রেস কোর্স রোডে নরেন্দ্র মোদীর একাকিত্ব ঘোচাবে 'রামচরিতমানস', ট্যাব-ল্যাপটপ
৭ নম্বর, রেস কোর্স রোড। রাজীব গান্ধীর সময় থেকে এটাই দেশের প্রধানমন্ত্রী সরকারি আবাস। প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু থাকতেন প্রাসাদোপম তিনমূর্তি ভবনে। লালবাহাদুর শাস্ত্রী থাকতেন জনপথের একটি ছোট্ট বাংলোয়। ইন্দিরা গান্ধী অবশ্য বেছে নিয়েছিলেন গাছগাছালিতে ঘেরা একটি বাংলো, যার ঠিকানা ছিল ১ নম্বর, সফদরজং মার্গ। এখানেই তিনি দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। মায়ের স্মৃতি তাড়া করে বেড়ানোয় সফদরজং মার্গের এই বাড়িতে থাকতে চাননি রাজীব গান্ধী। তিনি উঠে আসেন ৭ নম্বর, রেস কোর্স রোডে। তখন থেকে এটাই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি আবাস।
জওহরলাল নেহরু থেকে শুরু করে পি ভি নরসিমা রাও, সবারই পরিবার ছিল। অটলবিহারী বাজপেয়ী নিজে অবিবাহিত হলেও তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন ৭ নম্বর, রেস কোর্স রোডে তাঁর সঙ্গী ছিলেন নমিতা ভট্টাচার্য। এঁকে ছোটোবেলায় দত্তক নিয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। মেয়ের যত্নআত্তিতে থাকতেন তিনি।
কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্য রকম। তিনি বিবাহিত হলেও কৈশোরেই স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। নরেন্দ্র মোদীর ভাই, বোন, ভাইপো-ভাইঝিরা গুজরাতে থাকেন। বৃদ্ধা মা-ও গুজরাত ছেড়ে আসতে নারাজ। ফলে রেস কোর্স রোডের বাড়িতে একাই থাকতে হবে তাঁকে।
নরেন্দ্র মোদী হলেন দেশের প্রথম টেক-স্যাভি প্রধানমন্ত্রী। নিজেই টুইটার, ফেসবুক ঘাঁটাঘাটি করেন। নিজে ফেসবুকে কমেন্ট, ছবি ইত্যাদি পোস্ট করেন। এ সব ব্যাপারে তিনি এতটাই সড়গড় যে, বিজেপি-র অল্পবয়সী কর্মীদের কখনও-সখনও পাঠ দিয়েছেন। গোটা চারেক মোবাইল, আইপড আর একটি ট্যাব সর্বক্ষণের সঙ্গী। হয়তো গাড়িতে কোথাও যাচ্ছেন, ট্যাব খুলে টুক করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট দিয়ে দিলেন! আর একটি ল্যাপটপ আছে। গান শোনেন। রাজ কাপুর থেকে শুরু করে শাহরুখ খান, সবার সিনেমা দেখেন ল্যাপটপে বসে বসে। আর তুলসীদাস রচিত 'রামচরিতমানস' হল সর্বক্ষণের সঙ্গী। রেস কোর্স রোডের বাড়িতে তা সযত্নে রাখার ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। বিজেপি সূত্রে খবর, কোথাও গেলে লাল কাপড়ে মুড়ে 'রামচরিতমানস' তুলে নেন গাড়িতে। বিশ্বাস, এটি তাঁকে সব বিপদআপদ থেকে রক্ষা করবে। পরিবার না থাকলেও এ সব নিয়ে দিব্যি সময় কেটে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।
উপহার বিক্রির টাকায় গরিব শিশুদের খাবার, পোশাকের বন্দোবস্ত করতে নির্দেশ
রেস কোর্স রোডে নরেন্দ্র মোদীর খাবার বানাবেন বদ্রি। ইনি হলেন নরেন্দ্র মোদীর রাধুঁনি। ১২ বছর ধরে মনিবের জন্য খাবার বানাচ্ছেন। কখন কী খাবার কতটা খাবেন, সব জানেন বদ্রি। এঁকে গান্ধীনগর থেকে উড়িয়ে এনেছেন নরেন্দ্র মোদী। মনিবের দু'টি প্রিয় খাবার, ধোকলা ও খাকড়া বানাতে সিদ্ধহস্ত এই ব্যক্তি। তাঁকে রান্নার কাজে সহায়তা করবেন আইটিডিসি (ইন্ডিয়ান ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন)-র রাঁধুনিরা।
অটলবিহারী বাজপেয়ী কিংবা মনমোহন সিংয়ের মতো আমিষ খান না নরেন্দ্র মোদী। কঠোরভাবে তিনি নিরামিষভোজী। ফাপড়া, খাণ্ডবি (দু'টিই গুজরাতি খাবার), বাজরার রুটি, ডাল ইত্যাদিই হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পছন্দের খাবার। আচার খেতেও ভালোবাসেন তিনি।
গুজরাত থেকে নিজের বিশ্বাসভাজন দুই অফিসার দীনেশ সিং এবং ও পি ঠাকুরকে দিল্লি নিয়ে এসেছেন তিনি। আইএএস অফিসার কৈলাসনাথনকেও আনা হয়েছে। ইনি গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রধান সচিব ছিলেন। এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রধান সচিব হিসাবে কাজ করবেন।
রেস কোর্স রোডের কর্মীরা নতুন প্রধানমন্ত্রীর হাবভাব দেখে অবাক। এর আগে যাঁরা এখানে এসেছেন, তাঁরা প্রচুর জিনিসপত্তর নিয়ে এসেছেন। অথচ নরেন্দ্র মোদী সঙ্গে এনেছেন কিছু বইপত্র, জামাকাপড় এবং মোবাইল, ট্যাব, আইপড ইত্যাদি। বড় বড় গোটা চারেক বাক্স ছাড়া আর কিছু নেই! এতদিন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন যে উপহার পেয়েছেন, সেইগুলি বিক্রি করে দিয়েছেন। টাকা দিয়েছেন গুজরাত সরকারকে। ওই টাকায় গরিব শিশুদের খাবার, জামাকাপড়, ওষুধ কিনে দেবে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: গরিব পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষায় জমানো টাকা খরচ করবেন নরেন্দ্র মোদী