সাহিত্য অনুরাগী আইনের ছাত্রী থেকে তুখোড় রাজনীতিক, সুষমা স্বরাজের জীবনী একনজরে
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬৭ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী তথা বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেত্রী সুষমা স্বরাজ।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬৭ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী তথা বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেত্রী সুষমা স্বরাজ। মঙ্গলবার দিল্লির এইমস হাসপাতালে সুষমা স্বরাজকে ভর্তি করা হয়। এরপরে মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ভারতীয় জনতা পার্টির অন্যতম শীর্ষ নেত্রী ছিলেন তিনি। দলের মধ্যে যে ক'জন নেতা-নেত্রী সর্বজনগ্রাহ্য হয়ে উঠতে পেরেছিলেন সুষমা ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। দল-মত নির্বিশেষে তাঁকে সকলে শ্রদ্ধা করতেন, ভালোবাসতেন। এবারের লোকসভা নির্বাচনে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ভোটে লড়েননি। তবে সেজন্য দলের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বিন্দুমাত্র কমেনি। একনজরে দেখে নেওয়া যাক তাঁর জীবনের নানা মুহূর্তের কথা।
দিল্লির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী
সুষমা স্বরাজ খুব কম বয়সে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৫ তম লোকসভায় তিনি লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ এবং ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল - দুবার তিনি হরিয়ানা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে দিল্লির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। গত কয়েক দশকে ভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
সর্বকনিষ্ঠ সাংসদ হন
১৯৭৭ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ সংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন সুষমা স্বরাজ। ১৯৯৬ সালে ১৩ দিনের বাজপেয়ী সরকারের সময় লোকসভার বিতর্ক তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হিসেবে লাইভ টেলিকাস্ট করেছিলেন।
১৯৫২ সালে জন্ম
১৯৫২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আম্বালা ক্যান্টনমেন্টে তাঁর জন্ম হয়। পিতা ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের একজন অন্যতম সদস্য। মায়ের নাম ছিল লক্ষ্মী দেবী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক পাস করার পর সুষমা পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি করেন।
সাহিত্য অনুরাগী সুষমা
১৯৭০ সালে আম্বালা ক্যান্টনমেন্টের এসডি কলেজ থেকে তিনি সেরা ছাত্রীর পুরস্কার পান। রাজনীতির পাশাপাশি সঙ্গীত এবং বিভিন্ন শিল্পকলার প্রতি সুষমার গভীর অনুরাগ ছিল। সাহিত্যের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা ছিল। কলেজে থাকাকালীন তিনি পরপর তিনবার সেরা হিন্দি বক্তার পুরস্কার জেতেন। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীনও তিনি সেরা হিন্দি বক্তার পুরষ্কার জিতেছিলেন।
রাজনীতিতে প্রবেশ
১৯৭৫ সালে সুষমা স্বরাজের বিয়ে হয় আইনজীবী স্বরাজ কৌশলের সঙ্গে। ১৯৯০ সালে স্বরাজ কৌশল দেশের সর্বকনিষ্ঠ রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি ছিলেন মিজোরামের রাজ্যপাল। ১৯৭৩ সাল থেকে সুষমা স্বরাজ সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন। তার আগে ১৯৭০ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
একের পরর এক কৃতিত্ব
ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে অনেক পথসভা করেন সুষমা। তিনি ভারতীয় জনতা পার্টিতে প্রবেশের পর জরুরি অবস্থার সময় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি এভাবেই ধীরে ধীরে রাজনীতিতে হাত পাকান। মাত্র ২৭ বছর বয়সে হরিয়ানার জনতা পার্টির রাজ্য সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন সুষমা। ১৯৭৭ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে দেশের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে হরিয়ানা জনতা পার্টির সভানেত্রী নির্বাচিত হন। কোনও একটি জাতীয় দলের প্রথম মহিলা মুখপাত্র হিসেবে সুষমা স্বরাজই প্রথম দায়িত্বভার সামলে ছিলেন। দিল্লির প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কৃতিত্বও তাঁর দখলে।
বিদেশমন্ত্রী হিসাবে সফল
লোকসভায় বিরোধী দলের প্রথম মহিলা দলনেত্রীও নির্বাচিত হন সুষমা স্বরাজ। ২০১৪ সালের ২৬ মে কেন্দ্রের বিদেশমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার সামলান। এর পরে টানা ৫ বছর তিনি বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি তিনি। মাঝখানে একবার কিডনির অসুখ হয়েছিল। এর পরে মঙ্গলবার রাতে আচমকা হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬৭ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।