ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি বড় বালাই! বাবরি মামলা রায়দানের পর চুপ মোদী, মুখ খুললেন না মমতাও
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলার রায়দানের দিকে নজর ছিল সারা দেশের। আর এদিন সেই রায় আসতেই বিভিন্ন স্তর থেকে আসতে থাকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া। বিরোধীরা এই রায়কে বিচার ব্যবস্থার পরিহাস বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। অপর দিকে বিজেপির বক্তব্য, বিজেপির বিশ্বাস এবং রাম জন্মভূমি আন্দোলনের অঙ্গীকার প্রতিষ্ঠিত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করলেন না
তবে এই রায় দানের বেশ কয়েক ঘণ্টা পরও দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য বা টুইট করেননি। প্রধানমন্ত্রীর এহেন মৌনব্রত পালন অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তবে কী এটা অপরাধী মনোভাবেরই প্রতিফলন। নাকি অযথা রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছোড়ি থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা মাত্র। তাছাড়া বঙ্গ রাজনীতিতে বিজেপি অনেক জায়গাতেই মুসলিমদের দলে নিয়ে মমতাকে ধাক্কা দিয়েছে। বীরভূমের মতো এলাকাতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভের জেরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে বহু সংখ্যালঘু। তাছাড়া বিহার নির্বাচনেও সংখ্যালঘু ভোট একটি বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে।
মুখে কুলুপ এঁটেছেন প্রায় সবাই
এর আগে যখন ৫ অগাস্ট অযোধ্যায় গিয়ে রাম মন্দিরের ভূমি পুজো করেন প্রধানমন্ত্রী, তখন সেটি নিয়ে বিরোধীদের তরফে বেশ কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। তবে এবার এখনও পর্যন্ত এই রায় নিয়ে জাতীয় স্তরে সেভাবে কেউই মুখ খোলেনি। কংগ্রেস শুধু মৃদু স্বরে একবার বলেছে যে এই রায় সু্প্রিমকোর্টের পর্যবেক্ষণের পরিপন্থী। তবে বিজেপির বিরুদ্ধে যে সুরে তারা আক্রমণ শানায়, তা দেখা যায়নি। এর পিছনে মূল কারণ হিসাবে অনেকেই দেখছে হিন্দুত্ববাদী ভাবাবেগকে আহত না করার একটি চেষ্টা। কারণ রাম মন্দির ইস্যু থেকেই কংগ্রেস সহ সব রাজনৈতিক দলই নরম হিন্দুত্ব লাইনে হেঁটেছে।
মুখ খোলেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও
এদিকে এদিনের রায় নিয়ে মুখ খোলেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বাংলায় এই রায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন একাধিক বিরোধী নেতা। তবে বিজেপিকে আক্রমণ করার এহেন সূবর্ণ সুযোগ মমতা কাজে লাগাচ্ছেন না। এর পিছনেও নরম হিন্দুত্ব লাইনে হাঁটার বিষয়টি উঠে আসছে। আসন্ন নির্বাচনের আগে হিন্দুত্ববাদী ভোটারদের মন জয় করতে তৃণমূল পুরোহিত ভাতা চালু করেছে। তাছাড়া রাম মন্দির রায়ের পরও সদার্থক বার্তা দিয়েছিলেন মমতা। তবে এবারে তিনি পুরো চুপ।
কেন চুপ থাকার সিদ্ধান্ত মমতার?
এই রায়কে স্বাগত জানালে মমতা নিজের মতাদর্শের পরিপন্থী হয়ে বলবেন। আবার বিরোধিতা করলে তা হতে পারে হিন্দু ভাবাবেগগকে আহত করারর শামিল। এই উভয় সংকটে পড়ে চুপ থাকার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী এখও পর্যন্ত তৃণমূলের কোনও সামনের সারির নেতাও এটা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
আডবাণীর সেই প্রাসঙ্গিকতা আর নেই
হয়ত এখনকার জমানাতে বা বর্তমান রাজনীতিতে আডবাণীর সেই প্রাসঙ্গিকতা আর নেই। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর উত্থানের কারণে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরে আসেন আডবাণী। সংসদীয় রাজনীতিতে ধীরে ধীরে হয়ে পড়েন অপ্রাসঙ্গিক। তবে আজ বাবরি ধ্বংস মামলার রায় প্রকাশ হতেই ফের লাইমলাইটে আসেন তিনি। উল্লেখ্য, এই মামলার হাত ধরেই মোটামুটি বিজেপি-র উত্থান ঘটিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী।
সিবিআই বিশেষ আদালত যা বলল
এদিন সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক রায় ঘোষণার সময় বলেছিলেন, 'বাবরি মসজিদ ধ্বংস পূর্ব-পরিকল্পিত নয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ নেই। সিবিআই-এর পেশ করা ভিডিও এবং অডিওর সত্যতা যাচাই করা যায়নি। যারা গম্বুজের চূড়ায় উঠেছিল, তারা সমাজ-বিরোধী ছিল। তবে সভাস্থলে নেতাদের দেওয়া বক্তৃতার অডিও স্পষ্ট নয়।'
বিজেপিতে উৎসবের আবহাওয়া
এরপরই বিজেপির তাবড় সব নেতারা এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে টুইট করেন। জেপি নাড্ডা, যোগী আদিত্যনাথ, রাজনাথ সিং সহ একাধইক নেতা সত্যের জন বলে আখ্যা দেন এই রায়কে। তবে এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস জাতীয় স্তরে কোনও মন্তব্য করেনি। তারা বরং হাথরাস কাণ্ড এবং কৃষি আইন নিয়ে নিয়ে বিজেপিকে বিঁধতে ব্যস্ত। তবে রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডার পথ যে শিফ্ট হয়েছে তা বুঝেছেন সবাই। তবুও বাবরি মামলার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী চুপ। বিরোধীরাও চুপ।
২৮ বছরের দীর্ঘ প্রতিক্ষা, শেষ পর্যন্ত বাবরি মামলায় শাপমুক্ত লৌহপুরুষ লালকৃষ্ণ আডবাণী!