বিরোধী সাত কাউন্সিলরকে রক্ষাকবচ হাইকোর্টের, পরক্ষণেই ঝালদা পুরসভায় নতুন চেয়ারম্যান
বিরোধী সাত কাউন্সিলরকে রক্ষাকবচ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তারপরই ঝালদা পুরসভা নতুন চেয়ারম্যানকে বেছে নেওয়া হল। নতুন চেয়ারম্যান হলেন জবা মাছোয়াড়। কংগ্রেস ও নির্দল পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভার আস্থা ভোটে জয়ী হয়েছে।
বিরোধী সাত কাউন্সিলরকে রক্ষাকবচ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তারপরই ঝালদা পুরসভায় নতুন চেয়ারম্যানকে বেছে নেওয়া হল। নতুন চেয়ারম্যান হলেন জবা মাছোয়াড়। কংগ্রেস ও নির্দল পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভার আস্থা ভোটে জয়ী হওয়ার পর যখন ঝালদা পুরসভার লড়াই ফের আইনের দরজায় যায়, তখন রাতারাতি পুরপ্রধান নির্বাচন তাৎপর্যপূর্ণ।
তৃণমূল উপ-পুরপ্রধান সুদীপ কর্মকার অনাস্থার তলবি সভার সাত দিন পার হওয়ার আগেই ওই পদ থেকে ইস্তফা দেয়। তার ফলে জটিলতা তৈরি হয় পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভায়। পুর-বিধি মেনে রাজ্যের নগরোন্নয়ন ও পুর বিভাগ নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগের সুপারিশ করে। সেই মোতাবেক ঝালদা পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর জবা মাছোয়াড়কে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়।
শুক্রবার রাজ্যের নগরোন্নয়ন ও পুর বিভাগ এই মর্মে আদেশনামা জারি করে তা পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দার কাছে পাঠায়। সেই আদেশনামার প্রতিলিপি পাঠানো হয় ঝালদা পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার, নতুন চেয়ারম্যান ও বিভাগীয় মন্ত্রীর কার্যালয়ে। ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপাল অ্যাক্ট ১৯৯৩, সাবসেকশন ৪, অফসেকশন ১৭ বিধি মেনে এরপর নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। শুক্রবার রাতে এই বিষয়টি ঝালদা পুরশহরে চাউর হতেই বিরোধীরা জানিয়েছেন, তারা এই পুরপ্রধান নিয়োগের বিরুদ্ধে কোর্টে যাবেন।
এদিকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে আগাম সতর্কতার মামলায় হাই কোর্টে রক্ষাকবচ পান ঝালদা পুরসভার ছয় বিরোধী কাউন্সিলর। এক কাউন্সিলরকে আগেই রক্ষা কবচ দিয়েছিল হাইকোর্ট। এই সাত বিরোধী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ ছাড়া কোনও কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না বলে শুক্রবার এই সংক্রান্ত মামলায় নির্দেশ দেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থা।
মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হতে পারে এই আশঙ্কায় কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ঝালদা পুরসভার চার কংগ্রেস ও দুই নির্দল কাউন্সিলর। মামলাকারীর আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী জানান, গত ২১ নভেম্বর পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভার আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় তৃণমূল। অন্যদিকে দুই নির্দল কাউন্সিলরের সমর্থনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে কংগ্রেস।
নির্দল কাউন্সিলরদের নিয়ে আজ শনিবার তারা বোর্ড গঠনের প্রাক্কালে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর আশঙ্কায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কংগ্রেস কাউন্সিলর পূর্ণিমা কান্দু, মিঠুন কান্দু, বিজয় কান্দু, বিপ্লব কয়াল এবং নির্দলের শিলা চট্টোপাধ্যায় ও সোমনাথ কর্মকার। সেই মামলাতেই আদালতের নির্দেশ, তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ ছাড়া কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে না পুলিশ।
গত ১৩ অক্টোবর ঝালদার তৃণমূল পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন বিরোধীরা। ১২ আসনের পুরসভার পাঁচ কংগ্রেস কাউন্সিলর এবং এক জন নির্দল কাউন্সিলর মিলিয়ে মোট ছ'জন অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন। ঠিক তারপরেই পুরসভায় শাসকদল ছাড়া তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিলা চট্টোপাধ্যায়। যিনি নির্দল প্রার্থী হিসাবে জিতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর দলত্যাগেই বদলে যায় সমীকরণ।
১২ আসনের পুরসভায় বিরোধী কাউন্সিলরের সংখ্যা বেড়ে হয় ৭। কার্যত স্পষ্ট হয়ে যায়, পুরসভা হাতছাড়া হতে চলেছে শাসকদলের। পুরপ্রধানের পদ হারাতে চলেছে তৃণমূল। আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণও দেয় বিরোধী শিবির। কিন্তু অনাস্থার তলবি সভায় তৃণমূল পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়াল অপসারিত হওয়ার সাত দিনের মধ্যেই একের পর এর নাটক উপস্থাপিত হয়।
পুরবিধি অনুযায়ী অনাস্থার তলবি সভার সাত দিনের মধ্যে উপ-পুরপ্রধানকে পুরপ্রধান নির্বাচনের জন্য বৈঠক ডাকতে হয়। অর্থাৎ ২১ নভেম্বর তলবি সভা হওয়ায় ২৮ তারিখ রাত ১২টা পর্যন্ত তার সময়সীমা ছিল। কিন্তু ওই দিন দুপুরে ঝালদার তৃণমূল উপ-পুরপ্রধান সুদীপ কর্মকার ওই পদ থেকে ইস্তফা দেন। ফলে জটিলতা তৈরি হয়। এদিকে ২৯ নভেম্বর তিন বিরোধী কাউন্সিলর পুরপ্রধান নির্বাচনের জন্য ৩ ডিসেম্বর অর্থাৎ শনিবার দিনক্ষণ ঠিক করেন। কিন্তু বিধি মেনে তা আর কার্যকর হল না। নতুন সমস্যা তৈরি হল ঝালদা পুরসভাকে ঘিরে।