শুধু একটি মেয়ের জন্য ৫৫ বছর ধরে রাতের ট্রেন থামে না এই স্টেশনে, কারণ জানলে শিউড়ে উঠবেন
একটি মেয়ের জন্য ৫৫ বছর ট্রেন থামেনি এই স্টেশনে, কারণ জানলে শিউড়ে উঠবেন
এই স্টেশন এলেই ট্রেনের জানলা-দরজা বন্ধ। স্টেশনের প্লাটফর্মের দিকে ফিরেও তাকাননি যাত্রীরা। কোনওরকমে চোখ বুজিয়ে স্টেশন পার করে দিলেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন সবাই। টানা ৫৫ বছর ধরে এই ধারা চলে আসছে। এই রেল স্টেশনে ৪২ বছর কোনও ট্রেন থামেনি। ২০০৯ সাল থেকে দিনের বেলা ট্রেন থামলেও, সন্ধ্যা নামার পর আজও ট্রেন থামে না।
৫৫ বছর ট্রেন থামেনি একটি মেয়ের জন্য
কিন্তু কেন এই স্টেশন কোনও ট্রেন দাঁড়ায় না? কেনই বা এই স্টেশন পার করার সময় ট্রেনের কামরার জানলা পর্যন্ত বন্ধ করে দেন যাত্রীরা? এর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে একটি মেয়ের গল্প। সেই গল্প শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়। কিন্তু জানেন কি কোনও সই স্টেশন, যেখানে ৫৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ট্রেন থামেনি?
সন্ধ্যা নামলেই আঁধারে ডুবে যায় স্টেশন
কোন স্টেশন পরে জানবেন। আগে শুনুন সেই মেয়ের গল্প, যার জন্য ৫৫ বছর ধরে সন্ধ্যা নামলেই আঁধারে ডুবে যায় স্টেশন। কোনও যাত্রী স্টেশনমুখো হওয়ার নাম করে না। ট্রেনের চালকও ট্রেন থামানোর সাহস করেন না। ১৯৬৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫৫ বছর ধরে এই স্টেশন খাঁ খাঁ করছে। দেখলেই গা ছমছম করে ওঠে।
সন্ধ্যা নামলেই স্টেশন দাপায় সেই মেয়ে
শোনা যায়, ওই রেল স্টেশনে নাকি এক মেয়ের ভূত রয়েছে। সন্ধ্যা নামলেই তাঁকে দেখা যায়। দেখা যায়, তাঁর ভুতুড়ে কাণ্ড-কারখানা। তাঁর ভয়ে কেউ আর স্টেশনমুখো হন না। সন্ধ্যা নামলেই নিঃঝুম স্টেশন। নিস্তব্ধ চারধার। গ্রামবাসীরা ভুলেও ওপথ মাড়ান না। সন্ধ্যের পর স্টেশন চত্বর ঘুটঘুটে অন্ধকার।
স্টেশনটি রয়েছে এই বাংলাতেই, কেথায় সেটা
এই স্টেশনটির অবস্থান আমাদের বাংলাতেই। পুরুলিয়া জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত বেগুনকোদর স্টেশন। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়গ্রামকে জুড়েছে যে রেল লাইন, সেই লাইনের পর বেগুনকোদর স্টেশনটি। স্টেশনটি ৪২ বছর ধরে বন্ধ ছিল একটি মেয়ের কারণে। এখন তা চালু হলেও সন্ধ্যার পর স্টেশনটিতে কোনও ট্রেন থামে না সেই মেয়েটির কারণেই।
৫৫ বছর ধরে ট্রেনের সঙ্গে ছুটে চলেছে সেই মেয়ে
গল্পটি ১৯৬৭ সালের। বেগুনকোদর স্টেশনে এক রেলকর্মী এক মহিলা ভূতকে দেখেছিল প্লাটফর্মে। রাতের অন্ধকারে ট্রেনের আলোয় হঠাৎ তিনি দেখেন, সাদা শাড়ি পরা একটি মেয়ে ট্রেনের সঙ্গে সঙ্গে ছুটছে। তারপরই হঠাৎ মিলিয়ে গেল সে। ভয়ে আড়ষ্ট কোনওরকমে বাসায় ফিরেছিলেন ওই রেলকর্মী। পরের দিনই তিনি স্টেশন মাস্টার-সহ সবাইকে জানিয়েছিলেন বিষয়টি।
রেলকর্মীর কথার সত্যতা নিরূপণে স্টেশন মাস্টার
রেলকর্মীর কাছ থেকে ওই কথা শুনে প্রথমে উপেক্ষা করে উড়িয়ে দিলেও, স্টেশন মাস্টারের মনে খটকা লেগেছিল। তিনি ভেবেছিলেন, এতদিন তো এমন কিছু শোনা যায়নি। কেউ কিছু বলেনওনি। হঠাৎ করে ওই কর্মী কেনই বা বললেন ভুতের কথা। তা একবার খতিয়ে দেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন। সেইমতো রেলকর্মীর কথার সত্যতা নিরূপণের পরিকল্পনা করেন স্টেশন মাস্টার।
রাতে ট্রেন লাইনের দিকে তাকিয়ে শিউড়ে ওঠেন
বেগুনকোদর স্টেশনের বাইরে একটি ছোট টিকিট কাউন্টার রয়েছে। তার পাশে রয়েছে স্টেশন মাস্টারের কোয়ার্টার। রেলকর্মীর মুখে ভূতের কথা শোনার পর স্টেশন মাস্টার কোয়ার্টার থেকেই লক্ষ্য রেখেছিলেন ট্রেল লাইনের দিকে। পরদিন রাতেই ট্রেন আসার সময়ই তিনি লাইনের দিকে তাকিয়ে শিউড়ে ওঠেন।
পরদিন মেয়েটির ‘কীর্তি’ দেখে অবাক স্টেশন মাস্টার
সাহসের সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে স্টেশন মাস্টার প্রথম দিন দেখেছিলেন মেয়েটি ট্রেনের সঙ্গে ছুটছে। পরদিনও ফের বুকে সাহস নিয়ে আরও ভালো করে দেখতে ট্রেন আসার আগেই রেললাইনের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। এবার তিনি যা দেখলেন, তাতে আরও বিস্মিত হতে হয়। এবার তিনি দেখলেন, মেয়েটি ট্রেনের গতিতে ছুটছে। একটা সময় সে ট্রেনকেও টপকে যায়। তারপর বিলীন হয়ে গেল মেয়েটি।
মেয়ে ভূতের গল্পে বন্ধ হয়ে যায় বাংলার ওই স্টেশন
ওইদিনের পর স্টেশন মাস্টার অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। তারপরই ভুতুড়ে স্টেশনের গল্প লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। নতুন স্টেশন মাস্টারও ভুতুড়ে কাণ্ড দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। মহিলার ভূতের উপদ্রবে বন্ধ হয়ে যায় স্টেশনটি। রেল-বুকে কারণ হিসেবে ওই ভূতের কথাও উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয়রাও লক্ষ্য করেন মহিলা ভূতের তাণ্ডব
সেই থেকেই বেগুনকোদর স্টেশন নিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তা আজও অব্যাহত। ভূতুড়ে স্টেশনের ওই কাহিনি শোনার পর আর কেউ সাহস করেননি স্টেশনে চাকরি নিতে। যাত্রীরাও স্টেশনের পথ মাড়াতেন না। স্থানীয় লোকজনেরাও নাকি ওই মেয়ে ভূতকে ট্রেনের সঙ্গে সঙ্গে ছুটতে দেখেছিলেন এবং ওই মেয়ের ভূতকে প্লাটফর্মে নাচতেও দেখেছেন অনেকে। আবার ওই মহিলাকে রেল স্টেশনের সামনে গাছেও বসে থাকতে দেখেছেন অনেকে। এমন অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড কারখানায় পরিত্যজ স্টেশন হয়ে যায় বেগুনকোদর।
কে ওই মহিলা, যিনি এক ছুটে হার মানান ট্রেনকেও
যাঁকে ট্রেন এলেই ছুটতে দেখা যায় তিনি কে? কে ওই মহিলা, যিনি ট্রেনের সঙ্গে ছুটে এক লহমায় ট্রেনকেও টপকে যাওয়ার ক্ষমতা ধরেন। শোনা যায়, ওই স্টেশনেই ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ওই মহিলার। চালু ট্রেনের পিছনে পিছনে ছুটে ট্রেনে উঠতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। তাঁর আত্মাই ঘুরে বেড়ায় স্টেশনে। সেই ভূতের কারণেই এই স্টেশন এড়িয়ে চলেন যাত্রীরা, ট্রেনও থামে না। রেলও বাতিলের খাতায় ফেলে দেন এই স্টেশনকে।
৪২ বছর পর বন্ধ স্টেশন খুললেও সন্ধ্যান থামে না ট্রেন
বেগুনকোদর রেলওয়ে স্টেশন চালু হয় ১৯৬০ সালে। কিন্তু সাত বছর পরই এক মহিলা ভূতের তাণ্ডবে বন্ধ করে দিতে হয়। এরপর ২০০৭ সালে গ্রামবাসীরা তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠি লিখে স্টেশনটি চালু করার আবেদন জানান। তার ২ বছর পর অর্থাৎ ২০০৯-এ খুলে দেওয়া হয় স্টেশনটি। ৪২ বছর বন্ধ স্টেশনটি চালু। সেই থেকে স্টেশনে ট্রেন থামে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। তারপর ফের অন্ধকারে ডুবে যায় বেগুনকোদর। এখনও সেই ধারা অব্যাহত।