অদ্ভুত মিল দুই চণ্ডীতলার, মেলাইচণ্ডী-মাকড়চণ্ডী মন্দির ঘিরে কালী আরাধনায় মাতে ভক্তকুল
এই দুই চণ্ডীই সওদাগরদের স্থাপন করা। প্রচলিত গল্প অনুসারে, দামোদর দিয়ে যেসব সওদাগর যাতায়াত করতেন, তাঁরাই মেলাইচণ্ডীকে স্থাপন করেন নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে।
দুই চণ্ডীর মধ্যে লক্ষ্যণীয় নানা মিল। সে পুজো শুরুর ইতিহাস হোক বা মন্দির নির্মাণের গল্প, কিংবা বছরের নানা সময়ে মন্দিরে অনুষ্ঠিত নানা পুজো- সব কিছুতেই আমতার মেলাইচণ্ডী এবং মাকড়দহের মাকড়চণ্ডী অদ্ভুত মিল রয়েছে। দুই মন্দিরেই দুর্গাপুজো হয়, হয় কালীপুজোও হয়। কিন্তু, চণ্ডীমন্দিরে আসে না কোনও প্রতিমা। চণ্ডীমূর্তিতেই কালী আরাধনায় মাতে আমতা ও মাকড়দহ।
[আরও পড়ুন:শতবর্ষ প্রাচীন এই হাজার হাত কালীর পুজো, যার টানে ছুটে আসেন ভক্তরা ]
কথিত আছে এই দুই চণ্ডীই সওদাগরদের স্থাপন করা। প্রচলিত গল্প অনুসারে, দামোদর দিয়ে যেসব সওদাগর যাতায়াত করতেন, তাঁরাই মেলাইচণ্ডীকে স্থাপন করেন নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে। পরে জটাধারী চক্রবর্তী নামের এক ব্রাহ্মণ স্বপ্নাদেশ পেয়ে জয়ন্তী গ্রাম থেকে প্রস্তররূপী দেবীকে আমতায় নিয়ে আসেন। প্রথমে আমতার ময়রাপাড়ায় নিজের বাড়ির কাছে দেবীকে স্থাপন করেন।
পরে কলকাতার হাটখোলার নামকরা লবন ব্যবসায়ী কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত স্বপ্নাদেশ পেয়ে মেলাইচণ্ডী মন্দির নির্মাণ করে দেন। এই মেলাইচণ্ডী নামের উৎস সম্পর্কে মতানৈক্য আছে। কথিত আছে, চণ্ডীপুজো উপলক্ষে এখানে বিরাট মেলা বসত। লোকমুখে সেই 'মেলার চণ্ডী' এক সময় 'মেলাইচণ্ডী'তে রূপান্তরিত হয়ে যান। আবার অনেকে বলেন, দক্ষকন্যা সতীর মালাইচাকি এখানে পড়েছিল, তাই এই দেবীর নাম মেলাইচণ্ডী। ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কাব্যে আমতার মেলাইচণ্ডীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
প্রায় একই গল্প মাকড়চণ্ডীর ক্ষেত্রেও। এই দেবীরও নামের উৎস নিয়ে মতানৈক্য আছে। কেউ বলেন মার্কন্ডেয় পুরাণের চণ্ডী থেকে এই মাকড়চণ্ডী নাম। আবার কারও মতে সরস্বতী নদীর তীরে অবস্থিত এই অঞ্চল প্রচুর মকর অর্থাৎ কুমীর ছিল। নদীপথে সওদাগররা মকরের উৎপাত থেকে বাঁচতে মকরচণ্ডীর পুজো প্রবর্তন করেন। যা পড়ে মাকড়চণ্ডী নাম দেয়।
মেলাই চণ্ডীর মতো মাকড়চণ্ডী মন্দিরও স্বপ্নাদেশ পেয়ে নির্মাণ করেন মৌড়ির রামকান্ত কুণ্ডুচৌধুরি। শুধু তাই নয়, দুই দেবীমূর্তিতেও সাদৃশ্য আছে। একখণ্ড গোলাকার পাথরের খণ্ডকেই দেবীরূপে কল্পনা করা হয়। এই সাদৃশ্য বজায় আছে মন্দিরে পুজোগুলোর ক্ষেত্রেও। দুটো মন্দিরেই কার্তিক মাসে কালীপুজো হয়।
মেলাইচণ্ডীর মন্দিরে একটা ঘট স্থাপন করে পুজো করা হয়। মাকড়চণ্ডী মূর্তিতেই কালীপুজোর সমস্ত নিয়ম কঠোরভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয়। মাঝরাতে পুজো, ভোগের ব্যবস্থা সবই থাকে। মন্দির সেজে ওঠে আলোকমালায়। বাজি পোড়ানোর আনন্দে মেতে ওঠেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, 'এমনও একসময় ছিল, যে সময় পুজোর ঢাকের আওয়াজ যতদূর পর্যন্ত পৌঁছত ততদূর পর্যন্ত কোনও পুজো হত না। কিন্তু কালের স্রোতে সে নিয়ম বদলে যায়। তবে এখনও আশেপাশের যাঁরাই দুর্গা বা কালী পুজোর ব্যবস্থা করেন তাঁরা মন্দির থেকে অনুমতি নিয়ে যান।'
আশপাশের এলাকার মানুষ প্রতিমা এনে পুজো করলেও মেলাইচণ্ডীর মন্দিরে কালীপ্রতিমা আনা হয় না। কালীপুজোয় ঘট পুজোর ব্যবস্থা করা হয়। আর মাকড়চণ্ডীই পরম আরাধ্যা মাকড়দহে। তাই কালীপুজোর সময় সেই দেবীর ওপরেই কালীমাতাকে আরোপ করে কালীপুজো করিা হয়। প্রতিমা ছাড়া পুজোর সমস্ত নিয়মই কালীপুজোর মতো।