হাসপাতালে নেই অ্যাম্বুলেন্স, হরিয়ানায় কোভিড দেহ শ্মশানে পৌঁছালো অটোতে করে
হরিয়ানায় কোভিড দেহ শ্মশানে পৌঁছালো অটোতে করে
দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভের মহামারি একরকমভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে রেখে দিয়েছে। সেরকমই এক দৃশ্য ধরা পড়ল হরিয়ানাতে। হরিয়ানার গুরুগ্রামে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা না পেয়ে কোভিডে মৃত প্রিয়জনের দেহ পরিবার শ্মশানে নিয়ে গেল অটো ও ব্যক্তিগত গাড়িতে করে।
কোভিডে মৃত প্রিয়জনের আর্তি
৬৩ বছরের নন্দা দেবী, যিনি এই মারণ ভাইরাসে কারণে তাঁর মেয়েকে হারিয়েছেন, মৃত মেয়েকে গুরুগ্রামের রাম বাগ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য অটো ভাড়া করেন। নন্দা দেবী বলেন, 'আমি আশা করব কোনও মা যেন এর মধ্য দিয়ে না যায়। আমি সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছি, এখন শুধু আমি আমার জীবন শেষ করে দিতে চাই। আমার শ্বাস নেওয়ার মতো ক্ষমতাও নেই।' অক্সিজেনের অভাবে মৃত কোভির রোগীর পুত্র চরণ সিং, তাঁর বাবার দেহ শ্মশানে নিয়ে যান গাড়িতে করে। চরণ সিং বলেন, 'আমার বাবা সেনা বাহিনীতে ছিলেন এবং তিনি তাঁর গোটা জীবন দেশের সেবার জন্য আমাদের থেকে দূরে থেকেছেন। আর আজকে তিনি না অক্সিজেন পেলেন আর মৃত্যুর পর না পেলেন অ্যাম্বুলেন্স। মন্ত্রীদের লজ্জায় ফাঁসিতে ঝোলা উচিত তাঁদের কারণেই আজ আমাদের এই কঠিন সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এই সরকারের ওপর আর কোনও আস্থা নেই। আমি কখনই ভুলব না যে আমি আমার বাবার দেহ বহন করার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সও পাইনি।'
মৃতরা অগ্রাধিকার নয়
কোভিড-১৯ তীব্র সংক্রমণের কারণে হাসপাতালগুলি করোনায় মৃত দেহগুলিকে নিয়ে শ্মশানে চলে গিয়েছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয়, 'আমরা কিছু অ্যাম্বুলেন্সকে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য আলাদা করে রেখেছিলাম। কিন্তু সংক্রমণ বাড়ায় সব অ্যাম্বুলেন্সকে কোভিড রোগীদের কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। আমাদের কাছে সীমিত সংখ্যায় অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে এবং এই সঙ্কটময় সময়ে আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার রোগীদের বাঁচানো। যাঁরা মারা যাচ্ছেন তাঁদের নাম অগ্রাধিকার তালিকায় নেই।'
শ্মশানে দিনরাত পুড়ছে কোভিড দেহ
রাম বাগ শ্মশানের কর্মীরা বলেন, 'পপিকল্পনা ও পরিচালনার অভাবে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। পরিস্থিতি আরো খারপ হতে চলেছে।' তাঁরা বলেন, 'গতরাতে আমাদের কোভিড ও কোভিড নয় উভয় দেহই একসঙ্গে দাহ করতে হয়েছে। শ্মশানের পার্কিংয়ের জায়গাতেও চিতা সাজানো হয়। আমাদের যতটা সাধ্য তার অধিক করছি, এখানে আসা পরিবারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও।
হরিয়ানার পরিস্থিতি
সোমবার হরিয়ানাতে একদিনে ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও একদিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১১,৫০৪ জন এবং মোট সংক্রমণের সংখ্যা ৪,৩৫,৮২৩। গুরুগ্রামে সোমবার একদিনে নতুন করে আক্রান্ত হন ৩,৫৫৫ জন এবং গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। হরিয়ানার স্বাস্থ্য মন্ত্রী অনিল ভিজ সোমবারই দানান যে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি দেখার পর সব জেলায় ২০টি করে গাড়ি পাঠানো হয়েছে, যাতে সেগুলি অ্যাম্বুলেন্সের কাজ করতে পারে।