শিকাগোর মহাসভায় সেই স্মরণীয় ভাষণে কোন বার্তা দিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ! দেখে নিন তাঁর বাণী
১৮৯৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় বক্তব্য রাখেন মহা মনীষী স্বামী বিবেকানন্দর। সেই বক্তৃতার ১২৫ বছর পূর্তী আজ। বিবেকানন্দের সবচেয়ে স্মরণীয় বক্তৃতা এটিই।
১৮৯৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় বক্তব্য রাখেন মহা মনীষী স্বামী বিবেকানন্দর। সেই বক্তৃতার ১২৫ বছর পূর্তী আজ। বিবেকানন্দের সবচেয়ে স্মরণীয় বক্তৃতা এটিই। যার মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে হিন্দু ধর্মকে তিনি নতুন সম্মানে প্রতিষ্ঠা করেন।
স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কিত কিছু তথ্য
১৮৬২ সালের১২ জানুয়ারী কলকাতা উচ্চবিত্ত পিরবারে জন্মগ্রহণ করেন স্বামীবিবেকানন্দ। স্বামীজি হিসাবে পরিচিতি পাওয়ার আগে তিনি নরেন্দ্র নাথ দত্ত হিসাবে পরিচিত ছিলেন। খেলাধূলা, শরীরচর্চা তথা আধ্যাত্ম সমস্ত দিকই স্বামীজি ছোটবেলা থেকেই আগ্রহী ছিলেন। মেধাতেও তিনি কারোর থেকে খাটো ছিলেন না।
স্বামীজির ভাষণ
জীবনের বহুবিধ বাধাপ পথ পেরিয়ে স্বামীজি আসেন রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের সান্নিধ্যে। সেখান থেকেই তিনি আত্মাধ্য বিষয়ে আরও বেশি উৎসাবহী হয়ে ওঠেন। মেধাবী নরেন্দ্র নাথ হয়ে ওঠেন বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ। আর সেই ধর্মের পথেই তিনি হিন্দু ধর্ম প্রচারে যোগ দেন শিকাগোর হিন্দু মহা সভায়। সেই দিনটি ছিল ১৮৯৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ।
শিকাগোতে স্বামীজির বাণী
হে আমেরিকাবাসী ভগিনী ও ভ্রাতৃবৃন্দ, আজ আপনারা আমাদের যে আন্তরিক ও সাদর অভ্যর্থনা করেছেন, তার উত্তর দেওয়ার জন্য উঠতে গিয়া আমার হৃদয় অনিবর্চনীয় আনন্দে পরিপূর্ণ হয়েছে।
পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন সন্ন্যাসী-সমাজের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সর্বধর্মের যিনি প্রসূতি-স্বরূপ,তাঁর নামে আমি আপনাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। সকল জাতি ও সম্প্রদায়ের অন্তর্গত কোটি কোটি হিন্দু নরনারীর তরফে আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।
[আরও পড়ুন:স্বামী বিবেকানন্দ-এর এমন কিছু বাণী, যা পড়লে আজও মানসিক শক্তি টগবগিয়ে দৌড়য়]
এরপর তিনি বলেন...
এই
সভামঞ্চে
সেই
কয়েকজন
বক্তাকেও
আমি
ধন্যবাদ
জানাই,
যাঁরা
প্রাচ্যদেশীয়
প্রতিনিধিদের
সম্বন্ধে
এরূপ
মন্তব্য
প্রকাশ
করলেন
যে,
অতি
দূরদেশবাসী
জাতিসমূহের
মধ্য
থেকে
যাঁরা
এখানে
এসেছেন,
তাঁরাও
বিভিন্ন
দেশে
পরধর্মসহিষ্ণুতার
ভাব
প্রচারের
গৌরব
দাবি
করতে
পারেন।
যে
ধর্ম
জগৎকে
চিরকাল
পরমতসহিষ্ণুতা
ও
সর্বাধিক
মত
স্বীকার
করার
শিক্ষা
দিয়া
আসছে,
আমি
সেই
ধর্মভুক্ত
বলে
নিজেকে
গৌরবান্বিত
মনে
করি
।
আমরা
শুধু
সকল
ধর্মকেই
সহ্য
করিনা,
সকল
ধর্মকেই
আমরা
সত্য
বলে
বিশ্বাস
করি
।
যে
ধর্মের
পবিত্র
সংস্কৃত
ভষায়
ইংরেজী
'এক্সক্লুশন'
(ভবার্থঃ
বহিষ্হকরণ,
পরিবর্জন)
শব্দটি
অনুবাদ
করা
যায়
না,
অমি
সেই
ধর্মভুক্ত
বলে
গর্ব
অনুভব
করি
।
যে
জাতি
পৃথিবীর
সকল
ধর্মের
ও
সকল
জাতির
নিপীড়িত
ও
আশ্রয়প্রার্থী
জনগণকে
চিরকাল
আশ্রয়
দিয়ে
আসছে,
আমি
সেই
জাতির
অর্ন্তভুক্ত
বলে
নিজেকে
গর্বিত
মনে
করি
।
বক্তব্যে স্বামীজি জানান...
কোটি
কোটি
নরনারী
যে-স্তোত্রটি
প্রতিদিন
পাঠ
করেন,
যে
স্তবটি
আমি
শৈশব
থেকে
আবৃত্তি
করে
আসছি,
তাঁরই
কয়েকটি
পঙক্তি
উদ্ধৃত
করে
আমি
আপনাদের
বলছি
-বিভিন্ন
নদীর
উৎস
বিভিন্ন
স্থানে,
কিন্তু
তারা
সকলে
যেমন
এক
সমুদ্রে
তাদের
জলরাশি
ঢেলে
মিলিয়ে
দেয়,
তেমনি
হে
ভগবান্,
নিজ
নিজ
রুচির
বৈচিত্র্যবশতঃ
সরল
ও
কুটিল
নানা
পথে
যারা
চলছে,
তুমিই
তাঁদের
সকলের
একমাত্র
লক্ষ্য।
পৃথিবীতে
এযাবৎ
অনুষ্ঠিত
সন্মেলনগুলির
মধ্যে
অন্যতম
শ্রেষ্ঠ
মহাসন্মেলন
এই
ধর্ম-মহাসভা
গীতা-প্রচারিত
সেই
অপূর্ব
মতেরেই
সত্যতা
প্রতিপন্ন
করছি,
সেই
বাণীই
ঘোষণা
করছি
-যে
যে-ভাব
আশ্রয়
করে
আসুক
না
কেন,
আমি
তাহাকে
সেই
ভাবেই
অনুগ্রহ
করিয়া
থাকি।
হে
মনুষ্যগণ
সর্বতোভাবে
আমার
পথেই
চলিয়া
থাকে।
উপসংহারে যা বলেন তিনি..
সাম্পদায়িকতা, গোঁড়ামি ও এগুলির ভয়াবহ ফলস্বরূপ ধর্মোন্মত্ততা এই সুন্দর পৃথিবীকে বহুকাল অধিকার করে রেখেছে । এরা পৃথিবীকে হিংসায় পূর্ণ করেছে, বরাবার একে নরশোণিতে সিক্ত করিয়াছে, সভ্যতা ধ্বংস করেছে এবং সমগ্র জাতিকে হতাশায় মগ্ন করেছে। এই-সকল ভীষণ পিশাচগুলি যদি না থাকত, তাহা হইলে মানবসমাজ আজ পূর্বাপেক্ষা অনেক উন্নত হত। তবে ইহাদের মৃত্যুকাল উপস্থিত; এবং আমি সর্বতোভাবে আশা করি, এই ধর্ম-মহাসমিতির সন্মানার্থ আজ যে ঘন্টাধ্বনি নিনাদিত হয়েছে, তাইই সর্ববিধ ধর্মোন্মত্ততা, তরবারি অথবা লিখনীমুখে অনুষ্ঠিত সর্বপ্রকার নির্যাতন এবং একই লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর ব্যক্তিগণের মধ্যে সর্ববিধ অসদ্ভাবের সম্পূর্ণ অবসানের বার্তা ঘোষণা করুক ।
ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে সংগৃহীত