গেরুয়া শিবিরে ধস নামাতে নয়া কৌশল! তৃণমূলের পদক্ষেপে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি
গেরুয়া শিবিরে ধস নামাতে নয়া কৌশল! তৃণমূলের পদক্ষেপে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বাংলাজুড়ে গেরুয়া শিবিরে ধস নেমে চলেছে। শুধু উপরতলায় নয়, বিজেপি ধসতে শুরু করেছে নিচুতলা থেকে। তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে বিজেপি। বিজেপির চার জন বিধায়ক দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছে, তাতে যতটা না চিন্তিত গেরুয়া শিবিরে, তার থেকেও চিন্তিত বিজেপির নিচুতলায় ধস নামতে শুরু করায়।
ধীরে চলো পদক্ষেপে বিজেপিতে ধস নামাচ্ছে তৃণমূল
একুশের নির্বাচন শেষে বিজেপিতে প্রথম ধাক্কাটা আসে মুকুল রায়ের ঘরওয়াপসিতে। মুকুল রায় সপুত্র বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তারপর থেকেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরার আবেদনের পাহাড় জমতে শুরু করে। কিন্তু তৃণমূল উপরস্তরের কোনও নেতা বা বিধায়ককে সেভাবে এন্ট্রি দিতে চায়নি দলে। তারা ধীরে চলো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বিজেপিতে ধস নামাতে।
বিজেপির নিচুতলার নেতা-কর্মীরা যোগদানে সিঁদুরে মেঘ
বিজেপির উপরতলায় ধস না নামলেও নিচে তলায় ভাঙতে শুরু করেছিল তারপর থেকেই। বিজেপির নিচুতলার নেতা-কর্মীরা যোগদান করছিলেন। এরই মধ্যে তৃণমূল তাদের দরজা একটু ফাঁক করতেই আরও তিন বিধায়ক এন্ট্রি নিয়েছে তৃণমূলে। দক্ষিণবঙ্গের দুই ও উত্তরবঙ্গের এক বিধায়ক তৃণমূলে ফিরেছেন। আরও বেশ কয়েকজনকে নিয়ে জল্পনা চলছে।
অর্জুন-গড়ে দফায় দফায় ভাঙন, বিজেপি ছেড়ে যোগ তৃণমূলে
বিজেপিতে ভাঙন শুধু একটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। বিধায়ক ছাড়াও বিজেপির সংগঠনের ভিত নড়ে যেতে শুরু করেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ইতিমধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ভিড়ছেন বহু। অর্জুন সিংয়ের গড় ভাটপাড়ায় তিন কাউন্সিলর ও তাঁদের অনুগামীরা যোগদান করেন তৃণমূলে। টিটাগড়ে প্রায় দু-হাজার বিজেপির নিচতুলার নেতা ও কর্মীরা যোগ দেন তৃণমূলে।
বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য, প্রাক্তন যুবমোর্চার সভাপতি তৃণমূলে
এরপর মতুয়া-গড়ে বিজেপিতে ভাঙন ধরিয়ে দিতে সমর্থ হয় তৃণমূল। পঞ্চায়েত সদস্য, বিজেপির প্রাক্তন যুবমোর্চার সভাপতি তৃণমূল যোগ দেন। তাঁদের সঙ্গে পাঁচ শতাধিক কর্মীও যোগ দেন তৃণমূলে। এর ফলে ফুলসরার বিজেপি কার্যালয়ও তৃণমূলের দখলে চলে আসে। মতুয়া-গড়ে বিজেপির উপরতলাতেও চলছে গোষ্ঠীকোন্দল। ফলে বিজেপির পদাধিকারীরাও যে কোনও মুহূর্তে দল ছাড়তে পারেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মতুয়া-গড়ে বিজেপির ভাঙন ঠেকানো বৈঠকে গরহাজিরা
মতুয়া-গড়ে বিজেপির ভাঙন ঠেকাতে সম্প্রতি বৈঠক করেছিল নেতৃত্ব। সেই বৈঠকে জেলা নেতৃত্বের অনেকেই গরহাজির ছিলেন। অনুপস্থিত ছিলেন মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ দুলাল বর-সহ অনেকেই। এমনকী সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে গোষ্ঠীকোন্দলে নেই বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতিও। এর ফলে মতুয়া-গড়ে বিজেপির আরও বড় ভাঙন সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিজেপি ছেড়ে পুরনো ঘরে ফিরেছেন গোসাবার প্রার্থী
এদিক দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও বিজেপিতে ধস নামে। বিজেপির শক্তিক্ষয় হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা বিধানসভায়। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শ্যামাপদ চক্রবর্তীর হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা নেন গোসাবা বিধানসভায় বিজেপির প্রার্থী হওয়া বরুণ প্রমাণিক। বিজেপি ছেড়ে পুরনো ঘরে ফিরে খুশি বরুণ প্রামাণিকও। তিনি বলেন, তৃণমূলে ফিরে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। তৃণমূল আমাকে আবার ঠাঁই দিয়েছে, আমি কৃতজ্ঞ।
মুকুল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসার পর জল্পনায় রাজীব
মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসার পর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে জোর জল্পনা তৈরি হয়েছিল। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলে ফেরার জন্য মুখিয়ে ছিলেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বহুবার বিজেপির কঠোর সমালোচনাও করেছিলেন। কিন্তু তৃণমূল তাঁকে এখনও দলে ঠাঁই দেয়নি। এখনও রাজীবকে নিয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে দলের অন্দরে ঝড়
একুশের নির্বাচনের আগে যাঁরা দল ছেড়েছিল, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ফিরেছেন। কিন্তু রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে যেভাবে দলের অন্দরে ঝড় উঠেছিল, তৃণমূল সেই ঝড় স্তিমিত হওয়ার অপেক্ষা করছে। তৃণমূল চাইছে না, তাঁদের দল ছেড়ে বিজেপিতে চলে গিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের ফিরিয়ে এনে দলে অশান্তি বাড়াতে। দলের নিচতুতলার কর্মী ও নেতৃত্ব যদি মেনে নেয়, তবে তাঁদেরকে ফেরাবে তৃণমূল। অন্যথায় দলত্যাগীদের ফেরাবে না।
ফিরিয়ে যাতে না অস্বস্তিতে পড়তে হয় তৃণমূলকে, তাই...
রাজীবের পাশাপাশি সোনালি গুহ, দীপেন্দু বিশ্বাস, সরলা মুর্মু, অমল আচার্যরাও তৃণমূলে ফিরতে আবেদন করেছিল। সেই আবেদনও এখনও মান্যতা পায়নি। সর্বক্ষেত্রেই এলাকার সেন্টিমেন্ট দেখতে চাইছে তৃণমূল। তাঁদের দলত্যাগে পূর্বে একবার তৃণমূলকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল। এখন তাঁদের ফিরিয়ে যাতে না অস্বস্তিতে পড়তে হয়, তা নিশ্চিত করতে চাইছে তৃণমূল।