হায়দরাবাদ গণধর্ষণে অভিযুক্তদের এনকাউন্টার ঘিরে উঠতে শুরু করেছে একাধিক প্রশ্ন
হায়দরাবাদ গণধর্ষণে অভিযুক্তদের এনকাউন্টার ঘিরে উঠতে শুরু করেছে একাধিক প্রশ্ন
ইতিমধ্যেই হায়দ্রাবাদ গণধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্তদের পুলিশি এনকাউন্টারের প্রশংসা করতে দেখা গেছে সমাজের বিভিন্ন মহলের মানুষদের। সূত্রের খবর শুক্রবার ভোররাতে অভিযুক্তদের নিয়ে ২৬ বছরের পশু চিকিত্সক প্রিয়াঙ্কা রেড্ডির গণধর্ষণ কাণ্ডের পুনর্নির্মাণ করছিল পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর ওই সময় অকুস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করে প্রধান চার অভিযুক্ত। তখনই তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় পুলিশ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চার জনের।
এনকাউন্টারের সত্যতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
অন্যদিকে পুলিশের এই পদক্ষেপে প্রশংসার পাশাপাশি এই ঘটনাকে ঘিরে উঠে আসছে একাধিক বিরূপ প্রতিক্রিয়াও। পুলিশের অতিসক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে। সূত্রের খবর, আইন লঙ্ঘন করে ভুয়ো এনকাউন্টার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক সমাজকর্মী ও আইনজ্ঞরা।
“আইনের চোখে কোনও অভিযুক্তের অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগে পর্যন্ত সে নির্দোষ”
মানবাধিকার কর্মী ও সমাজসেবক হর্ষ মন্দার এই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে বলেন, " এই ঘটনায় আমি খুবই দু:খিত ও হতাশ হয়ে পড়েছি। কারণ আইনের চোখে কোনও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগে পর্যন্ত সে নির্দোষ।"
এনকাউন্টারটি জন্য পুলিশের প্রশংসা করা বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা ও আইনবিদদের বক্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, "আইন রক্ষার ক্ষেত্রে দেশের আইনের ধারক ও বাহকেরা কীরকম আচরণ করে তা আমাদের চোখের সামনে পরিষ্কার। আপাতদৃষ্টিতে কোনও ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও আইন রক্ষার দাবিদার। সাধারণ মানুষ এবং আইন প্রণেতারা যদি আইন লঙ্ঘনের প্রশংসা করেন তবে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কখনওই শেষ হবে না।"
“মহিলাদের নামে ভুয়ো এনকাউন্টার বন্ধ হোক”
হর্ষ মন্দারের সুরে সুর মিলিয়ে মহিলা অধিকার কর্মী কবিতা শ্রীবাস্তব বলেন, " এই ক্ষেত্রে পুলিশ নিজেই তদন্তকারী, বিচারক এবং আইন প্রণেতার মতে আচরণ করছে।" এর আগে কর্মস্থলে যৌন হেনস্থার মোকাবিলার জন্য বিশাখা নির্দেশিকা তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় কবিতা শ্রীবাস্তবকে। এদিনের এনকাউন্টার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, " মহিলাদের নাম করে ভুয়া এনকাউন্টার বন্ধ হোক। এটা একটা পরিকল্পিত খুন। এই জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করারও প্রয়োজন রয়েছে।"
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
পুলিশ জানিয়েছে গত ২৭শে নভেম্বর হায়দরাবাদের শামশাবাদ এলাকায় পেশায় পশুচিকিত্সক ওই তরুনীকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। তারপর তার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই নক্কারজনক ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করে দোষীদের মৃত্যুদণ্ড দাবী করেছিল তেলেঙ্গানার মানুষ। তবে হঠাত ঘটে যাওয়া এনকাউন্টারে খানিকটা স্তম্ভিত সকলেই। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।
অল ইন্ডিয়া প্রগ্রেসিভ উইমেন্স অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে দিয়ে এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলে, "এই 'এনকাউন্টারটির' এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে আদতে এটিকে এনকাউন্টার বলে মনে হয়। কিন্তু এর মধ্যে পরিকল্পিত খুনের একাধিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সন্দেহভাজনরা যেহেতু পুলিশ হেফাজতে ছিল এবং নিরস্ত্র ছিল তাই এখান থেকে এটা স্পষ্ট যে পুলিশের উপর হামলা চালানোর যে অভিযোগ তা কার্যত মিথ্যে। "