একুশে শিক্ষা নেয়নি দল, ২০১৯ ফেরানোর ‘বার্তা’ মোদী-শাহকে লেখা সায়ন্তনের চিঠিতে
একুশে শিক্ষা নেয়নি দল, ২০১৯ ফেরানোর ‘বার্তা’ মোদী-শাহকে লেখা সায়ন্তনের চিঠিতে
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে শোচনীয় হারের পর শিক্ষা নেয়নি দল। তাই একের পর এক হার হজম করতে হচ্ছে। তারপরও বঙ্গ বিজেপির কোনও হেলদোল নেই। এই পরিস্থিতি থেকে আলোয় ফেরার জন্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে চিঠি লিখে ২০১৯ ফেরানোর আবেদন করলেন সায়ন্তন বসু। তিনি লেখেন, একমাত্র ২০১৯ মডেল পারে বিজেপিকে ফের আলোয় ফেরাতে।
নতুনদের হাতেই ব্যাটন, আদিরা ব্রাত্য
একুশের পর থেকে বঙ্গ বিজেপিতেত আদি-নব্য দ্বন্দ্ব সাংঘাতিক রূপ নিয়েছে। দলের আদিকর্মীরা ব্রাত্য হয়েছিলেন একুশের ভোটের আগেই। আর নেতৃত্বকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ভোটের পর। দিলীপ ঘোষের জায়গায় সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর থেকে নতুনদের হাতেই ব্যাটন। আদিরা থেকে গিয়েছেন ব্রাত্যের দলে। আজ তার মাশুল গুণতে হচ্ছে।
ছত্রে ছত্রে বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বকে নিশানা
এই অবস্থায় সেই ব্রাত্যদলের একজন সায়ন্তন বসু, য্নি দিলীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন রাজ্য রাজনীতিতে, তিনি চেঠি লিখলেন মোদী-শাহ-নাড্ডাদের। তাঁর লেখা চিঠিতে তিনি ছত্রে ছত্রে বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বকে নিশানা করেছেন। সমালোচনা করেছেন আদি নেতাদের ব্রাত্য করে রাখায়। বর্তমান বঙ্গ নেতৃত্বের বর্তমান স্ট্যাটাস জানিয়ে তাই কলম ধরেছেন সায়ন্তন।
১৯৮০ সাল থেকে ২০১৯-এর নেতারা ব্রাত্য
সায়ন্তন কোনও রাখঢাক না করেন লিখেছেন, ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত যাঁরা দলের জন্য প্রাণপাত করেছেন, বর্তমান তাঁদের ঠাঁই নেই। তাঁরা কোনও গুরুত্ব পাচ্ছেন না পার্টিতে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যাঁরা অন্য দল থেকে বিজেপিতে এসেছেন তাঁদেরকেই এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি নাম না করলেও তৃণমূল থেকে আসা নেতাদেরকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন।
ভুল পথে বঙ্গ বিজেপি, ২০১৯-এর মডেলই বাঁচাতে পারে
'প্রেজেন্ট স্ট্যাটাস অফ পার্টি অ্যাফেয়ার্স ইন দ্য স্টেট অফ ওয়েস্টবেঙ্গল' শীর্ষক চিঠিতে সায়ন্তন বিজেপির উত্তরণের পথ বাতলে বলেছেন, বিজেপিকে আবার তৃণমূলের প্রধান বিকল্প হয়ে উঠতে গেলে ২০১৯-এর মডেল ফিরিয়ে আনতে হবে। এই মর্মে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে আবেদন জানিয়েছেন। অভিযোগ করেছেন, বঙ্গ বিজেপির বর্তমান নেতৃত্ব সঠিক পথে চলছে না।
হারের পরও বঙ্গ বিজেপি এতটুকু শোধরায়নি
সায়ন্তন বসু তাঁর চিঠিতে সাফ করে দিয়েছেন, আদি নেতা-কর্মীদের ব্রাত্য রাখাই বিজেপির হারের কারণ। কিন্তু বিজেপির হারের কারণ বুঝেও নেতৃত্ব চুপ করে বসে রয়েছে। এত হারের পরও বঙ্গ বিজেপি এতটুকু শোধরায়নি। তাই আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের ফল নিয়েও চিন্তা থাকছে। এক্ষেত্রে তিনি মনে করছেন, বিজেপি বামেদের থেকেও খারাপ ফল করতে পারে।
দল ভীষণরকম সোশ্যাল মিডিয়ানির্ভর, পথে নেই
সায়ন্তনের কথায়, দল ভীষণরকম সোশ্যাল মিডিয়ানির্ভর। দলের কিছু নেতা ইউটিউব ও ফেসবুককে মাধ্যম করে মিথ্যা ভাবনা প্রচার করছেন। তার ফলে দলের প্রভূত ক্ষতি হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে, বিজেপি লড়াই থেকে ছিটকে যাবে। পঞ্চায়েত ভোটেই হয়তো দেখা যাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লড়াই হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের মধ্যে। কেননা বামেরা পথে নেমে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে তৃণমূলের দুর্নীতি ইস্যুতে।
বঙ্গ বিজেপি বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাদের দল, ধারণা
বাংলায় ফের তৃণমূলের বিকল্প হতে গেলে বেশ কিছু ধারণার অবসান ঘটাতে হবে বলে পরামর্শ সায়ন্তনের। সায়ন্তনের কথায়, বাংলায় একটা ধারণা তৈরি হয়েছে, অনেকে বিজেপিতে এসেছেন সিবিআই-ইডি থেকে বাঁচতে। এই ধারণা বিজেপির প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করছে। শুধু তাই নয়, মানুষের মধ্যে এমন ধারণাও জন্মেছে যে, বঙ্গ বিজেপি আদতে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাদের দল। এই অবস্থা থেকে দলকে বের করে আনতে ২০১৯ সালের পলিসি ফিরিয়ে আনতে হবে।
সুকান্ত-শুভেন্দুদের বিজেপির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দাবি সায়ন্তনের, চিঠি লিখলেন মোদী-শাহকে