বরফে ঢাকা লাদাখে বাড়ছে উত্তাপের আশঙ্কা, আগেভাগে সংসদকে সতর্ক করে দিল সেনা
লাদাখের উত্তেজনা শীতকালেও জারি থাকবে বলে আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিল ভারতীয় সেনা। এবার সেই পরিস্থিতির জন্য সেনা তৈরি বলে উচ্চ পর্যায়ের এক সাংসদীয় প্যানেলকে জানিয়ে দিল সেনা। যদিও শান্তি প্রক্রিয়া মসৃণ ভাবে চলবে বলে আশা ব্যক্ত করেন সিডিএস বিপিন রাওয়াত। তবে প্যানেলের সামনে এই বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি জানান যে চিন ভারতের মধ্য়ে এই উত্তেজনা কমতে আরও অনেক সময় লাগবে। তবে শীতকালে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে পড়লে তার জন্য তৈরি আছে ভারতীয় সেনা।
মে থেকেই উত্তপ্ত প্যাংগং ও গালওয়ান
মে মাসের শুরু থেকে এই প্যাংগং লেক ও গালওয়ান উপত্যকায় চিনের সঙ্গে ভারতের সংঘাতের পরিস্থতি তৈরি হয়। দুই দেশই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় তাদের সেনার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। যার জেরে এই এলাকায় যাযাবরদের গতিবিধি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় থাকা সাতটা গ্রাম বাফার জোনে পরিণত হয়। লাদাখ অঞ্চলে ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত চিহ্নিত করা কোনও রেখা নেই, যে কারণে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর থাকা মানুষগুলো বিপন্ন হচ্ছে, যাদের জীবিকার একমাত্র উৎস ওই চারণভূমি, তা চিনের সেনা দখলের চেষ্টা করছে।
সীমান্ত থেকে সরেও সরছে না চিনা বাহিনী
পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা থেকে দুই কিলোমিটার পিছনে সরে গেছে চিনের সেনাবাহিনী৷ ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, কোর কমান্ডার স্তরে বৈঠকের পর তাঁবু, গাড়ি এবং বাহিনী সরিয়ে নিয়েছে চিন। তবে গালওয়ান নদীর পার্শ্ববর্তী দুর্গম এলাকায় এখনও অস্ত্রবাহী গাড়ি মোতায়েন রেখেছে চিন। ভারতীয় সেনা সেদিকে নজর রেখেছে। এছাড়া আকসাই চিনে পিএলএ-র ৫০ হাজার সেনা এখনও মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
লাদাখ ইস্যুতে বিরোধ দীর্ঘস্থায়ী হবে
চিনের সঙ্গে যতই আলোচনা চলুক, বিরোধ এখনও চলবে বলে মনে করছে কেউ কেউ৷ কারণ, সীমান্তে নদীর জলের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে গেছে৷ তাপমাত্রা যত বদলাবে ততই ধীরে ধীরে বরফে পরিণত হবে নদীগর্ভ৷ কয়েকমাসের মধ্যে গোটা এলাকা তুষারে ঢেকে যাবে৷ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে লাদাখ৷ এরই মাঝে গালওয়ান থেকে ১৭৬ কিলোমিটার উত্তরে জিনজিয়াং প্রদেশে চিন তাদের এক পুরোনো হেলিবেসকে নতুন করে তৈরি করছে বলে দেখা যায় স্যাটেলাইট চিত্রে।
চিন গালওয়ান উপত্যকায় শীতকালীন তাঁবু খাটিয়েছে
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে চিনের তরফে যে পদক্ষপে করা হচ্ছে, তা রীতিমতো বাড়াবাড়ি। এই পরিস্থিতি ফের সংঘর্ষ হওয়া সময়ের অপেক্ষা বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই আবহেই চিন গালওয়ান উপত্যকায় শীতকালীন তাঁবু গেড়েছে। যার দেখাদেখি ভারতও সেনার জন্য শীতকালীন পোশাকের অর্ডার দিয়েছে। সড়ক পথে কাশ্মীর থেকে লাদাখে একাধিক পাসের পথের দিকে তাকিয়ে সেনা। সবমিলিয়ে শীতকালে চিন ভারত সংঘাত আরও বড় আকার নিতে পারে ভেবেই ঘর গোছাচ্ছে ভারতীয় সেনা।
চিনা আক্রমণের জবাব দিতে তৈরি হচ্ছে ভারত
এরই মাঝে শীতকালেও লাদাখে চিনা সেনার আক্রমণের জবাব দিতে তৈরি হচ্ছে ভারত। শীতকালের খারাপ আবহাওয়ার সুযোগে চিন ফের আগ্রাসন দেখাতে পারে, এমন আশঙ্কায় তৈরি রাখা হচ্ছে অস্ত্র ভাণ্ডারও। চিনকে রুখতে লাদাখে ৪০ হাজার ট্রুপ মোতায়েন করেছে ভারত। আকসাই চিন থেকে ডিবিওতে ঢোকার রাস্তা, কারাকোরাম পাসে মোতায়েন করা হয়েছে ১২টি ভীষ্ম ট্যাঙ্কের স্কোয়াড্রন।
শীতকালীন সংঘাত নিয়ে ঘুঁটি সাজাচ্ছে ভারত
শীতকালে বরফের জেরে একাধিক রাস্তায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। আর তার ফলেই লাদাখ সীমান্ত পর্যন্ত রেশন নাও যেতে পারে। এমন ভাবনার জেরে ইতিমধ্যেই সেনার জন্য ৬০ হাজার মেট্রিক টন রেশন উপত্যকায় তুলে নেওয়া হয়েছে। শীতকালে যে রাস্তা দিয়ে চিনে ফের পদাতিক বাহিনী পাঠাতে পারে, লাদাখের সেই সমস্ত সেক্টরে ভারত সেনা মোতায়েন করতে শুরু করে দিয়েছে। সেই সময় তুষারপাতের জেরে বহু জায়গাতেই সংঘাতের ঘরানা পাল্টাতে পারে। আর তাই নিয়েই ঘুঁটি সাজাচ্ছে ভারত।
সনিয়া গান্ধীকে দলের দায়িত্বে ফিরতে দেখে মর্মাহত শশী থারুর! কী চলছে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে?