মমতাকে হিন্দুত্বের পাঠ পড়াতে সক্ষম বিজেপি! নন্দীগ্রামে সমীকরণ বদলাল ১৮০ ডিগ্রি
হিন্দুত্বের তাসেই নন্দীগ্রাম জিততে চান তিনি৷ আর তাই মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগের দিন চণ্ডীমন্ত্র পাঠ করে নিজেকে হিন্দুঘরের ব্রাক্ষ্মণ সন্তান হিসেবে নিজেকে 'প্রমাণ' করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আর এতেই কটাক্ষ বিজেপির গলায়। এদিন মমতাকে কটাক্ষ করে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং বলেন, শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজেপি হিন্দুত্বের পাঠ পড়াতে সক্ষম হল।
নেত্রীর দাবি, তিনি বাংলার মেয়ে
নেত্রীর দাবি, তিনি বাংলার মেয়ে৷ নন্দীগ্রামের মেয়ে৷ তিনি আপাতত ভাড়াবাড়িতে থাকলেও আগামীদিনে নন্দীগ্রামে থাকার জন্য প্রস্তুত ৷ এর জন্য বাড়িও তৈরি করবেন৷ তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর নন্দীগ্রামের প্রথম সভা থেকে ফের একবার ঘরের মেয়ের ইমেজ সামনে এনে ভোট প্রচার-ভোট ভিক্ষা মমতার৷ একইসঙ্গে ৭০-৩০ নয়, ১০০ শতাংশ হিন্দুত্বের তাসকেই সামনে রাখলেন তিনি৷ মানুষে মানুষে ভাগাভাগি নিয়ে বিজেপিকে নাম না করে কটাক্ষ করলেন৷ শিবরাত্রির দিন ইস্তাহার প্রকাশ করে ফের একবার হিন্দুত্বের বাজি মমতার মুখে৷
মমতার ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের উপর আব্বাসের থাবা
বঙ্গভোটে এবারের ছবিটা অন্যান্য বারের তুলনায় অনেকটাই আলাদা৷ এবারের নির্বাচনে বাংলার আকাশে ধর্মীয় মেরুকরণের কালো মেঘ৷ এতদিন পর্যন্ত বাংলার ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটের উপর একছত্র অধিকার ছিল মমতার৷ কিন্তু এখন আব্বাস নিজের দল গঠন করেছেন৷ বামেদের সঙ্গে জোট বেধে ভোটেও লড়বে৷ সেদিক থেকে অনেকেই মনে করছেন মমতার ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের একটা বড় অংশের উপর থাবা বসাতে পারেন সিদ্দিকিরা৷
চাপ রয়েছে হিন্দু ভোটারদের নিয়েও
শুধু ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টই নয়৷ চাপ রয়েছে হিন্দু ভোটারদের নিয়েও৷ মুখে কিছু না বললেও পদ্মশিবির যে আসলে টার্গেট করছে ৭০ শতাংশ হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের উপর, সে-কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না৷ পদ্ম-আব্বাসের জোড়া চাপ সামলাতে যে যথেষ্টই বেগ পেতে হচ্ছে তৃণমূল সুপ্রিমোকে তা, আজ নন্দীগ্রামের কথা থেকেই স্পষ্ট৷
মতার নজরে ১০০ শতাংশের দিকে
প্রার্থীতালিকা ঘোষণা হওয়ার পর আজ প্রথমবার নন্দীগ্রামে মমতা৷ আর সেই মঞ্চ থেকে তিনি যেন বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে ৩০ শতাংশ বা ৭০ শতাংশ নয়, তাঁর নজর ১০০ শতাংশের দিকে৷ তাঁর সরকার বাংলার প্রতিটি মানুষের কথা ভাবে৷ প্রতিটি মানুষের কথা বলে৷ এটাই যেন বারবার বুঝিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন তিনি৷ বললেন, 'অনেকেই ভাগাভাগির কথা বলতে আসবেন৷ কিন্ত আমি ৭০-৩০ বলব না৷ আমি বলব ১০০৷'
হিন্দু-মুসলিম সহাবস্থান
আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে গেলেন, নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র নয়, একমাত্র তাঁর হাত ধরেই সম্ভব হিন্দু-মুসলিম সহাবস্থান৷ তাঁর সঙ্গে যাতে কোনওভাবে হিন্দুকার্ড খেলার দুঃসাহস না দেখানো হয়, সেই কথাও আজ বিজেপিকে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি৷ কিছুটা শাসানির সুরেরই যেন অধিকারীদের বুঝিয়ে গেলেন, তিনিও হিন্দু ঘরের মেয়ে৷ বেশ কিছু দেবদেবীর পূজামন্ত্রও তাঁর মুখস্ত হবে দাবি করেন মমতা৷ নিজেকে প্রমাণ করতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে একনাগাড়ে বেশ কিছুক্ষণ মন্ত্রও উচ্চারণ করে গেলেন৷
সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী এখনও ঘোষণা হয়নি
নন্দীগ্রাম থেকে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী এখনও ঘোষণা হয়নি৷ প্রথমে শোনা যাচ্ছিল, নন্দীগ্রাম আসনটি সিদ্দিকীদের ছেড়ে দিয়েছে বামেরা৷ কিন্তু পরে শেষমুহূর্তে বিষয়টি চূড়ান্ত করা থেকে পিছিয়ে আসে সংযু্ক্ত মোর্চা৷ এই পরিস্থিতিতে আজকের নন্দীগ্রাম থেকে ধর্মনিরেপক্ষতার আড়ালে হিন্দুকার্ড খেলে কার্যত এক ঢিলেই বিজেপি ও আইএসএফকে বিদ্ধ করতে চাইছেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ সভা শেষে নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া মন্দিরে পুজোও দেন তিনি৷