জঙ্গলের রাজত্ব কায়েম করেছে তৃণমূল! নন্দীগ্রামে ধর্ষিতার লড়াইয়ে পাশে ‘ওঁরা সবাই’
নন্দীগ্রামে ধর্ষিতার স্বামী এবার তৃণমূলের প্রতিহিংসার বলি হলেন। তাঁকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হল। এই ঘটনায় নিন্দায় সরব হল ‘আক্রান্ত আমরা’। আন্দোলনে ওঁরা সবাই।
নন্দীগ্রামের নির্যাতিতার পরিবারকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। এই আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল, তা সত্যি প্রমাণিত হল এদিন। নন্দীগ্রামে ধর্ষিতার স্বামী এবার তৃণমূলের প্রতিহিংসার বলি হলেন। তাঁকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হল। এই বলে ঘটনায় নিন্দায় সরব হল 'আক্রান্ত আমরা'। বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা বললেন, 'এই ঘটনা আবার স্পষ্ট করে দিল পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গলের রাজত্ব চলছে।'
মঙ্গলবার খেজুরি থেকে গ্রেফতার করা হয় ধর্ষিতার স্বামী পরশুরাম মান্নাকে। তাঁকে বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এরপরই নির্যাতিতা মহিলা অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এই খবর পাওয়ার পরই বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী ও 'আক্রান্ত আমরা'-এর পক্ষে অম্বিকেশ মহাপাত্র রাজ্যের শাসক দল ও পুলিশ-প্রশাসনের সমালোচনায় মুখর হন।
সুজনবাবু এদিন বলেন, 'তৃণমূলের আমলে রাজ্যে জঙ্গলের রাজত্ব চলছে। নন্দীগ্রামে এক তৃণমূল সদস্যা ঘরের বিনিময়ে ঘুষের টাকা দিতে পারেননি বলে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে ধর্ষণ করল দলেরই এক নেতা। তারপর জনরোষে পড়ে তাঁকে গ্রেফতারের পরই নির্যাতিতার স্বামীকে অস্ত্র আইনে ফাঁসিয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হল। এই দুই ঘটনা পরিষ্কার করে দেয় রাজ্যে মিথ্যা মামলার রাজত্ব চলছে। এর বিরুদ্ধে আমরা সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলনে নামব। আমরা সবাই নির্যাতিতা পরিবারের পাশে রয়েছি।'
শুধু সুজন চক্রবর্তী একা নন, শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন 'আক্রান্ত আমরা'-র আহ্বায়ক অম্বিকেশ মহাপাত্রও। তিনি বলেন, 'আক্রান্ত আমরা'-র পূর্ব অনুমান স্পষ্ট হচ্ছে। নির্যাতিতার পরিবারকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে। সেই কারণেই গ্রেফতার করা হল নির্যাতিতার স্বামী পরশুরাম মান্নাকে। এর বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতিবাদ চলবে। অত্যাচারী শাসক শেষ কথা বলে না। শেষ কথা বলে মানুষ।'
তাঁর আরও অভিযোগ, 'নন্দীগ্রাম ধর্ষণকাণ্ডে চাপে পড়ে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা অসিত হাজরাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তখনই থেকেই গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে প্রশাসন। 'গণ্যমান্য' নেতাকে মুক্ত করতে গেলে নির্যাতিতার স্বামী পরশুরামকে দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করাতে হবে। তিনি মামলা প্রত্যাহার করতে না চাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হল। এই কারণেই 'আক্রান্ত আমরা'-র প্রতিনিধিদের গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কেননা তা হলে এইসব ষড়যন্ত্রের রাস্তায় বন্ধ হয়ে যাবে। তখনই অনুমান করেছিলাম ষড়যন্ত্র চলছে।'
'পুরো ঘটনা সাজিয়ে নন্দীগ্রামের পাশের থানা এলাকায় অর্থাৎ খেজুরিতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ইতিমধ্যে নন্দীগ্রামের আইসি সমালোচিত। তাই পাশের থানা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করল। এর বিরুদ্ধে আমরা চিঠি লিখছি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, মানবাধিকার কমিশন, রাজ্যের মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজিকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। এই চিঠির কপি আমরা পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকেও পাঠাব। শুধু তাই নয়, সঙ্ঘবদ্ধভাবে আন্দোলনেও নামব আমরা। শীঘ্রই নন্দীগ্রামের আক্রান্ত ও নির্যাতিতা পরিবারের পাশে দাঁড়াতে কলকাতা থেকে রাজ্যব্যাপী তাঁদের প্রতিবাদ পৌঁছে দেওয়া হবে।'
[আরও পড়ুন:নন্দীগ্রাম ধর্ষণকাণ্ডে কি প্রতিহিংসা! আগ্নেয়াস্ত্র-সহ গ্রেফতার নির্যাতিতার স্বামী, কেন]
এপিডিআর-এর সহ সভাপতি রঞ্জিত সুর বলেন, 'রাজ্যে মানবাধিকার একটা নিষিদ্ধ শব্দ হয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের বিরুদ্ধে যারা মুখ খুলছে, প্রতিবাদ করছে, তাদের সঙ্গেই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে রাজ্যের শাসকদল। পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের সরকার এই কাজ করে চলেছে। কেন্দ্রের সরকারও একই পথে চলছে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'আমরা সাংগঠনিকভাবে প্রতিবাদ করছি। কিন্তু যাতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা যায়, তার পরিকল্পনা নিচ্ছি। সবথেকে নিন্দাজনক পুলিশের ভূমিকা। পুলিশ শাসকদেলর হয়ে গুন্ডাগিরি করছে। নন্দীগ্রামের ঘটনাও পুলিশ শাসকদলের হয়ে কাজ করছে। একেবারে ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে পুলিশ। পরিকল্পনা করেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বাম আমলকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে রাজ্যের শাসকদল।'