বিদেশের অধিকাংশ পুজোর প্রতিমার বরাত বাতিল, বিপুল ক্ষতির মুখে কুমোরটুলির শিল্পীরা
বিদেশের অধিকাংশ পুজোর প্রতিমার বরাত বাতিল, বিপুল ক্ষতির মুখে কুমোরটুলির শিল্পীরা
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জেরে গোটা বিশ্বের অবস্থা খুবই শোচনীয়। সংক্রমণের পাশাপাশি দেশগুলির অর্থনৈতিক হালও খুবই করুণ। এরকম অবস্থায় বাঙালির শ্রেষ্ঠ দুর্গোৎসবও এখন প্রশ্নের মুখে। এরকম পরিস্থিতিতে কুমোরটুলির প্রতিমা শিল্পীদের মাথায়ও হাত পড়েছে।
উত্তর কলকাতার প্রাণকেন্দ্র তথা মূর্তি তৈরির আখড়া কুমোরটুলির বহু মৃৎশিল্পীরাই জানিয়েছেন যে বিদেশের বহু দুর্গা পুজো কমিটিরা তাঁদের জানিয়েছে যে এ বছর তারা দুর্গাপুজো করবে না কোভিড–১৯ মহামারির কারণে, যার ফলে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রতিমা শিল্পীরা। সোমবার কুমরোটুলির পক্ষ থেকে জানানো হয় যে শেষ মুহূর্তে এসে পুজো কমিটিরা তাদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
আমেরিকার তিনটি প্রতিমার বরাত বাতিল
প্রদ্যুত পালের হাতে তৈরি আমেরিকার জন্য তিনটি দুর্গা প্রতিমার বরাত বাতিল করে দেওয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য দুই পুজো কমিটি জানিয়েছে যে ফাইবারগ্লাসের ওই প্রতিমাকে যথাযথভাবে রেখে দেওয়া হোক, তারা আশা করছে আগামী বছর তারা পুজো করতে পারবে, তখন এই মূর্তি কাজে লাগবে। প্রদ্যুত পাল বলেন, ‘এ বছর আমেরিকার জন্য মোট পাঁচটি ফাইবারগ্লাসের মূর্তি গড়েছিলাম। কিন্তু পাঁচটি পুজো কমিটি জানিয়ে দিয়েছে যে এ বছরের অক্টোবরে তারা পুজো করবে না। যদিও তাদের মধ্যে দু'জন পরের বছরের পুজোর জন্য দু'টি প্রতিমা রেখে দিতে বলেছে।'
বাতিল হচ্ছে বিদেশের পুজোর প্রতিমার বরাত
শিল্পী বলেন, ‘আমরা প্রচণ্ডভাবে আশা করে আছি যে অন্তত কিছু সময় পর আমেরিকার পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাক, পুজো এখনও বেশ কিছুমাস পর রয়েছে, যাতে আংশিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারি আমরা। তবে মনে হচ্ছে বিদেশের জন্য তৈরি করা প্রতিমাগুলি এ বছর বিক্রি না হয়েই থাকবে।' তিনি জানিয়েছেন এ মাসের শেষের দিকে সব প্রতিমাগুলি বিদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কুমারটুলি মূর্তিশিল্পী সংগঠনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন আমেরিকা, দুবাই, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ব্রিটেনের জন্য প্রায় ২০০টি দুর্গাপ্রতিমা পাঠানো হয়। কিন্তু এ বছর পাঁচটির বেশি প্রতিমা তৈরির বরাত মেলেনি। কুমোরটুলির আর এক জনপ্রিয় শিল্পী মিন্টু পাল জানিয়েছেন গত সাত বছর ধরে তাঁর থেকে ব্রিটেনের এক পুজো কমিটি প্রতিমা নেয়, কিন্তু এ বছর ওই দেশের পরিস্থিতি ঠিক নয় তাই তারা পুজো করছে না বলে সম্প্রতি তাঁকে জানিয়ে দিয়েছে। মিন্টু পাল বলেন, ‘লকডাউন শুরু হওয়ার আগেই আমার প্রতিমা গড়া হয়ে গিয়েছিল, এখন আমায় বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হল।' প্রদ্যুত পাল ও মিন্টু পাল উভয়ই ফাইবারগ্লাসের প্রতিমা অর্ধ-সমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, কারণ শহরের পুজো কমিটিরা সকলেই মাটির প্রতিমা চায়। অন্য এক শিল্পী নবীন পাল জানিয়েছেন যে তাঁর কাছেও জার্মানি ও ব্রিটেন থেকে প্রতিমার বরাত এসেছে, কিন্তু মার্চের শেষ সপ্তাহে পুজো কমিটিরা জানিয়ে দিয়েছে যে তারা এ বছর পুজো করবে না। নবীন পাল বলেন, ‘তারা যদিও কোনও কারণ জানায়নি। কিন্তু সকলেই জানে করোনা কিভাবে গোটা বিশ্বকে গ্রাস করে নিয়েছে।'
শহরের পুজোর ওপরই ভরসা কুমোরটুলির
প্রতিমা শিল্পীরা এখন আশা করছে কোভিড-১৯ মহামারির জন্য যাতে অন্তত শহরের পুজোগুলি বাতিল না করা হয়। প্রদ্যুত পাল বলেন, ‘লকডাউনের আগে বেশ বড় একটি দুর্গা পুজো কমিটি তাদের প্রথাগত ঐতিহ্য অনুযায়ী মৌখিকভাবে বড় মূর্তির জন্য চুক্তি করেছিল। তারা কথা দিয়েছিল যে ১৫ দিনের মধ্যে এই চুক্তি পাকা করবে। কিন্তু এখন তারা জানিয়েছে যে তারা অপেক্ষা করবে কোনদিকে পরিস্থিতি যাচ্ছে, তারপরই ওই মূর্তি রাখবে না ছোট মূর্তির বরাত দেবে তা জানাবে।' স্থানীয় এক পুজো কমিটি জানিয়েছে যে পরিস্থিতির ওপর বিচার করেই পুজো হবে কি হবে না তা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কুমোরটুলির আধিকারিক বলেন, ‘আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ১৫ শতাংশ পুজো কমিটি তাদের প্রতিমার বরাত দিয়ে দিয়েছে, যেটা স্বাভাবিক সময় ৫০ শতাংশ থাকে।'
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নতুন উপায় বামশাসিত কেরলের! কাজ শুরু পঞ্চায়েতের