বিয়ের জন্য জমানো অর্থ দিয়েই পরিযায়ী শ্রমিক–দরিদ্রদের খাবারের যোগান দিচ্ছেন এই অটো চালক
বিয়ের জন্য জমানো অর্থ দিয়েই পরিযায়ী শ্রমিক–দরিদ্রদের খাবারের যোগান দিচ্ছেন এই অটো চালক
এই সঙ্কটের সময়ও মানবিকতার নজির সৃষ্টি করলেন পুনের এক অটো চালক। যিনি নিজের বিয়ের জন্য একটু একটু করে জমিয়ে ছিলেন ২ লক্ষ টাকা। কিন্তু লকডাউনের জন্য তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠান পিছিয়ে যায়। তাই তিনি সেই অর্থ খরচ করলেন পরিযায়ী শ্রমিক ও পুনেতে আটকে রয়েছেন এমন মানুষের মুখে অন্ন তুলে।
বিয়ের অর্থ দিয়েই ৪০০ মানুষের মুখে অন্ন জোগাচ্ছেন অটো চালক
অক্ষয় কোঠাওয়ালে এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি বয়স্ক ব্যক্তি ও গর্ভবতী মহিলাদের বিনামূল্যে তাঁর অটোতে বসিয়ে ক্লিনিকে ছেড়ে দিয়ে আসছেন এবং গোটা শহর ঘুরে করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকার সচেতনতা প্রচার করছেন। বন্ধুদের সহায়তায় কোঠাওয়ালে তাঁর জমানো বিয়ের টাকা দিয়ে প্রতিদিন ৪০০ মানুষের খাবার তৈরি করছেন। এরপর তাঁরা ওই খাবার নিয়ে শহরের রাস্তায় ওই খাবার পরিযায়ী শ্রমিক ও দুঃস্থদের মধ্যে পরিবেশন করছেন।
বিয়ে পিছিয়ে দেওয়া হয় লকডাউনের কারণে
কোঠাওয়ালে, যিনি খুবই নম্র পরিবার থেকে এসেছেন জানান, এই সঙ্কটের সময় অন্যদের সাহায্য করতে পেরে তিনি খুবই খুশি। অটো চালক বলেন, ‘অটো চালক হিসাবে কাজ করার সময় আমি আমার বিয়ের জন্য ২ লক্ষ টাকা জমিয়ে ছিলাম, যেটি ২৫ মার্চ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লকডাউন বেড়ে যাওয়ার ফলে আমরা ভাবলাম যে এই অনুষ্ঠান এই সময় করা ঠিক হবে না। তাই আমার বাগদত্তা ও আমি বিয়ে পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।' লকডাউনের সময় কোঠাওয়ালে বহু দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের যন্ত্রণা অনুভব করেন। যাঁদের কাছে কাজ নেই তো উপার্জনও নেই এই কঠিনতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি বহু মানুষকে রাস্তায় দেখেছি যাঁরা একবেলার খাবারও জোগাড় করতে পারছেন না এবং বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছেন। আমি এবং আমার কিছু বন্ধু এইসব দিনমজুরদের জন্য কিছু সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিই।' তিনি আরও বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিই আমি আমার জমানো অর্থ এইসব গরীবদের জন্য ব্যবহার করব এবং আমার কিছু বন্ধুও আমায় এ বিষয়ে সাহায্য করে।'
রুটি–সবজি বিতরণ পরিযায়ী ও অভাবগ্রস্তদের মধ্যে
মহারাষ্ট্রের তিম্বার মার্কেট এলাকার বাসিন্দা কোঠাওয়ালে এরপর রান্নাঘর বানিয়ে সেখানে রুটি ও সবজি তৈরি করতে লাগলেন এবং পরিযায়ী শ্রমিক ও দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতে শুরু করলেন। ‘আমার অটোতে করে একবেলার খাবার স্টেশন সংলগ্ন মালধাক্কা চউক, সংগামওয়াড়ি ও ইয়ারাওয়াডা এলাকায় বিতরণ করি।' তিনি জানিয়েছেন, টাকা খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে তাই কোঠওয়ালা ও তাঁর বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নেন যে রুটি-সবজির বদলে পোলাও, মশলা ভাত বা সাম্বার ভাত বিতরণ করবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিযায়ী শ্রমিক ও অভাবগ্রস্ত মানুষদের মধ্যে খাবার বিতরণ করে যাব।'
মাস্ক ও স্যানিটাইজারও বিলি করছেন তাঁরা
কোঠওয়ালা ও তাঁর বন্ধুরা ৩১ মে পর্যন্ত তাঁদের জমানো অর্থ দিয়ে অনবরত খাবার খাইয়ে যাবেন পরিযায়ী শ্রমিক ও গরীবদের। করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতা প্রচার করতে কোঠওয়ালে তাঁর অটোর সামনে লাউডস্পিকার লাগিয়েছেন যাতে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারেন এবং কিভাবে এর থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়। এই দলটি মাস্ক এবং স্যানিটাইজারও বিতরণ করছেন রাস্তার ধারে থাকা ফুটপাতবাসীদের মধ্যে।
প্রতীকী ছবি
করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে এবার সাফল্য়ের বার্তা মার্কিন মুলুক থেকে! লক্ষ্যের কত কাছে আমেরিকা