শ্রী শ্রী কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর খুটিনাটি
রাত পেরলোই কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমা। বাংলা জুড়ে মানুষ মাতবে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনায়। সৌভাগ্য ও ধন সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শ্রী শ্রী কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো সম্পর্কে এই জিনিসগুলো জেনে রাখা দরকার।
এসো মা লক্ষ্মী বোসো ঘরে
আমার এ ঘরে থাকো আলো করে...
ধনের দেবী লক্ষ্মী।
এ প্রার্থনা বাংলার ঘরে ঘরে চিরন্তন |প্রায় প্রতি ঘরে ঘরেই দেবী লক্ষ্মীর পুজো হয়ে থাকে। মহিষাসুরমর্দিনীর আগমনে আনন্দময় হয়ে উঠেছিল ধরনী। জীবনের জ্বালা ভুলে মানুষ মেতেছিল উৎসবের আনন্দে। চিন্ময়ীর বিদায়ের বার্তা ভুলে মানুষ আবার মেতে উঠছে লক্ষ্মী পুজোর উৎসব ও আনন্দে।
[এই বিশেষ রীতি-আচারগুলি ছাড়া সম্পন্ন হয় না কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো ]
মা আসবেন ধরনীতে ধন সম্পদে পূর্ণবান হয়ে। অন্নপূর্ণার আলতা রাঙা পায়ের চিহ্ন আঁকা হবে ঘরে ঘরে। ধন-সম্পদের আশায় হিন্দু নারী ও পুরুষেরা উপবাস ব্রত পালন করেন। ফুল ফল মিষ্টি নৈবেদ্য দিয়ে আরাধনা করবেন লক্ষ্মী মায়ের। দেন পুস্পাঞ্জলী।
সনাতন হিন্দু ধর্মাবলমন্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব এটি। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নগরীর ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পুজো উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। ধন সম্পদের দেবী হওয়ায় বিভিন্ন মন্দির ছাড়াও সনাতন ধর্মালম্বীদের ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পুজো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষে চান্দ্র আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অর্থাৎ কোজাগরী পূর্ণিমায় দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার সধবা স্ত্রীগণ লক্ষ্মীর পুজো করে থাকেন।
বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বণে লক্ষ্মী দেবী আসেন বারে বারে | অনেকেই সারা বছর প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর পুজো করে থাকেন | এছাড়া শস্য সম্পদের দেবী বলে ভাদ্র সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে এবং আশ্বিন পূর্ণিমা ও দীপাবলীতে লক্ষ্মীর পুজো হয় | লক্ষণীয় বিষয় হল-খারিফ শস্য ও রবি শস্য ঠিক যে সময় গৃহজাত হয় তখনই বাঙালি মেতে ওঠে লক্ষ্মীর আরাধনায় | তবে পুজোর উপচারে পরিবর্তন হয় মাস ভেদে |
পুজোর মন্ত্র সেই একই-
নমামি
সর্বভূতানাং
বরদাসি
হরিপ্রিয়ে
যা
গতিস্ত্বৎপ্রপন্নানাং
সা
মে
ভূয়াৎ
ত্বদর্চনাৎ
|
-
অর্থাৎ 'হে হরিপ্রিয়ে,তুমি সকল প্রাণীকে বরদান করিয়া থাক, তোমাকে প্রণাম করি | যাহারা তোমার শরণাগত হয়, তাহাদের যে গতি, তোমার পূজার ফলে আমারও যেন সেই গতি হয় |'
আজকাল গৃহস্থের সুবিধের জন্যই হোক বা পুরোহিতের স্বল্পতার জন্য, লক্ষ্মী পুজো (বারোমেসে পুজো বাদে) হচ্ছে সকাল থেকেই | কিন্তু কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর প্রকৃষ্ট সময় প্রদোষকাল | অর্থাৎ সূর্যাস্ত থেকে দু ঘণ্টা পর্যন্ত যে সময় |
মনে রাখতে হবে প্রদোষ থেকে নিশীথ অবধি তিথি থাকলেও সেই প্রদোষেই পুজা বিহিত | কিন্তু পূর্বদিনের রাত্রি থেকে পরদিন প্রদোষ পর্যন্ত তিথি থাকলে পরদিন প্রদোষেই পুজো করা বিধেয় | আবার পূর্বদিন রাত্রে তিথি (পূর্ণিমা/অমাবস্যা) থাকলেও যদি পরদিন প্রদোষে তিথি না থাকে তাহলে পূর্বদিন প্রদোষেই পুজো করা কর্তব্য |
রাজধানী কলকাতা থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ঘরে লক্ষ্মীর আসন বিরাজমান | ধন-সম্পদ কে না চায়? সমাজে থাকতে গেলে অর্থের প্রয়োজন সকলেরই | ঈশ্বরী পাটনীর কামনা তাই চিরন্তন-আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে | তাই শুধু বাংলার নয় | ভারতের বিভিন্ন প্রদেশেই লক্ষ্মী পুজোর প্রচলন আছে |
কিন্তু বাংলার বাইরে দেবী পূজিতা হন গৌণ চান্দ্র কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে অর্থাৎ দীপান্বিতা অমাবস্যার রাত্রে। এই পূজা সাধারণত বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পুজোর পরেই হয়ে থাকে। লক্ষ্মীপূজা কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো নামেও পরিচিত।
এবার আসা যাক, কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর কথায় | কোজাগরী শব্দটি এসেছে 'কো জাগর্তি' থেকে, যার অর্থ 'কে জেগে আছো?'।এই পূর্ণিমার রাতে দেবী লক্ষ্মী বরদান করার উদ্দেশে জগৎ পরিক্রমা করে দেখেন, কে নারকেল জল পান করে সারারাত জেগে আছেন |
কথিত, দেবী এও বলে থাকেন,'আজ রাতে যে ব্যক্তি জেগে থেকে পাশাখেলা করবে তাকে আমি ধনবান করব |' তাই ভক্তিপূর্ণ চিত্তে এদিন লক্ষ্মীর পুজো করার পরে প্রথমে বালক, বৃদ্ধ ও আতুরদের আহার করাতে হয় | পরে ব্রাহ্মণ ও বন্ধুবান্ধবদের নারকেল জল ও চিঁড়ে আহার করিয়ে তবে তা নিজে গ্রহণ করতে হয় |
বলা হয়, জগৎ শেঠ অল্প বয়সে বিদ্বান হয়ে উঠলে দিল্লীশ্বরের কানে তা পৌঁছয় | তিনি তাঁকে দেখতে চান | এরপর জগৎ শেঠ দিল্লি গেলে রাজা তাঁর কথাবার্তায় খুশি হয়ে তাঁকে দিল্লিতে থাকতে বলেন |
জগৎ
শেঠও
দিল্লিতে
থেকে
যান
|
কিছুদিন
পরে
রাজা
তাঁকে
বলেন,
তোমার
উপর
আমি
অত্যন্ত
প্রীত
|
তুমি
যা
চাইবে
আমি
দান
করব
|
তখন
জগৎ
শেঠ
বাড়ি
ফিরে
মাকে
সব
বলেন
|
বুদ্ধিমতী
জননী
পুত্রের
মঙ্গলের
জন্য
বলেন,
আগে
রাজাকে
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ
করিয়ে
নিয়ে
তারপর
জানাতে
যে
কোজাগরী
পূর্ণিমার
রাতে
দিল্লিতে
কোনও
গৃহস্থ
বাড়িতে
যেন
আলো
না
জ্বালায়
|
রাজার নির্দেশে ওই রাতে কেউ আলো জ্বালালো না | জগৎ শেঠের মা ঘি-এর প্রদীপ জ্বেলে ঘর আলো করে দরজা খুলে বসে থাকল | যথাসময়ে দেবী এলেন এবং বললেন, আমি খুব পরিশ্রান্ত | আমাকে একটু আশ্রয় দেবে ?
জগৎ শেঠের মা দেবীর ছলনা বুঝতে পারলেন | তিনি দেবীকে ঘরে আশ্রয় দিলেন এবং বললেন, আমি নদীতে স্নান করতে যাচ্ছি | ফিরে না আসা অবধি আপনি এখানে থাকুন | দেবী তাতে রাজি হলেন | এবার জগৎ শেঠের মা নদীতে স্নান করতে গিয়ে প্রাণত্যাগ করলেন | ফলে সেদিন থেকে দেবী জগৎ শেঠের ঘরে থেকে গেলেন |
আজও ধন সম্পদের দেবী লক্ষ্মীকে পাওয়ার জন্য গৃহস্থ বাড়িতে সারারাত ঘি-এর প্রদীপ জ্বালানো হয় | তবে ছেলেরা অনেকেই ওই রাতে জুয়া (পাশার পরিবর্তে) খেলে থাকেন |
কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার দিন বাংলার ঘরে ঘরে শঙ্খধ্বনি মুখরিত সন্ধ্যায় লক্ষ্মীর আরাধনা হলেও ভারতের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে লক্ষ্মীপুজো হয় দীপাবলির সন্ধ্যায়। গবেষকদের মতে, বাংলার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে রয়েছে কৃষি সমাজের গভীর প্রভাব। অবশ্য তার প্রমাণও মেলে পুজোর উপকরণ আর আচার অনুষ্ঠানে।
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছে আলপনা। পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন প্রান্তে লক্ষ্মীপুজোর আলপনাতেও দেখা যায় আঞ্চলিকতার প্রভাব। এখনও গ্রামাঞ্চলে ঘরের দরজা থেকে দেবীর আসন, ধানের গোলা পর্যন্ত আলপনায় ছোট ছোট পায়ের ছাপ দেওয়া হয়।
পুজো হয় মূলত প্রতিমা, সরা, নবপত্রিকা কিংবা কলার পেটোর তৈরি নৌকায়। একে বলে বাণিজ্যের নৌকা কিংবা সপ্ততরী নৌকা। লক্ষ্মী সরাও হয় নানা রকম, যেমন ঢাকাই সরা, ফরিদপুরি, সুরেশ্বরী এবং শান্তিপুরী সরা। নদিয়া জেলার তাহেরপুর, নবদ্বীপ এবং উত্তরচব্বিশ পরগনার বিভিন্ন স্থানে লক্ষ্মীসরা আঁকা হয়। তবে আঞ্চলিকতা ভেদে লক্ষ্মী সরায় তিন, পাঁচ, সাত পুতুল আঁকা হয়। এতে থাকে লক্ষ্মী, জয়া বিজয়া সহ লক্ষ্মী, রাধাকৃষ্ণ, সপরিবার দুর্গা ইত্যাদি। ফরিদপুরের সরায় দেবদেবীরা সাধারণত একটি চৌখুপির মধ্যে থাকেন। আবার সুরেশ্বরী সরায় উপরের অংশে মহিষমর্দিনী আঁকা হয় আর নীচের দিকে থাকেন সবাহন লক্ষ্মী।
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতে দেখা যায় জেলা ভিত্তিক আঞ্চলিক আচার অনুষ্ঠান। এখনও ঘরে ঘরে প্রতি বৃহস্পতিবারে লক্ষ্মীর পাঁচালি পাঠ করে তাঁর আরাধনা করা হয়। উপচারে ফল মিষ্টি ছাড়াও থাকে মোয়া, নাড়ু ইত্যাদি। লক্ষ্মীর আচার অনুষ্ঠানেও দেখা যায় নানা ধরনের তাৎপর্য। কোনও কোনও পরিবারে পুজোয় মোট ১৪টি পাত্রে উপচার রাখা হয়। কলাপাতায় টাকা, স্বর্ণ মুদ্রা, ধান, পান, কড়ি, হলুদ ও হরিতকী দিয়ে সাজানো হয় পুজো স্থানটিকে। পুজোর উপকরণ এবং আচার অনুষ্ঠান দেখে অনুমান করা যায় এর নেপথ্যে থাকা কৃষি সমাজের প্রভাব। কিছু কিছু জায়গায় লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে মেলা বসে। কোথাও বা নৌকাবাইচও অনুষ্ঠিত হয়।
এই উৎসবের অন্যদিক হল কোজাগরী পূর্ণিমায় চাঁদ ও পৃথিবী নাকি খুব কাছাকাছি আসে | আর চাঁদের আলোর বিশেষ গুণ হল শরীর ও মনকে পরিপুষ্ট করা (বিজ্ঞান তা স্বীকার নাও করতে পারে) | এ জন্য গুজরাতে ওই রাতে চাঁদের আলোয় ক্ষীর রেখে দেওয়া হয় | পরদিন তা খাওয়া হয় | গুজরাতিরা এই পার্বণে গরবা উৎসবও পালন করে | ওড়িশাবাসী মনে করে এই দিনটিতে কুমার কার্তিকের জন্ম | তাই তাদের কাছে এটি কুমার পূর্ণিমাও | মহারাষ্ট্রেও কোজাগরী পূর্ণিমায় ভক্তি সহকারে লক্ষ্মীপুজো করা হয় |
লক্ষ্মী হিন্দুদের ধনসম্পদ, আধ্যাত্মিক ও পার্থিব উন্নতি, আলো, জ্ঞান, সৌভাগ্য, উর্বরতা, দানশীলতা, সাহস ও সৌন্দয্যের দেবী। বাঙালি হিন্দুদের বিশ্বাসে লক্ষ্মীদেবী দ্বিভূজা। তার বাহন হচ্ছে পেঁচা। অবশ্য বাংলার বাইরে লক্ষ্মীর চতুর্ভূজা কমলে-কামিনী মূর্তিই দেখা যায়।
লক্ষ্মী দেবীর ধ্যান মন্ত্রে বলা হয় " যাম্য করে পাশ , অক্ষমালা , সৌম্য করে পদ্ম ও অঙ্কুশ ধারিনী পদ্মাসনে উপবিষ্টা , শ্রী অর্থাৎ ঐশ্বর্য সম্পৎ ও সৌন্দর্য রুপিনী , ত্রিলোকের জননী , গৌরবর্ণা , সুন্দরী , সর্বা অলঙ্কার বিভূষিতা , ব্যগ্রহস্তে স্বর্ণ পদ্ম ধারিনী এবং দক্ষিণ হস্তে বরদানকারিনী দেবীকে ধ্যান করি ।
লক্ষ্মী স্ত্রোত্র এ বলা হয় -
লক্ষ্মীঃ
শ্রীঃ
কমলা
বিদ্যা
মাতা
বিষ্ণুপ্রিয়া
সতী
।
পদ্মালয়া
পদ্মহস্তা
পদ্মাক্ষী
পদ্মসুন্দরী
।।
ভূতানামীশ্বরী
নিত্যা
মতা
সত্যাগতা
শুভা
।
বিষ্ণুপত্নী
মহাদেবী
ক্ষীরোদতনয়া
ক্ষমা
।।
অনন্তলোকলাভা
চ
ভূলীলা
চ
সুখপ্রদা
।
রুক্মিণী
চ
তথা
সীতা
মা
বৈ
বেদবতী
শুভা
।।
এতানি
পুন্যনামানি
প্রাতরুথায়
যঃ
পঠেৎ
।
মহাশ্রিয়নবাপ্নোতি
ধনধান্যকল্মষম্
।।
শ্রী , কমলা বিদ্যা , মাতা , বিষ্ণুপ্রিয়া , সতী , পদ্মালয়া পদ্মহস্তা পদ্মাক্ষী পদ্মসুন্দরী , ভূতগণের ঈশ্বরী , নিত্যা , সত্যাগতা , শুভা , বিষ্ণুপত্নী , ক্ষীরোদ - তনয়া , ক্ষমা স্বরূপা , অনন্তলোকলাভা , ভূলীলা , সুখপ্রদা , রুক্মিণী , সীতা , বেদবতী - দেবীর এ সকল নাম । প্রাতেঃ উত্থান কালে যারা দেবীর এই পুন্য নামাবলী পাঠ করেন তারা বিপুল ঐশ্বর্য পেয়ে ধনী হয়ে থাকেন ।
অগ্নি
পুরাণ
মতে
শ্রী
বা
লক্ষ্মী
হলেন
যজ্ঞবিদ্যা
,
তিনিই
আত্ম্যবিদ্যা
,
যাবতীয়
গুহ্যবিদ্যা
ও
মহাবিদ্যা
ও
তিনি
।
যজ্ঞবিদ্যা
মহাবিদ্যা
গুহ্যবিদ্যা
চ
শোভনা
।
আত্ম্যবিদ্যা
চ
দেবি
বিমুক্তিফলদায়িনী
।।
দেবী ভাগবত মতে যে স্বর্গে তিনিই স্বর্গ লক্ষ্মী , রাজগৃহে তিনি রাজলক্ষ্মী , গৃহে তিনি গৃহলক্ষ্মী । তিনি শান্তা , দান্তা , সুশীলা , সর্ব মঙ্গলা , ষড়রিপু বর্জিতা ।
এক কথায় ধন , জ্ঞান , শীল - তিনেরই বিকাশ দেবী লক্ষ্মীর মধ্যে । কমলের মতো তিনি সুন্দরী , কমলাসনে তাঁর নিবাস । কমল বা পদ্ম হল বিকাশ বা অভ্যুদয়ের প্রতীক ।
শাস্ত্রে
অষ্টলক্ষ্মীর
কথা
আছে
।
দেবীর
লক্ষ্মীর
আটটি
রূপ
এঁনারা
।
৮
জন
লক্ষ্মী
হলেন-
আদিলক্ষ্মী,
ধনলক্ষ্মী,
ধান্যলক্ষ্মী,
গজলক্ষ্মী,
সন্তানলক্ষ্মী,
বীরলক্ষ্মী,
বিজয়ালক্ষ্মী
ও
বিদ্যালক্ষ্মী
।
"আদিলক্ষ্মী" হলেন মহর্ষি ভৃগু মুনির কন্যা। আবার এঁনাকে কিছু পুরাণে সাগর কন্যা বলা হয়। সমুদ্র মন্থনের সময় ইনি প্রকটিত হয়ে ভগবান বিষ্ণুকে পতি রূপে বরণ করেন ।
"ধনলক্ষ্মী" হলেন সোনাদানা, অর্থ ইত্যাদির প্রদায়িত্রী। ইনি প্রসন্না হলে সাধক কে অর্থ, ঐশ্বর্য এমনকি পারমার্থিক ধন সম্পত্তি ব্রহ্মবিদ্যা প্রদান করেন ।
"ধান্যলক্ষ্মী" হলেন চাল, ডাল, ধান, গম ইত্যাদি কৃষিজ ফসলের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এঁনার কৃপায় কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে মাঠ ফসলে ভরে ওঠে। কৃষকেরা গৃহে ফসল তুলে লক্ষ্মীর মুখ দেখতে পান। মাঠ ভরা ধান, গম এই লক্ষ্মীর প্রতীক।
"গজলক্ষ্মী" হলেন পশু সম্পত্তি এমনকি পশু পালনের মারফৎ যে অর্থ আসে- তাঁর অধিষ্ঠাত্রী প্রদায়িনী দেবী। পশুপালনের দ্বারা সভ্যতার বিকাশ, লাঙল, রথ টানা ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজের বিকাশ হয়েছিলো । এই দেবীর কৃপায় দেবতাদের রাজা ইন্দ্র দেব ঐরাবত বাহন রূপে প্রাপ্ত করেন ।
"সন্তানলক্ষ্মী" হলেন সন্তান সন্ততি প্রদায়িনী দেবী। এঁনার কৃপায় সন্তান সুখ লাভ হয় ।
"বীরলক্ষ্মী" বলতে দেবী এই রূপে সাহস, উদ্যম প্রদান করেন। এঁনারা কৃপায় হতাশা, অলসতা আদি শত্রুর নিরাময় ঘটে । নিস্কাম সাধকের মনে ধর্ম ও অধর্মের মধ্যে যে সংগ্রাম হয়- তখন ইনি সাধক কে সাহস, উদ্যম, ক্ষমতা দিয়ে অধার্মিক রিপুগুলিকে ধ্বংস করবার শক্তি প্রদান করেন ।
"বিজয়ালক্ষ্মী" বলতে যুদ্ধের পর যে বিজয়শ্রী প্রাপ্ত করা হয় । সাধক যখন রিপুগুলিকে পরাজিত করে শুভশক্তির প্রকাশ ঘটান তখন তিনি যে পারমার্থিক সুখ লাভ করেন তা প্রদান করেন এই দেবী ।
"বিদ্যালক্ষ্মী" হলেন জ্ঞান রূপ ধন প্রদায়িনী। তিনি সাধককে সমস্ত রকম বিদ্যা রূপ ঐশ্বর্য প্রদান করেন ।
এছারা
ঐশ্বর্যলক্ষ্মী(
ঐশ্বর্য
প্রদান
করেন)
,
সৌভাগ্যলক্ষ্মী(
সৌভাগ্য
প্রদান
করেন)
,
রাজ্যলক্ষ্মী(
রাজগৃহে
থাকেন,
রাজসুখ
প্রদায়িনী)
,
বরলক্ষ্মী
(
সকল
প্রকার
শুভ
আশীষ
ও
সৌন্দর্য
দান
করেন)
দেবীর
নাম
শোনা
যায়
।
পুরানে আছে সাগর মন্থন কালে দেবী লক্ষ্মী সমুদ্র থেকে প্রকট হন । সাগর হল লক্ষ্মী দেবীর পিতা । সাগরেই মুক্তা , প্রবাল আদি রত্ন পাওয়া যায় । রত্ন হল ধন , যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন লক্ষ্মী ।
তিনি বিষ্ণুপ্রিয়া । তিনি শ্রী বিষ্ণুর সহধর্মিণী । তিনি সীতা , তিনি রাধা তথা রুক্মিণী । তিনি মহাপ্রভুর সহধর্মিণী লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী । তিনি ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেবের সহধর্মিণী মা সারদা । শরত ঋতু তে আমরা যে দুর্গাদেবীর পূজো করি তিনিও মহালক্ষ্মী স্বরূপা । দেবী লক্ষ্মী মহামায়া আদিশক্তির এক অংশ ।
দেবী লক্ষ্মী কে চঞ্চলা বলা হয় । কারণ লক্ষ্মী দেবী নাকি এক জায়গায় থাকেন না । ধন হস্তান্তর হয় । কুপাত্রের হাতে বিপুল ধন আসলে সে ধনের অসৎ প্রয়োগ করে লক্ষ্মী কে হারায় । রাবণ লক্ষ্মী সীতা দেবীকে অসৎ উপায়ে ভোগ করতে চেয়েছিলেন , এই কারনে গোটা লঙ্কা ধ্বংস হয়েছিল । রাবন নিহত হয়েছিলেন । এই থেকে আমরা শিক্ষা লাভ করি লক্ষ্মীর কৃপা সব সময় এ শুভ কাজেই ব্যবহার করা উচিৎ । এবং কখনো অসৎ উপায় অবলম্বন করে লক্ষ্মী প্রাপ্তির আশা করা উচিত নয় । না হলে রাবনের মতো আমাদেরও বিনাশ নিশ্চিত ।
দেবী
লক্ষ্মীর
নিবাস
কোথায়
?
তিনি
কি
খালি
বৈকুন্ঠে
শ্রী
বিষ্ণুর
পাদপদ্মে
থাকেন
?
যেখানে
শীল
ও
সদাচার
থাকে
দেবী
সেখানেই
বাস
করেন
।
ব্রহ্ম
বৈবরত
পুরানে
দেবী
নিজ
পরিচয়
দিয়েছেন
-
"
যে
সকল
গৃহে
গুরু
,
ঈশ্বর
,
পিতামাতা
,
আত্মীয়
,
অতিথি
,
পিতৃলোক
রুষ্ট
হন
,
সে
সকল
গৃহে
আমি
কদাপি
প্রবেশ
করি
না
।
আমি
সে
সকল
গৃহে
যেতে
ঘৃনা
বোধ
করি
,
যে
সকল
ব্যাক্তি
স্বভাবতঃ
মিথ্যাবাদী
,
সর্বদা
কেবল
'নাই'
,
'নাই'
করে
,
যারা
দুর্বলচেতা
এবং
দুঃশীল
।
যারা
সত্য
হীন
,
মিথ্যা
সাক্ষ্য
দান
করে
,
বিশ্বাসঘাতক
,
কৃতঘ্ন
,
যে
সকল
ব্যাক্তি
সর্বদা
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত
,
ভয়গ্রস্ত
,
শত্রু
গ্রস্ত
,
ঋণ
গ্রস্ত
,
অতি
কৃপণ
,
দীক্ষা
হীন
,
শোকার্ত
,
মন্দঘ্নী
,
স্ত্রী
বশীভূত
,
কুলটার
পতি
,
দুর্বাক
,
কলহ
পরায়ণ
,
যারা
ভগবানের
পূজো
ও
তাঁর
নাম
গুন
কীর্তনে
বিমুখ
,
যারা
শয়নের
পূর্বে
পাদপ্রক্ষালন
করে
না
,
নগ্ন
হয়ে
শয়ন
করে
,
বেশী
ঘুমায়
,
প্রভাতে
সন্ধ্যায়
দিবসে
নিদ্রা
যায়
,
যাদের
দন্ত
অপরিচ্ছন্ন
,
বসন
মলিন
,
মস্তক
রুক্ষ
,
হাস্য
বিকৃত
,
তাদের
গৃহে
আমি
কদাপি
গমন
করি
না
।
আমি সে সকল গৃহে বসতি করি , যে সকল গৃহ শ্বেত পারাবত অধুষ্যিত , যেখানে গৃহিণী উজ্জ্বল সুশ্রী , যেখানে কলহ নাই , ধান্য সকল সুবর্ণ সদৃশ , তণ্ডুল রজতোপম এবং অন্ন তুষহীন । যে গৃহস্থ পরিজনের মধ্যে ধন ভোগ্য বস্তুর সমান বিভাগ পূর্বক বিতরণ করেন , যিনি মিষ্টভাষী , বৃদ্ধপোসেবী , প্রিয়দর্শন , স্বল্পভাষী , অ দীর্ঘ সূত্রী , ধার্মিক , জিতেন্দ্রিয় , বিদ্যা বিনয়ী , অ গর্বিত , জনানুরাগী , পরপীড়ন বিমুখ , যিনি ধীরে স্নান করেন , চয়িত পুস্প আঘ্রাণ করেন না , সংযত এমন ব্যাক্তি আমার কৃপা পেয়ে থাকেন । "
শুধু অর্থ নয় , উন্নত চরিত্রও মানুষের অমূল্য সম্পদ । লক্ষ্মী দেবীর কৃপা তাঁরাই লাভ করেন যারা নৈতিক চরিত্রের অধিকারী । লক্ষ্মী র কৃপা সব সময় সৎ কাজেই ব্যাবহার করা উচিত । মানুষ যদি লক্ষ্মী র অপপ্রয়োগ করেন ত অলক্ষ্মীর শাপে সে ধ্বংস হবেই । যে শুদ্ধ নৈতিক চরিত্রের অধিকারী তাঁর গৃহে লক্ষ্মী অচলা হয়ে অবস্থান করেন । আর যারা ঠিক এর উল্টো তারা কর্মদোষে অলক্ষ্মীর আহ্বান করে ধ্বংসের পথে অগ্রসর হয় । লক্ষ্মী হল 'শ্রী' । সকল নারীর মধ্যে যে শীল ও সদাচার আছে তার মাধ্যমেই তিনি প্রকাশিতা । তাই যেখানে নারী দের প্রতি অবমাননা হয় , বা যারা নারী দের ওপর নির্যাতন করেন - সেই সব জায়গায় কখনই দেবী লক্ষ্মীর কৃপা বর্ষণ হয় না ।
কথিত
আছে
কোজাগরী
লক্ষ্মী
পূর্ণিমার
দিন
দেবী
রাত্রে
খোঁজ
নেন
-
কে
জেগে
আছেন
?
যে
জেগে
অক্ষক্রীড়া
করে
,
লক্ষ্মী
তাঁকে
ধন
সম্পদ
দান
করেন
।
"
নিশীথে
বরদা
লক্ষ্মীঃ
জাগরত্তীতিভাষিণী
।
তস্মৈ
বিত্তং
প্রযচ্ছামি
অক্ষৈঃ
ক্রীড়াং
করোতি
যঃ
।।
"
অক্ষক্রীড়া শব্দের সাধারন অর্থ পাশা খেলা । এক শ্রেনীর লোক এই দিন পাশা খেলার মাধ্যমে টাকা পয়সা বাজি রেখে জুয়া খেলায় মেতে ওঠে । আবার কেউ কেউ এই দিন পরের বাগানের ফলমূল চুরি করে গাছপালা তছনছ করে । এই সব অর্থহীন কাজের মাধ্যমে তারা ভাবে যে লক্ষ্মী দেবী তাদের কৃপা করবেন ।
'অক্ষ' শব্দটির অনেক রকম মানে হয় । অক্ষ শব্দটির দ্বিতীয় অর্থ - ক্রয় বিক্রয় চিন্তা । যারা বৈশ্য তাঁরা এইদিন দেবীর আরাধনা করে ব্যবসা বাণিজ্যের চিন্তন করেন । দেবীর কৃপা পেলেই ত ব্যবসায় সফলতা আসবে । 'অক্ষ' শব্দটির আরেক ভাবে রুদ্রাক্ষ , জপমালা কেউ বোঝায় । যারা ভক্ত মানুষ - তাঁরা এই রাত্রে দেবীর কৃপা পাবার আশায় তাঁর নাম জপ করেন । ধন সম্পদ বলতে শুধু কি অর্থ , সোনা দানা ? বৈকুণ্ঠ ধাম , শ্রী বিষ্ণুর পাদপদ্ম পরম ধন । লক্ষ্মী পূজোর রাত্রে দেবী আসেন মর্ত্যলোকের দ্বারে দ্বারে । কিন্তু যে ঘুমিয়ে থাকে তার দ্বার থাকে লক্ষ্মী দেবী চলে যান । কিন্তু যিনি জেগে ভক্তি চিত্তে লক্ষ্মী জনার্দনের উপাসনা , নামস্মরণ করেন - দেবী তাঁকেই কৃপা করেন ।
পেঁচক মা লক্ষ্মীর বাহন । ধান হল লক্ষ্মীর প্রতীক । চাল , অন্ন , খাদ্যশস্য হল লক্ষ্মীর প্রতীক । তাই যারা খাদ্য অপচয় করেন , তাঁদের ওপর দেবী লক্ষ্মী কখনোই তুষ্ট হন না । ধানক্ষেতের আশেপাশে মূষিক এর বাস । এবং এরা ধানের ক্ষতি করে থাকে । পেঁচক এর আহার হল এই মূষিক । গোলাঘর কে লক্ষ্মীর প্রতীক বলা হয় । গোলাঘরের আশেপাশে মূষিক কূলের নিবাস । পেচক এই মূষিক দের ভক্ষণ করে খাদ্যশস্য কে রক্ষা করে । তাই এদিক থেকে পেঁচক মা লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে যথার্থ মানানসই ।
পেঁচক দিনে অন্ধ । সে রাত্রে জাগে । তাই আমরা যেনো পরধন সমন্ধে তেমন অন্ধ হই । কখনো যেনো অন্যের ধন আত্মস্যাৎ করার ইচ্ছা মনে না জাগে ?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন -
"
যা
নিশা
সর্বভূতানাং
সা
নিশা
জাগরতি
সংযমী
।
যস্যাং
জাগ্রতি
ভূতানি
সা
নিশা
পশাতো
মুনেঃ
।।
"
অর্থাৎ সর্ব ভূতের যা রাত্রি , সংযমীর পক্ষে তা দিন । তাঁদের যা দিন , তাঁর তা রাত্রি । সকল প্রানী পরমার্থ বিষয়ে নিদ্রিত কিন্তু বিষয়ভোগে জাগ্রত । কিন্তু সংযমী সাধু যোগী পরমার্থ বিষয়ে জাগ্রত , বিষয়ভোগে নিদ্রিত । দেখা যায় দিবাকালে অন্য প্রাণীরা যখন জাগ্রত পেচক তখন নিদ্রিত । পেচক নিশাচর । নিশীথের নিস্তব্ধ পরিবেশ সাধুদের সাধনার অনুকূল । তাই পেচক আমেদের পরমার্থ চিন্তার আদর্শ সেখায় , যার মাধ্যমে আমরা দেবীর কৃপা পেতে পারি ।
লক্ষ্মীর আর এক নাম শ্রী, সম্পদ | তাই ছন্নছাড়া জীবনযাপনকারীকে লক্ষ্মীছাড়া বলা হয় | আবার সাজানো গোছানো বাড়ি-ঘর দেখে তবেই লোকে বাড়ির গৃহিণীকে লক্ষ্মীমন্ত বলেন | আর এর বিপরীত হলেই লক্ষ্মীছাড়া বা অলক্ষ্মী | এই অলক্ষ্মী ও লক্ষ্মীর সহাবস্থান কখনই সম্ভব নয় | তাই অলক্ষ্মী যাকে আশ্রয় করেন, লক্ষ্মী তাঁকে ত্যাগ করেন | এই জন্য দীপান্বিতায় যে লক্ষ্মী পুজো হয় তখন প্রথমে অলক্ষ্মীকে গোবর দিয়ে তৈরি করে বাড়ির বাইরে ফেলে আসা হয় | তারপর শুরু হয় লক্ষ্মীপুজো | একেই সাধারণভাবে লক্ষ্মী-অলক্ষ্মী পুজো বলে |
ভারতে লক্ষ্মীপুজোর ইতিহাস বহু প্রাচীন। ঋগ্বেদে লক্ষ্মীর কোনও সরাসরি উল্লেখ না থাকলেও শ্রী শব্দের উল্লেখ রয়েছে বেশ কয়েকবার। এখানে শ্রী অর্থে সৌন্দর্যের আধার। যদিও পরবর্তী কালে শ্রীসুক্তে অবশ্য উল্লেখ রয়েছে শ্রী নামক এক দেবীর, যিনি পদ্মের উপর দণ্ডায়মান। সেই আদি যুগ থেকেই লক্ষ্মীর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে পদ্ম। তাই তিনি পদ্মাসনা, পদ্মালয়া। যুগ যুগ ধরে লক্ষ্মীকে বিভিন্ন রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। শুক্ল যজুর্বেদে শ্রী তথা লক্ষ্মীকে আদিত্যের দুই পত্নী রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। অথর্ববেদে উল্লেখ মেলে পুণ্যালক্ষ্মী এবং পাপী লক্ষ্মীর। রামায়ণে সীতাকে লক্ষ্মী রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি হল, সমুদ্রমন্থনের সময় লক্ষ্মীর আবির্ভাব।
তবে শুধু হিন্দু ধর্মে নয়, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মেও উল্লেখ রয়েছে দেবী লক্ষ্মীর। যেমন বৌদ্ধ 'অভিধানপ্পদীপিকা'-তে তিনি সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধির দেবী। তেমনই 'শালিকেদার' এবং 'সিরি-কালকন্নি' জাতকে তাঁকে সৌভাগ্য ও জ্ঞানের দেবী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার বৌদ্ধতন্ত্রে তিনি বসুধারা নামে পূজিত হতেন। তিনি দেবী লক্ষ্মীর বৌদ্ধ প্রতিরূপ। অন্য দিকে জৈন ধর্মে তাঁর উল্লেখ রয়েছে মহাবীরের মাতা ত্রিশলা, যে রাতে জিনকে স্বপ্নে ধারণ করেছিলেন সেই রাতেই গজলক্ষ্মীকে স্বপ্নে দেখেছিলেন।
প্রাচীন ভারতের শিল্পকলায় এমনকী মুদ্রায় দেবী লক্ষ্মীর অসংখ্য নিদর্শন পাওয়া যায়। প্রাচীন বৌদ্ধ শিল্পকলায় ভারহুত, সাচী কিংবা অমরাবতীর ভাস্কর্যে লক্ষ্মীর সন্ধান মেলে। ভারতীয় সংগ্রহালয়ে রক্ষিত খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের, বেসনগরের যে কল্পবৃক্ষ রয়েছে তাতে প্রচুর ধনসম্পদের সঙ্গে শঙ্খ ও পদ্মের চিহ্ন দেখা যায়। গবেষকদের মতে এই কল্পবৃক্ষের সঙ্গে কুবের অথবা লক্ষ্মীর সম্পর্ক রয়েছে। প্রাচীন ভারতীয় মুদ্রায় গজলক্ষ্মী কিংবা অভিষেক রত লক্ষ্মীর অসংখ্য নিদর্শন পাওয়া যায়। লক্ষ্মী মূলত দ্বিভুজা অথবা চতুর্ভুজা হলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে তিনি বহুভুজাও।