ভারতীয় সিনেমা ১৪ বার গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছে
ভারতীয় সিনেমা ও গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড
কোনও বিস্ময়কর জিনিস ঘটলে তখনই গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের মতো সম্মানীয় জায়গায় স্থান হয় সেটির। তেমনি বলিউডেও সেরকম কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলি স্থান পেয়েছে সোজা গিনিস বুকে। তেমনি কিছু ভারতীয় ফিল্ম ব্যক্তিত্ব ও সিনেমা রয়েছে যেগুলি গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছে।
সমীর অঞ্জন–সর্বকালের সবচেয়ে প্রশংসিত বলিউডের গীতিকার
সর্বকালের সবচেয়ে প্রশংসিত বলিউডের গীতিকার হিসাবে গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছেন জনপ্রিয় গীতিকার সমীর অঞ্জন। ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ৩,৫২৪টি গান লিখেছেন। যব সে তেরে নয়না (সাওয়ারিয়া), তুম পাস আয়ে (কুছ কুছ হোতা হ্যায়), নজর কে সামনে (আশিকি) সহ বহু জনপ্রিয় গান লিখেছেন তিনি।
আশা ভোঁসলে–সঙ্গীতের ইতিহাসে সর্বাধিক গান রেকর্ড করা শিল্পী
সর্বকালের সেরা গায়িকা আশা ভোঁসলে বলিউডে অগণিত গান গেয়েছেন। দম মারো দম (হরে কৃষ্ণা হরে রাম), পিয়া তু অব তো আজা (কারবান), চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে যো দিল কো (ইয়াদো কি বারাত), ও মেরে সোনা রে সোনা (তিসরি মঞ্জিল), মুঝকো হুই না খবর (দিল তো পাগল হ্যায়) সহ বহু হিট গান শোনা গিয়েছে আশা ভোঁসলের কন্ঠে। ২০১১ সালে সঙ্গীত ইতিহাসে সর্বাধিক রেকর্ড শিল্পী হিসাবে আশা ভোঁসলের নাম যোগ করা হয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। 'বলিউডের কোকিলকন্ঠী' লতা মঙ্গেশকরের বোন আশা ভোঁসলে একা, দ্বৈত ও একসঙ্গে এগারো হাজারের বেশি গান রেকর্ড করেছেন ১৯৪৭ সাল থেকে ২০টিরও বেশি ভারতীয় ভাষাতে।
কুমার শানু–একদিনে সর্বাধিক গান রেকর্ড
বলিউডকে বহু হিট গান উপহার দিয়েছেন কুমার শানু। ৯০ দশকে তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন বলে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। তাঁর জনপ্রিয় গানগুলির মধ্যে তুঝে দেখা তো (ডিডিএলজি), এক লড়কি কো দেখা তো (১৯৪২, লাভ স্টোরি), দো দিল মিল রহে হ্যায় (পরদেশ), আশিকির সব গান। ১৯৯৩ সালে কুমার শানু একদিনে সর্বাধিক গান রেকর্ড করার জন্য গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা পান। তিনি একদিনে ২৮টি গান রেকর্ড করেছিলেন।
কাপুর–বলিউডের সবচেয়ে বৃহৎ বড় পর্দার পরিবার
অভিভাবকদের অনুসরণ করবে তাদের সন্তানরা এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার আর এটা বলিউডেও হয়ে এসেছে যে তারকা সন্তানরা তাদের অভিভাবকদের পদক্ষেপ অনুসরণ করেছে। ১৯২৯ সালে বলিউডে প্রথম পা রাখেন কাপুর পরিবারের পৃথ্বীরাজ কাপুর, এরপর এই পরিবারের ২৪ জন সদস্য বলিউডে কাজ করেছেন। আর ঠিক এই কারণেই ১৯৯৯ সাল থেকে কাপুর পরিবার গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছে।
বাহুবলী: দ্য বিগিনিং–বিশ্বের সবচেয়ে বড় পোস্টার
রাজমৌলির বাহুবলী সিনেমার পোস্টার গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছিল। ৫০ হাজার স্কোয়ার ফিটের এই পোস্টারের আয়তন ছিল ৪,৭৯৩.৬৫ স্কোয়ার মিটার।
জগদীশ রাজ–সর্বাধিক একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা
এই কিংবদন্তী অভিনেতা সর্বাধিক একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছিলেন। ১৪৪টি সিএনমায় তিনি পুলিশ ইনস্পেক্টরের চরিত্র করেছেন। দিওয়ার, ডন, শক্তি ও সিলসিলা সিনেমা তার মধ্যে অন্যতম।
কহো না প্যায়ার হ্যায়–সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অ্যাওয়ার্ড জিতেছে
হৃত্ত্বিক রোশনের প্রথম ছবি ও বক্স অফিসে সুপারহিট কহো না প্যায়ার হ্যায় ৯২টি অ্যাওয়ার্ড জিতেছিল। ২০০২ সালে এই কারণে এই সিনেমাটি গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে প্রবেশ করে।
ইয়াদে (১৯৬৪)–সবচেয়ে কম অভিনেতাদের নিয়ে তৈরি এই ছবি
১৯৬৪ সালে ইয়াদে ছবি তৈরি হয় একজন অভিনেতাকে নিয়ে এবং এটি গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে প্রবেশ করে। পরিচালক-প্রযোজক সুনীল দত্তই এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। অন্য অভিনেত্রী ছিলেন নার্গিস দত্ত।
ললিতা পাওয়ার–বলিউডের অভিনেত্রী যাঁর দীর্ঘ কর্মজীবন
১২ বছর বয়সে ললিতা পাওয়ার প্রথম বলিউডে পা রাখেন এবং ক্রমাগত ৭০ বছর ধরে অভিনয় চালিয়ে গিয়েছেন। তিনি ৭০০-এরও বেশি ছবিতে কাজ করেছেন। এই কারণে তাঁর নাম যোগ করা হয়েছে গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে।
পাইডি জয়রাজ–দীর্ঘ ফিল্ম কেরিয়ার
পাইডি জয়রাজেরও দীর্ঘ কর্মজীবন ছিল। ১৯২৯ সালে প্রথম তিনি অভিনয় জগতে পা রাখেন এবং ৭০ বছর ধরে অভিনয় করে গিয়েছেন। তিনি ৩০০ ছবির বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন। তিনিও গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন।
ভারতীয় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি–বৃহৎ বার্ষিক ছবি প্রস্তুত
ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প হল বিশ্বের সর্বাধিক সমৃদ্ধ সিনেমা তৈরির দেশ, এখানে প্রতি বছর প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ চলচ্চিত্র তৈরি হয়। প্রতি বছর হলিউডের নির্মিত সিনেমাগুলির সংখ্যার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। ২০০৯ সালে এই ইন্ডাস্ট্রি গিনিস বুকে নাম তোলে, কারণ ২৪টি ভাষায় মোট ১,২৮৮টি সিনেমা তৈরি করা হয়েছিল।
অশোক কুমার–শীর্ষ অভিনেতা হিসাবে দীর্ঘ ফিল্মি কেরিয়ার
১৯৩৬ সালে জীবন নাইয়ায় আত্মপ্রকাশের পর থেকে এই প্রবীণ অভিনেতা ধারাবাহিকভাবে অনেক জনপ্রিয় সিনেমাতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি বলিউডে 'দাদামনি' নামে পরিচিত ছিলেন এবং ৬৩ বছর ধরে একটানা অভিনয় করেছেন। তিনি গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেছিলেন দীর্ঘতম বলিউড কেরিয়াকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে।
পিকে–বক্স অফিসে সর্বোচ্চ লাভ
আমির খান অভিনীত পিকে দারুণভাবে ভারতীয় সিনেমায় সর্বকালের জন্য সফল ছবি হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। বলিউডে এই ছবি সর্বোচ্চ লাভ করার জন্য গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছে। পিকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৬.২২ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছে।
লাভ অ্যান্ড গড (কাইস অউর লয়লা)–একটি বলিউড ছবির দীর্ঘতম প্রযোজনা
এই ছবিটি সম্পূর্ণ হতে ব্যতিক্রমী দীর্ঘ সময় নিয়েছে। বিভিন্ন কারণে লাভ অ্যান্ড গড সম্পূর্ণ করতে ২০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল। প্রধান কারণ ছিল ১৯৭১ সালে ছবির অভিনেতা গুরু দত্ত ও পরিচালক কে আসিফের মৃত্যু হয়। এরপর ১৯৮৬ সালে সঞ্জীব কাপুর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন এবং তা ছবিটি সম্পূর্ণ হয়। বলিউড সিনেমায় দীর্ঘ প্রযোজনার জন্য এটি গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা পায়।