হেনস্থা থেকে পেজেন্ট কুইন, জেনে নিন মিস ট্রান্সকুইন শাইনি সোনির জীবনের গল্প
হেনস্থা থেকে পেজেন্ট কুইন, জেনে নিন মিস ট্রান্সকুইন শাইনি সোনির জীবনের গল্প
বদলাচ্ছে সমাজ, বদল হচ্ছে পুরনো চিন্তাধারার। এখন শুধুই মিস ইন্ডিয়া বা মিস ওয়ার্ল্ড–ইউনিভার্সে মহিলারা নন, রূপান্তরকামীরাও ফ্যাশন জগতে সমানভাবে অংশ নিচ্ছেন। ভারত এবার পেল নতুন মিস ট্রান্সকুইনকে এবং তিনি আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। দেশের পিছিয়ে পড়া রূপান্তরকামীদের হয়ে কথা বলতে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
২০১৭ সালে শুরু হয় এই প্রতিযোগীতা
ফ্যাশন ডিজাইনার শাইন সোনি জিতে নিয়েছেন ভারতের মিস ট্রান্সকুইনের তকমা। দেশের রূপান্তরকামীদের জন্য শনিবার এই সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। শাইনি আগামী বছর মিস ইন্টারন্যাশনাল কুইনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। ২০১৭ সালে প্রথমবার দেশে মিস ট্রান্সকুইন অনুষ্ঠিত হয় এবং সাধারণ সৌন্দর্য প্রতিযোগীতায় যা যা হয়, ফটোশুট, ট্যালেন্ট রাউন্ড, কস্টিউমস, বিচারক এবং শত শত দর্শক এতে জড়িত ছিলেন। তবে এ বছর আয়োজকরা মহামারির কারণে এই প্রতিযোগীতা করতে পারেননি, কারণ মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত লকডাউন চলছিল। কিন্তু মিস ট্রান্সকুইনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারওম্যান রীনা রাই এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্রী নন। তিনি ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের প্রতিনিধিকে পাঠাতে দৃঢ় সংকল্প করেছিলেন।
ফ্যাশন ডিজাইনার ও স্টাইলিস্ট শাইনি সোনি
শাইনি সোনি এই খেতাবের জন্য একেবারেই যোগ্য পছন্দ ছিলেন। ফ্যাশন ডিজাইনার ও স্টাইলিস্ট হিসাবে তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি এর আগে কোচ প্রতিযোগীদের ও তাঁদের পোশাক বাছাই করতে সহায়তা করেছেন। কয়েক বছর ধরে তিনি তাঁর নিজস্ব রূপান্তরকামী পরিচয় নিয়ে লড়াই করে চলেছেন এবং পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের থেকেও তিনি আলাদা থাকতেন। কিন্তু এই খেতাব পাওযার জন্য রীনা রাই তাঁকে অনুপ্রাণিত করেন। রীনা রাই বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডার ইন্ডিয়ার জন্য তিনি খুবই শক্তিশালী একটি মেরুদণ্ড।'
বহুবার হয়রানি হতে হয়েছে নিজের লোকেদের কাছ থেকে
শাইনি সোনি যখন জন্মেছিলেন তখন তিনি পুরুষ হিসাবেই জন্মান। অনেক ছোট বয়সেই তিনি বুঝতে পারেন যে তাঁর মধ্যে নারী সত্ত্বা লুকিয়ে রয়েছে। তবে তাঁর আশপাশের মানুষ তাঁকে পুরুষ বলে তাঁকে বিভ্রান্ত ও হতাশ করতেন এবং বলতেন যে তিনি যেন ছেলেদের মতো আচরণ করেন। শাইনি যখন বড় হয়ে উঠছিলেন তখন তিনি মেয়েদের মতোই লম্বা চুল রাখতে শুরু করেন, মেয়েদের পোশাক পরেন এবং মেয়েলি আচরণ করতে থাকেন, কিন্তু তাঁর আত্মীয় পরিজন ও বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে চাপ আসতে শুরু করে এ নিয়ে। শাইনি বলেন, ‘প্রচণ্ড চাপ ও হয়রানির মুখোমুখি হতে হয় আমাকে, আমি মরিয়াভাবে অনুভব করি যে আমি আলাদা এবং আমার মধ্যে কোনও সমস্যা রয়েছে।'
১৭ বছর বয়সে বাড়ি ছাড়েন
তবে শাইনিকে কিছুটা স্বস্তি দেয় ইন্টারনেট। কিশোরী বয়সে তিনি এই নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং জেন্ডার পরিচিতি ও সার্জারির বিষয়ে তিনি জানতে পারেন। ১৭ বছর বয়সেই শাইনি বাড়ি ছেড়ে দেন এবং ফ্যাশন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং কিছু বছর আগেই তিনি তাঁর হরমোনাল থেরাপি শুরু করেন, এই পদ্ধতি খুবই কষ্টদায়ক বলে তিনি বর্ণনা করেন। শাইনি জানিয়েছেন যে তাঁর অনেক বন্ধুই তাঁর ওপর আশা ছেড়ে দেয় কিন্তু তিনি খুব দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন এবং পুরোটাই তিনি নিজে একা করেছেন।
একা লড়াই চালিয়েছেন শাইনি
রূপান্তর হওয়ার পর শাইনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। তিনি এনআইএফটি থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে স্নাতক হন, রিয়্যালিটি ডিজাইন শো জেতেন এবং একজন স্টাইলিস্ট হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেই সময়ই তাঁর রাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়। ২০১৭ সালেই রীনা রাই তাঁকে এই প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়ার জন্য বলেছিলেন কিন্তু তখনও শাইনি সোনি প্রস্তুত ছিলেন না। তবে তিনি সেই সময় পর্দার বাইরে থেকে এই শোয়ে যাবতীয় সহায়তা করেছেন। ওই সময় তিনি এলজিবিটিকিউ অ্যাডভোকেসির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন। গত কয়েক বছর ধরে, তিনি এবং দেশের অন্যান্য কর্মীরা স্কুলের পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তকগুলিতে বৃহত্তর এলজিবিটিকিউ উপস্থাপন এবং সঠিক তথ্যের জন্য প্রচার চালাচ্ছেন। কিন্তু এ বছর রীনা রাইয়ের দ্বিতীয় প্রস্তাব পাওয়ার পর আর না বলতে পারেননি শাইনি সোনি এবং তার ফল তিনি আজ মিস ট্রান্সকুইন, যিনি আন্তর্জাতিক স্তরে পা রাখতে চলেছেন।
ছবি সৌ:ফেসবুক
করোনা নিয়ে এবার অভিনেতা আবীরের পরিবারে আরও বড় দুঃসংবাদ