রাজনৈতিক স্বার্থে আঘাত লাগলেই পাহাড়কে অশান্ত করে তোলার রেওয়াজ অব্যাহত
সরকারের উন্নয়নের ধাক্কায় পাহাড়ে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার জোগাড় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আক্রমণাত্মক আন্দোলনের। ঠিক সেই সময়ই ফের একবার চেষ্টা হল পাহাড়কে অশান্ত করার।
ফের একবার পাহাড়কে যেন স্তব্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত। আচমকাই দার্জিলিং-এর ম্যালে পুলিশ এবং মোর্চার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ। পুড়ছে পুলিশের গাড়ি। এমনকী যাত্রীবাহি বাসও জ্বলছে দাউদাউ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ। আর তারপরই গোর্খা জনমুক্তির ঘোষণা পাহাড়ে অঘোষিত ধর্মঘটের। যদিও, পরে মোর্চার দাবি শুধুমাত্র শুক্রবারেই বারো ঘণ্টার পাহাড় বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে। অথচ, পর্যটনের এই ভরা মরসুমে এই মুহূর্তে পাহাড়ে রয়েছেন দশ হাজারেরও বেশি পর্যটক।
আসলে রাজনৈতিক স্বার্থে আঘাত লাগলেই পাহাড়কে অশান্ত করে তোলার এই রেওয়াজ এখনও চলে এসেছে।একটা সময় সুবাষ ঘিসিং পাহাড়ের মানুষের মনে হিংসার বীজ রোপন করেছিলেন। আর এই সময়ে সেই বীজ যেন রোপণ করছেন বিমল গুরুং।
এখনও সেই এক ইস্যু- গোর্খাল্যান্ড। একটা সময় এই ইস্যুতেই পাহাড়ে নিজের রাজ কায়েম করেছিলেন সুবাস ঘিসিং। এরজন্য পাহাড়ে জ্বালিয়েছিলেন হিংসার আগুন। পরবর্তী সময়ে গোর্খা হিল পার্বত্য পরিষদ গড়ে সেই দহনে প্রলেপ লাগানোর চেষ্টা হয়েছিল। সুবাষ ঘিসিং উত্তর প্রজন্মে পাহাড়ের নেতা হয়ে ওঠেন বিমল গুরুং। পাহাড়ে জিএনএলএফ শাসনেরও অবসান ঘটে।
শুরু হয় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার যুগ। দুই পক্ষেরই দাবি কিন্তু এক। পৃথক গোর্খাল্যান্ড। এখন গোর্খা হিল পার্বত্য পরিষদ ভেঙে তৈরি হয়েছে গোর্খা টেরিটোরিলায় অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ। মোর্চা তাতে সামিলও হয়েছিল। কিন্তু, এখন তারা জিটিএ থেকে বেরিয়ে এসে ফের গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের জিগির তুলতে চাইছে।
যে মোর্চা একটা সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রকৃত নেত্রীর তকমা দিয়েছিল। আজ সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কালো পতাকা দেখানো থেকে বিক্ষোভ মিছিল দেখাতে চাইছেন কেন? এর একটাই উত্তর, পাহাড়ে বেড়ে চলা তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তিতে সত্যিকারেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে মোর্চা। মিরিক পুরসভা পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।সদ্য সমাপ্ত পুরনির্বাচনে কার্শিয়াং ও কালিম্পং-এও তৃণমূল ভাল ভোট পেয়েছে।
এমনকী, লেপচা জনজাতি-সহ একাধিক ছোটখাটো জনজাতি পাহাড়ে তৃণমূলে আস্থা খুঁজে পেয়েছে। তাই, কোনওভাবে হিংসার রাস্তা দিয়ে পাহাড়ের মানুষের মনে কৌশলে আস্থা পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন গুরুংরা। পাহাড়ের জননেতাদের সর্বক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ার তীব্র রোগ আগেও ছিল এখনও আছে। একটা সময় এই রোগের সংক্রমণে জড়িয়ে গিয়েছিলেন সুবাস ঘিসিং। এখনও বিমল গুরুং। কিন্তু, এবার গুরুং-এর এই চাল কতটা সফল হবে তাতে প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ, পাহাড়ের মানুষ এখন উন্নয়ন চায়।