আইনি লড়াইয়ে জেতা-হারার হিসেব থেকে বেরিয়ে অযোধ্যার ভ্রমণমূলক স্থানগুলি দেখে নিন এক নজরে
দীর্ঘ দুই দশকের আইনি লড়াই শেষে আযোধ্যা নিয়ে তাদের চূড়ান্ত রায় শুনিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই বিতর্কিত জমি 'রাম লল্লা'র বলে জানিয়ে দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।
দীর্ঘ দুই দশকের আইনি লড়াই শেষে আযোধ্যা নিয়ে তাদের চূড়ান্ত রায় শুনিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই বিতর্কিত জমি 'রাম লল্লা'র বলে জানিয়ে দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। কিন্তু শুধু বিতর্ক মানেই যে অযোধ্যা নয়, তা হয়তো অনেকেরই অজানা। আইনি লড়াইয়ের বাইরেও আপন সৌন্দর্য্যে বিকশিত উত্তরপ্রদেশের এই অঞ্চল। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক অযোধ্যার কিছু আকর্ষণীয় ভ্রমণমূলক স্থান।
রাম জন্মভূমি
অযোধ্যার যে জমি নিয়ে এই মুহূর্তে দেশজুড়ে বিতর্ক চরমে। যে মন্দির ঘিরে অশান্তি, তার ভিতরের নির্মাণ শৈলী ও সূক্ষ্ম পাথরের কাজ দেখে মুগ্ধ হতে হয়।
কনক ভবন
কনক ভবন বা সোন-কা-ঘর, অযোধ্যার অন্যতম জনপ্রিয় ধর্মীয় স্থল বা মন্দির। যেখানে রাজা রাম ও দেবী সীতা ও রামের তিন ভাইয়ের মূর্তির মাথায় সোনার মুকুট বসানো। মধ্যপ্রদেশের তেকামগড়ের রানি ভ্রিশভানু কুাভারী ১৮৯১ সালে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়। মন্দিরের স্থাপত্য শৈলী দৃষ্টিনন্দন।
নাগেশ্বরনাথ মন্দির
পুরান মতে, অযোধ্যার হৃদপীণ্ডে অবস্থিত এই মন্দির শ্রী রামচন্দ্রের পুত্র কুশ তৈরি করেছিলেন। কথিত আছে, পবিত্র সরযূ নদীতে স্নান করার সময় নিজের বাজুবন্ধ হারিয়ে ফেলেছিলেন কুশ। এক নাগ কন্যা সেই বাজুবন্ধ তুলে ধরেছিলেন। যিনি আবার কুশের প্রেমেও পড়ে গিয়েছিলেন। শিবের উপাসক ওই নাগ কন্যার জন্যই নাকি শ্রী রাম-তনয় এই স্থানে মন্দির নির্মাণ করেছিলেন বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস। এও বলা হয়, বিক্রমাদিত্যের রাজত্বে গোটা শহর ধ্বংস হয়ে গেলেও কেবল শিবের এই মন্দিরটি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল। শিবরাত্রিতে বড় উৎসব হয় নাগেশ্বরনাথ মন্দিরে।
হনুমান গরহি
দুর্গ সদৃশ এই মন্দির অযোধ্যা শহরের মধ্যভাগে অবস্থিত। পুরান মতে দশম শতকে নির্মিত এই হনুমান মন্দিরের মূলভাগে পৌঁছতে ৭৬টি সিঁড়ি অতিক্রম করতে হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই মন্দিরের আশেপাশে কোনও গুহায় বসে নাকি রাম জন্মভূমি বা রামকোটকে পাহারা দিতেন শ্রী হনুমান। মূল মন্দিরে মা অঞ্জনির মূর্তি। তাঁর পায়ের কাছে বসে পুত্র হনুমান।
মণি পর্বত
পুরান মতে, ৬৫ মিটার উচ্চ এই পাহাড়, গন্ধমাদন পর্বতের অংশ। মেঘনাদের বানে বিদ্ধ মৃতপ্রায় লক্ষ্মণের জন্য সঞ্জিবনী বুটিতে ভরা ওই পর্বত তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় হনুমানের হাত থেকে এই স্থানে কিছু পাথর খণ্ড ভেঙে পড়ে। সেটিই পরে পাহাড়ের আকার নেয় বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে মন্দির।
সরযূ নদী
উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের অন্যতম প্রাণ-ভোমরা সরযূ নদীর সঙ্গে জুড়ে আছে বেদ ও রামায়ণের বিভিন্ন কাহিনী। অযোধ্যার ধার দিয়ে বয়ে চলা এই নদীতে সব পাপ, অকল্যাণ ধূয়েমুছে সাফ হয়ে যায় বলে বিশ্বাস।
গুপ্তার ঘাট
পুরান মতে, সরয়ূ নদীর এই স্থানেই নাকি জল সমাধি নিয়েছিলেন ভগবান শ্রী রাম। উনিশ শতকে স্থানীয় রাজা দর্শন সিং ঘাটটি নতুন করে তৈরি করেন বলে ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়। ঘাটের ওপরে রয়েছে রাম-সীতার মন্দির।
পাশাপাশি বহু বেগম মকবরা, গুলাববারি, কিছাউছা শরিফের মতো মুসলিম শাসকদের হাতে নির্মিত স্থপতিগুলিও অযোধ্যাকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
ছবি সৌ: ইউপি টুরিজম ওয়েবসাইট