হেমন্ত-সন্ধ্যা জুটি উত্তম-সুচিত্রার মতোই, বাংলা গানের জগতে তৈরি হয়েছিল সুরের মায়াজাল
উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন যেমন জুটি হিসেবে বাংলা সিনেমায় মায়াজাল বিছিয়েছিলেন, তেমনই হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় জুটি বাংলা সঙ্গীজগতকে সুরমূর্ছনায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন।
উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন যেমন জুটি হিসেবে বাংলা সিনেমায় মায়াজাল বিছিয়েছিলেন, তেমনই হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় জুটি বাংলা সঙ্গীজগতকে সুরমূর্ছনায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সুরের ঝরনা ধারা থেকে আজও বাঙালি বেরিয়ে আসতে পারেনি। একদিকে সুচিত্রা-উত্তম, অন্যদিকে সন্ধ্যা-হেমন্তের যুগলবন্দিতে যে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল, তা বাংলা সংস্কৃতি জগতে অমর অক্ষরে লেখা থাকবে চিরকাল।
চিরদিনের জুটি তাঁরা। চিরিদিনের গান রেখে তাঁরা চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে। রয়ে গিয়েছে তাঁদের অমর সৃষ্টি। সেই সৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা অমর হয়ে থাকবেন সারা জীবন। উত্তম কুমার ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বহুদিন আগে চলে গিয়েছেন ছুটির দেশে। সুচিত্রা সেন প্রায় সাড়ে তিন দশক অন্তরালে থেকে ২০১৪ সালে পরলোকে গমন করেছেন। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ও চললেন সেই অজানা দেশে।
বাংলা সঙ্গীত জগতে তিনি ছিলেন মায়ের মতো। বাংলার সঙ্গীত জগত আজ মাতৃহারা হল। বিংশ শতাব্দীর চারের দশক থেকে তিনি তাঁর কণ্ঠের জাদুতে মাতিয়ে রেখেছিলেন সুরের জগতকে। গানে ভুবন ভরিয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন। আর তাঁকে কেউ ডাকবেন না সেই মধুনামে। প্রায় ৭৫ বছরের সঙ্গীত জীবনে তিনি যে সৃষ্টি রেখে গিয়েছেন তা তো লিখে শেষ করা যাবে না।
তবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রশিক্ষিত হয়ে তিনি বাংলা আধুনিক ও বাংলা সিনেমার গানকে এক অন্য মার্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। শুধু বাংলা নয় ১৭টি হিন্দি চলচ্চিত্রে তিনি নেপথ্য গায়িকা হিসেবে গান গেয়েছেন। ১৯৫২ সালে তিনি ফিরে আসেন বাংলায়। তারপরই শুরু হয় হেমন্ত-সন্ধ্যা জুটির পথ চলা। উত্তম-সুচিত্রার লিপে হেমন্ত-সন্ধ্যার গান ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। বাঙালির মনের মণিকোঠায় চিরকালীন স্থান করে নিয়েছিলেন তাঁরা।
বাংলা সঙ্গীত জগতে জনপ্রিয় জুটি হয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বাংলা গান ও চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে হেমন্ত-সন্ধ্যা ও উত্তর-সুচিত্রা নাম উচ্চারিত হত একইসঙ্গে। অনুপম ঘটক থেকে শুরু করে রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে যেমন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান এক আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছিল, তা পূর্ণতা পেয়েছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়-সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় জুটিতে।
হেমন্ত-সন্ধ্যার দ্বৈত-কণ্ঠে এই পথ য়দি না শেষ হয়, রাগ যে তোমার মিষ্টি আরও, আজ কৃষ্ণচূড়ার আবীর নিয়ে, ওরে বাতাস ফুল শাখাতে দিসনে আজি দোল রে, ওই দুষ্টু চোখের মিষ্টি হাসি, এই ছন্দে ছন্দে ভরা গন্ধে গন্ধে ঝরা আজও সমান জনপ্রিয়। আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরেও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় অজস্র গান গেয়েছেন, কেন এ হৃদয় চঞ্চল হল, কী মিষ্টি দেখো মিষ্টি এ সকাল, আজ চঞ্চল মন যদি, প্রভূজি তুমি দাও দর্শন, তুমি কত সুন্দর, তির বেঁধা পাখি আর গাইবে না গান- এমন অজস্র গান গেয়েছেন তিনি।
এছাড়া আমি স্বপ্নে তোমায় দেখেছি, কে তুমি আমারে ডাকো, গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু, এ শুধু গানের দিন, ঘুম ঘুম চাঁদ, এ মধুরাত শুধু ফুল পাপিয়ার, তব বিজয় মুকুট আজকে দেখি, কিছুক্ষণ আরও না রহিতে কাছে, আর ডেকোনা এই মধু নামে, প্রেম তো জীবনে এক বারই আসে হায়, মধু মালতী ডাকে আয়, ওগো মোর গীতিময়.- এমন নানা কালজয়ী গান তিনি উপহার দিয়ে গিয়েছেন। তাঁর স্ব্রর্ণ কণ্ঠে আজও শিহরিত হয় বাঙালি আবেগ।