ইতিমধ্যে পশ্চিমি দেশগুলো তেল ক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অন্যদিকে, তেল উৎপাদন কমে গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়বে। এই সম্মেলনের আগে জো বাইডেন সৌদি আরবের কাছে অনুরোধ করেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যাতে না বেড়ে যায়, সেই দিকে যেন নজর দেওয়া হয়।
সৌদি আরবের প্রতিক্রিয়া
সৌদি আরবের তরফে জানানো হয়েছে, বৈঠকে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ওপেক গোষ্ঠীভুক্ত সমস্ত দেশ সর্বসম্মত হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক কোনও সম্পর্ক নেই। বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে, তেলের বাজারে অস্থিরতা কমাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে সৌদি দূতাবাসের তরফে জানানো হয়েছে, আমেরিকার সঙ্গে রিয়াদের সম্পর্ক কৌশলগত। এই সম্পর্কের ফলেই মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা উন্নত হয়েছে।
সৌদি-মার্কিন সম্পর্ক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে আমেরিকার সিল মোহর পড়ে। একদিকে, সৌদি আরবের তেল সংগ্রহ করবে আমেরিকা। অন্যদিকে, আমেরিকা সৌদি আরবকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করবে। অগাস্টে নতুন করে আমেরিকার সঙ্গে সৌদি আরবের চুক্তি হয়। সেখানে আমেরিকার সৌদি আরবকে দূর পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সহ একাধিক সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করার চুক্তি করে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে আমেরিকার তাদের সামরিক সরঞ্জামের এক তৃতীয়াংশ সৌদি আরবকে বিক্রি করে। সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলে, আমেরিকাও আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।