যাবতীয় সম্ভাবনা উড়িয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, দেবেন্দ্র ফড়নবীশের আত্মত্যাগের নেপথ্যে যে কারণ
যাবতীয় সম্ভাবনা উড়িয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, দেবেন্দ্র ফড়নবীশের আত্মত্যাগের নেপথ্যে যে কারণ
টানা ১০ দিন মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক সঙ্কট চলার পর বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন একনাথ শিন্ডে। উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। মহারাষ্ট্র সঙ্কটের নেপথ্যে বিজেপি যোগ স্পষ্ট হওয়ার পরেই রাজনৈতিক মহল মনে করতে শুরু করেছিল, দেবেন্দ্র ফড়নবীশ মহারাষ্ট্রের ২০ তম মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। কিন্তু যাবতীয় সম্ভাবনাকে উড়িয়ে ফড়নবীশ বৃহস্পতিবার রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে একনাথ শিন্ডের নাম উল্লেখ করেন।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুরোধে মন্ত্রিসভায় দেবেন্দ্র ফড়নবীশ
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হতে অস্বীকার করেছিলেন দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। শুধু তাই নয়, তিনি মহারাষ্ট্রের মন্ত্রিসভার অংশ হতে চাননি। কিন্তু বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তা মেনে নেয়নি। তাঁরা চেয়েছিলেন, রাজ্যের মন্ত্রিসভার সঙ্গে যেন দেবেন্দ্র ফড়নবীশ যুক্ত থাকেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার অনুরোধে তিনি উপ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বলে জানা গিয়েছে।
অপমানের গ্লানি
দেবেন্দ্র ফড়নবীশের মুখ্যমন্ত্রী না হওয়ার নেপথ্যে একাধিক কারণ হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারমধ্যে অন্যতম আড়াই বছর আগের অপমান। ২০১৯ সালের মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর ক্ষমতা বাটোয়ারা নিয়ে বিজেপির সঙ্গে শিবসেনার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। শিবসেনা দাবি করেছিল, আড়াই বছর বিজেপি ক্ষমতায় থাকবে, আড়াই বছর শিবসেনা। কিন্তু সেই দাবি বিজেপি মানেনি। এরপরেই শিবসেনা জোট থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। শিবসেনার সঙ্গে যখন এনসিপি ও কংগ্রেসের জোট যখন চূড়ান্ত পর্যায়, দেবেন্দ্র ফড়নবীশ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজ্যপালের কাছে শপথ বাক্য পাঠ করেন। এনসিপির বিধায়ক অজিত পাওয়ার উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করেন। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। এর জেরে দেবেন্দ্র ফড়নবীশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। ক্ষমতালোভী নেতা ও দল হিসেবে চিহ্নিত হন দেবেন্দ্র ফড়নবীশ ও বিজেপি। এই ভাবমূর্তি থেকে বেরিয়ে আসতেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন।
শিবসেনার আবেগ উস্কে দেন
যদিও বিজেপির কাছে ১২০ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। এবং একনাথ শিন্ডে দাবি করেছেন, তাঁর কাছে ৫০ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু তারপরেও বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর পদ শিবসেনাকে ছেড়ে দেয়। এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে শিবসেনার আবেগ উস্কে দেওয়া। জোট থেকে বেরিয়ে আসার সময় বিজেপি ও শিবসেনার মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই সম্পর্ক নতুন করে শুরু করতে বিজেপি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সামনেই মহারাষ্ট্রের পুরসভার নির্বাচন রয়েছে। সেখানে বিজেপিকে আরও শক্তিশালী করতে দেবেন্দ্র ফড়নবীশ সংগঠকের ভূমিকায় থাকতে চাইছেন। এছাড়াও শিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়কদের একত্রিত করা সহজ ছিল না। একনাথ শিন্ডের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিতেই সিদ্ধান্ত ফড়নবীশ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর পদ পাওয়ার পর ফড়নবীশের প্রতি একনাথ শিন্ডের আনুগত্য বাড়বে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিদ্রোহী বিধায়ক থেকে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক সঙ্কটের নাটকীয় যবনিকা পতন