ঢাকের আওয়াজে দুলে ওঠে মন, কিন্তু এ তো ঘর নয় পরবাস, তবু মেতে ওঠা প্রবাসের পুজোর আনন্দে
ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা কলকাতায় কিন্তু পেশাগত কারণে আজ তাঁরা প্রবাসী। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছেন অনেক বাঙালি। তাদের চোখে প্রবাসের পুজোর বিশেষ অনুভূতির প্রকাশমঞ্চ এখন ওয়ান ইন্ডিয়া।
প্রবাসী পুজো, বললেই এক অন্যরকম মনে হওয়া। দেশের বাইরে দেশের খোঁজ। কাশ ফুল, দুর্গা পুজোর গন্ধ অনেক কিছুই হয়ত নেই। কিন্তু তাও বাঙালি থাকা মানেই একটা দুর্গাপুজো থাকবেই। সূদূর কানাডাও এর বাইরে নয়।
[আরও পড়ুন:পুজোয় কলাবউ-এর ছাতার ঐতিহ্য এখনও ধরে রেখেছে জোড়াসাঁকোর দাঁ বাড়ি]
শ্রীলা মাইতি পেশাগত কারণে বহু বছর দেশের বাইরে। ওন্টারিও প্রদেশের টরান্টোয় অনেকগুলি দুর্গাপুজো হয়। গত বছর সপরিবার তিনি গিয়েছিলেন টরান্টোর কালিবাড়ির পুজোয়। তাঁর বাড়ির থেকে অনেকটা দূর হলেও পুজোর স্বাদ নিতে এটুকু কষ্ট করাই যায়। তার স্বামী ও কন্যা সন্তানকে নিয়ে পৌঁছেছিলেন সেই পুজোয়।
দেশের পুজো , দেশের পুজোই হয়। তবুও হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বহুদিন বাদে ঢাকের আওয়াজ শুনে মনটা যেন খুশিতে ভরে উঠেছিল শ্রীলার। সদ্য এক বন্ধুকে হারিয়ে ভীষণ মানসিক অবসাদে ছিলেন শ্রীলা। পুজোর সেই পরিবেশ ও ঢাকের আওয়াজ যেন সেই গ্লানিতে খানিকটা হলেও মলম দিয়েছিল।
বিদেশের বহু জায়গায় কাজের চাপ এতটাই বেশি থাকে যে সপ্তাহান্তে পুজো হয়। কিন্তু টরান্টো কালিবাড়িতে পুজো হয় পঞ্জিকা মেনে, ষোড়শপচারে। এবছরের পুজো আসার আগে গত বছরের স্মৃতি মনে করে আরও একবার পুজোর আনন্দে যেন ডুব মারলেন শ্রীলা।
পুজো মানেই মিলোনৎসব । সাধারণত এই আনন্দোৎসবের যজ্ঞে এক জায়গায় হাজির হন সব প্রবাসীরাই। তেমনিই নিজের স্কুলের এক সহপাঠী মনামী ভট্টাচার্যের সঙ্গে সেখানে দেখা হয়েছিল শ্রীলারাও। এ যেন উপরি পাওনা ছিল তাঁর কাছে। অচেনা মুখের সারির ভিড়ে চেনা মুখটা সবসময়েই মনকে নাড়া দিয়েই যায়। শ্রীলারও তাই হয়েছিল।
শ্রীলার সন্তান ছোট থেকেই বিদেশে বড় হচ্ছে, তাই তাঁর মধ্যে দেশের সংস্কৃতি. মূল্যবোধগুলি দেওয়ার এক দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করেন শ্রীলা। তিনি অভিভাবক হিসেবে তা দিচ্ছেনও। তবে কোথাও যেন পুজা-বার্ষিকীর সেই উন্মদনা আর প্রাক-পুজো আবেগের খামতি প্রবাসজীবনে থেকেই যায়।
দেশে কবে ফেরা হবে জানা নেই, তাই দেশের পুজোকে মিস করার সেই দুঃখ সরিয়ে রেখে ফি বছরই টরান্টো কালীবাড়ির দুর্গাপুজোয় নতুন আনন্দে মেতে ওঠেন শ্রীলা ও তাঁর পরিবার। আসলে জগতের আনন্দযজ্ঞে তো সবারই তো নিমন্ত্রণ। ছোট-ছোট না পাওয়া গুলো ভুলে মাতৃ-প্রতিমার সামনে নিবেদনের আনন্দ তো নিজের ভিতর থেকে আসে। সেটা তো আর টালিগঞ্জের নিজের পাড়াটা হক বা টরান্টো ,সেটা তো বদলে যায় না।