যেসব বুথ ফেরত সমীক্ষা একেবারেই মেলেনি বিগত ১৫ বছরে, একনজরে দেখুন পরিসংখ্যান
২০১৯-এর ফাইনাল যুদ্ধ শেষ। এবার রায় বেরনোর অপেক্ষা। যদিও রায়ের আগে আভাস মিলেছে ইতিমধ্যেই সেই বুথ ফেরত সমীক্ষায় ফের মোদী ঝড়ের পূর্বাভাস মিলেছে।
২০১৯-এর ফাইনাল যুদ্ধ শেষ। এবার রায় বেরনোর অপেক্ষা। যদিও রায়ের আগে আভাস মিলেছে ইতিমধ্যেই সেই বুথ ফেরত সমীক্ষায়। ফের মোদী ঝড়ের পূর্বাভাস মিলেছে। ২০১৯-এ যে নরেন্দ্র মোদীই ফের ক্ষমতায় ফিরছেন, তা জানিয়ে দিয়েছে বেশিরভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষা। কিন্তু সেই সমীক্ষা রিপোর্ট নিয়ে বিপরীত মনোভাবও পোষণ করেছেন কেউ কেউ।
কারণ হিসেবে অনেকেই ব্যাখ্যা দিয়েছে অতীত অভিজ্ঞতার কথা। এর আগে একাধিকবার দেখা গিয়েছে, এক্সিট পোল অনেক ক্ষেত্রে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এক-আধবার নয়, অতীতে বহুবার বুথ ফেরত সমীক্ষাকে ভুল প্রমাণ করে ছেড়েছে নির্বাচনী ফল। সাম্প্রতিক অতীতের তেমনই কিছু দৃষ্টান্ত ও ফলাফল তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে।
২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচন
২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর প্রায় সমস্ত এক্সিট পোলই পূর্বাভাসে জানিয়েছিল অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসছে এনডিএ। বিজেপি ২৩০ থেকে ২৭৫ আসন পাবে বলে জানিয়েছিল সমীক্ষা রিপোর্ট। কিন্তু শেষপর্যন্ত এনডিএ থমকে যায় ১৮১-তে। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ পায় ২১৮টি আসন। বুথ ফেরত সমীক্ষাকে ভুল প্রমাণ করে বামেদের সমর্থনে সরকার গঠন করে ইউপিএ।
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এক্সিট পোল জানিয়েছিল ইউপিএ ১৮৫ থেকে ২০৫ আসন পেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় একেবারে অন্য চিত্র। ইউপিএ এক্সিট পোলের থেকে অনেক বেশি আলন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। ২০০৯-এ ইউপিএ পেয়েছিল ২৬২টি আসন। সরকার হয়েছিল মনমোহন সিংযের নেতৃত্বে।
২০১১-র অসম বিধানসভা নির্বাচন
২০১১-র অসম বিধানসভা নির্বাচন শেষে প্রায় সব এক্সিট পোল জানিয়েছিল অসমে ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না কংগ্রেস। কংগ্রেস সর্বোচ্চ ৪৬ আসন পেতে পারে বলে জানিয়েছিল বুথ ফেরত সমীক্ষা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছিল অন্য চিত্র। কংগ্রেস ৭৮টি আসন পেয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে সমর্থ হয়।
২০১২ সালের পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচন
বেশিরভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষা কংগ্রেসের জয়ের পূর্বাভাস দিলেও, ২০১২ সালের পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে ৬৮ আসন পেয়ে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি ও আকালি দলের জোট। সমীক্ষা বলেছিল, ৬০ থেকে ৬৮টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরবে কংগ্রেস। কিন্তু সেই সমীক্ষাকে উল্টে দিয়ে বিজেপি-আকালি জোট ৬৮ আসন দখল করে।
২০১২ সালের উত্তরাখণ্ড বিধানসভা নির্বাচন
২০১২ সালের উত্তরাখণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের পর এক্সিট পোল ইঙ্গিত দিয়েছিল বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে ক্লোজ ফাইট। সরকার গঠনের ব্যাপারে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে বিজেপি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় একেবারে অন্য চিত্র। ৩২টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় ফেরে কংগ্রেস।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর সমস্ত বুথ ফেরত সমীক্ষা জানিয়েছিল বিজেপি নেতৃত্ব ক্ষমতায় আসছে এনডিএ। তা-ই হয়েছিল। কিন্তু আসন নিয়ে ছিল বিস্তর ফারাক। এনডিএ ৩০০ আসন পেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিল সমীক্ষা। কিন্তু এনডিএ পায় ৩৩৪ আসন। কংগ্রেস পেতে পারে ৮০ থেকে ১০০ আসন। কিন্তু তারা পায় মাত্র ৪৪টি।
২০১৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচন
২০১৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রায় সমস্ত এক্সিট পোল পূর্বাভাস দেয় বিজেপি ক্ষমতায় ফিরছে। কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত ফল হয় নির্বাচনে। নীতীশ কুমারের জেডিইউ, লালুপ্রসাদের আরজেডি ও কংগ্রেসের জোট ১৭৮টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। বিজেপি একেবারে ধরাশায়ী হয়।
২০১৫ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন
২০১৫ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের পর বেশির ভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষা জানিয়েছিল, আম আদমি পার্টিই ক্ষমতায় আসবে, কিন্তু তাঁদের আসন থাকবে ম্যাজিক ফিগারের আশেপাশে। আপ বড়ঝোর ৩৫-৪৫টি আসন পেতে পারে বলে জানানো হয় পূর্বাভাসে। কিন্তু শেষপর্যন্ত ৬৭ আসন পেয়ে ক্ষমতা দখল করে আপ।
২০১৬ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচন
২০১৬ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনে এক্সিট পোল জানায়, ডিএমকে-কংগ্রেস জোট ক্ষমতায় ফিরছে। কিন্তু সেই আভাস উল্টে দিয়ে ক্ষমতায় ফেরেন জয়ললিতা। এআইএডিএমকে ১৩৪ আসন নিয়ে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরে।
২০১৭ সালের পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচন
২০১৭ সালের পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে বুথ ফেরত সমীক্ষা কংগ্রেসের জয়ের পূর্বাভাস দিলেও আপের বিরাট উত্থানের ভবিষ্যদ্বাণী মেলেনি। আপ ৫১ থেক ৫৭টি আসন পাবে বলে জানানো হয়েছিল সমীক্ষায়। শেষপর্যন্ত কংগ্রেস ৭৭টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফেরে। আপ পায় মাত্র ২০টি আসন।
২০১৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন
২০১৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে এক্সিট পোল জানায় তৃণমূলের ক্ষমতা হারাতে পারে। তারা ১২৫ থেকে ১৬৩টি আসন পেতে পারে। সেই পূর্বাভাসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তৃণমূল পায় ২১১টি আসন, কংগ্রেস ৪৪টি এবং বামফ্রন্ট ২৬টি আসন পায়।
২০১৮ সালের ছত্তিশগড় বিধানসভা নির্বাচন
২০১৮ সালে রাজস্থান-মধ্যপ্রদেশ-ছত্তিশগড় বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের বুথ ফেরত সমীক্ষা মিললেও, ছত্তিশগড়ের সমীক্ষায় ডাহা ফেল সমীক্ষক সংস্থাগুলি। ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস ৩৫টি ও বিজেপি ৫২টি আসন পেতে পারে জানিয়েছিল সমীক্ষা। দেখা যায় ছত্তিশগড় পুরো উল্টো ফল। কংগ্রেস ৬৩টি আসন পেয়ে ক্ষমতা লাভ করে। বিজেপি জয় লাভ করে ১৮ আসনে।
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ২৪টি আসন পেতে পারে বলে জানিয়েছিল এবিপি-সিএসডিএস এর যৌথ সমীক্ষা। এই সমীক্ষা বামফ্রন্টকে ১২টি, কংগ্রেসকে ৫টি এবং বিজেপিকে ১টি আসন দিয়েছিল। ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায় তৃণমূল ৩৪টি, কংগ্রেস ৪টি, সিপিএম ২টি এবং বিজেপি ২টি আসন পায়।
[আরও পড়ুন: উত্তরপূর্বেও গেরুয়া ঝড়! একনজরে অসমের বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল]
এক্সিট পোল মিলিয়ে দেওয়ারও নজির
তবে বুথ ফেরত সমীক্ষা ভুল প্রমাণিত হওয়ার যেমন প্রমাণ আছে ভুরিভুরি, তেমনই অনেকক্ষেত্রে এক্সিট পোল পুরোপুরি মিলিয়ে দেওয়ারও নজির রয়েছে। যেমন মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, গুজরাত ও ঝাড়খণ্ড বুথ ফেরত সমীক্ষা মিলিয়ে বিজেপি জয়ী হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের ত্রিশঙ্কু ফলও মিলিয়ে দিয়েছে সমীক্ষা। ২০১৮-তেও মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের বুথ ফেরত সমীক্ষার সঙ্গে ফলের মিল ছিল।
[আরও পড়ুন: বুথ ফেরত সমীক্ষা! ৩ গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের সম্ভাব্য ফল বিজেপির 'চাহিদা' মতোই]