বালাকোট হামলার একবছর পূর্তি, কি হয়েছিল ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে?
বালাকোট হামলার একবছর পূর্তি, কি হয়েছিল ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে?
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। এদিনই পুলওয়ামা হামলার বদলা নিতে ভারতীয় বায়ুসেনা বালাকোটে আক্রমণ চালিয়েছিল। বায়ুসেনার উদ্দেশ্যেই ছিল পাকিস্তানের খাইবার–পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বালাকোট গ্রামে জঙ্গিদের ঘাঁটি ধ্বংস করা। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথমবার ভারতীয় সশস্ত্র সেনা আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করে এ ধরনের হামলা করে। সেই বালাকোট হামলার একবছর পূর্তি হল।
গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সমর্থিত জৈশ–ই–মহম্মদ জম্মু–কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে আত্মঘাতী হামলা চালায় সিআরপিএফ কনভয়ের ওপর। এই ঘটনায় নিহত হয় ৪০ জন জওয়ান। যাঁরা এই হামলার বিষয়ে কিছুই জানতেন না। এই ঘটনার জেরে পরমাণু–সশস্ত্র দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে প্রায় যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল।
পুলওয়ামায় হামলা
সুরক্ষা বাহিনীর ওপর এ ধরনের হামলা এর আগে কোনওদিন হয়নি। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে সিআরপিএফের কনভয়ের ওপর আত্মঘাতী গাড়ি-বোমা হালা চালায়। এই হামলায় নিহত হন ৪০ জন জওয়ান। ৭৮টি গাড়িতে ২,৫৪৭ জন সিআরপিএফ জওয়ান ছিল তখন, যখন এই হামলা হয়। জানা গিয়েছে যে, জওয়ানরা ছুটি কাটিয়ে নিজের নিজের এলাকায় কর্তব্য করতে ফিরছিলেন। আত্মঘাতী বিস্ফোরক ভর্তি গাড়িটি সোজা এসে সিআরপিএফ কনভয়ে ধাক্কা মারে। এই ঘটনার পরই জানা যায় যে হামলার জন্য ৮০ কেজি বিস্ফোরণ ব্যবহার করা হয়েছিল।
পুলওয়ামা হামলার পর
পুলওয়ামা হামলার পর পরমাণু-সশস্ত্র দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে অশান্তি চরমে ওঠে। পাকিস্তানের শীর্ষ কূটনৈতিককে ভারতের পক্ষ থেকে সমন পাঠিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। দেশজুড়েই এই হামলার জন্য প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিভিন্ন দেশ, এমনকি পাকিস্তানের সদা বন্ধু চিনও এই হামলার তীব্র নিন্দা করে। দেশের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন যে ‘সুরক্ষা বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলাম, তাঁরা নিজেরা সময়, জায়গা ও কিভাবে পুলওয়ামা হামলার প্রতিশোধ নেবে তা ঠিক করুক। সব চোখের জলের বদলা নেওয়া হবে। শত্রুকে ছাড়া যাবে না। যে আগুন আপনাদের মধ্যে জ্বলছে একই আগুন আমার মনের মধ্যেও জ্বলছে।'
বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক ২০১৯
২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি, পুলওয়ামা হামলার ১২দিন পর, ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান বালাকোটে জৈশ-ই-মহম্মদের জঙ্গি ঘাঁটি বোম মেরে উড়িয়ে দেওয়ার দাবি করে। বায়ুসেনার পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে যে বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান বিভিন্ন এয়ারবেস থেকে ২৬ জানুয়ারি মধ্যরাতে জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে জৈশের ঘাঁটি উড়িয়ে দেয় স্পাইস ২০০০ গাইডেড মিশাইল দিয়ে। বালাকোট সংলগ্ন বিসিয়ানের পশ্চিমদিকে ভারতীয় মিশাইল পাঁচটি কাঠামোকে উড়িয়ে দেয়।
ভারতের বিদেশ সচিব এই হামলার পর সাংবাদিকদের সামনে বলেন, ‘২৬ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে ভারত বালাকোটে ঢুকে জৈশের বড় ঘাঁটি উড়িয়ে দিয়েছে। এই অপরেশনে বেশ কিছুজন জৈশ জঙ্গি, প্রশিক্ষক, শীর্ষ কম্যান্ডার এবং জিহাদিদের দল, যারা ফিঁদায়েদের প্রশিক্ষণ দিত নিহত হয়েছে।' বালাকোটে জৈশের এই ঘাঁটির প্রধান ছিল মৌলানা ইউসুফ আজহার (ওরফে উস্তাদ গহরি), যে জৈশ প্রধান মাসুদ আজহারের শ্যালক ছিল বলে জানা গিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিশোধ
সীমান্তে ঢুকে জম্মু-কাশ্মীরের সেনা শিবিরে হামলা চালায়। পাক যুদ্ধবিমানের নিশানায় ছিল ভারতীয় সেনার কৃষ্ণ ঘাঁটি ও নাঙ্গি টেকরি ও কার্তুজের কেন্দ্রস্থল নারিয়ান। কিন্তু এই হামলা ব্যর্থ হয় কারণ ভারতীয় বায়ু সেনা সজাগ হয়ে যায়। আকাশ পথেই পাক যুদ্ধবিমানকে ধাওয়া করে ভারতীয় বায়ুসেনার মিগ-২১ বিসন, যার নেতৃত্বে ছিলেন উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্ধমান। পাকিস্তান এফ-১৬কে গুলি করে নীচে নামিয়ে আনলেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে গুলি চালানো হয় মিগ-২১ বিসনের দিকে।
আইএএফ স্কোয়ার্ডন লিডার মিন্টি আগরওয়াল সেইসময় অভিনন্দনকে নির্দেশ দিয়েছিল যে ফিরে আসার জন্য। কিন্তু অভিনন্দন সেই নির্দেশ শুনতে পাইনি কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা সেই সময় জ্যাম হয়ে গিয়েছিল। উইং কম্যান্ডার অভিনন্দনের বিমান ততক্ষণে পাক আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছে। পাক সেনারা গুলি করে ভারতীয় বিমানকে নামিয়ে আনে। পাক বিমান এফ-১৬ ও ভারতীয় যুদ্ধবিমান মিগ-২১ দু'টোই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পড়ে যায়। পাক সেনারা বন্দী করে নেয় অভিনন্দন বর্ধমানকে। যদিও পাক সেনারা দাবি করে তাঁরা দু'জন ভারতীয় সেনাকে বন্দী করেছে। ৬০ ঘণ্টা পাকিস্তানে বন্দীদশা কাটানোর পর ইসলামাবাদ শান্তি বজায় রাখার জন্য উইং কম্যান্ডার অভিনন্দনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
'জঙ্গি দমনে সীমান্ত পার করতে পিছপা হবে না সেনা', বালাকোট অভিযানের বর্ষপূর্তিতে বড় ঘোষণা