তৃণমূল বিধায়ক সস্ত্রীক ঘনিষ্ঠদের নিয়ে পরিবারতন্ত্র চালাবেন বর্ধমান পুরসভায়? খোকনদের পছন্দে শোরগোল!
পুরভোটের দামামা বেজে গিয়েছে আগেই। বিভিন্ন দল প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। রাজ্যের শাসক দলের অনেকেই এখন জেলা থেকে কলকাতা ছুটছেন। চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীতালিকা নানা বিশ্লেষণ, কাটাছেঁড়া। ওয়ার্ড ধরে ধরে ২, ৩ বা কোথাও চারজনের নাম পাঠানো হয়েছে শীর্ষনেতৃত্বের কাছে। কোথাও আবার শুধু বিশেষ কারণে একজনেরই নাম। এরই মধ্যে বর্ধমানের বিধায়ক খোকন দাসের পছন্দের প্রস্তাবিত প্রার্থী তালিকা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। উঠছে পরিবারতন্ত্র ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ।
বর্ধমান পুরভোটের উত্তাপ বাড়ছে
তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বের কাছে পাঠানো বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসের প্যাডে লেখা একটি প্রস্তাবিত প্রার্থীর তালিকা এসেছে ওয়ানইন্ডিয়া বাংলার হাতে (যার সত্যতা যাচাই করা যায়নি)। এতে সই রয়েছে খোকন দাস ও শহর সভাপতি অরূপ দাসের। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো বর্ধমান পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সিংহভাগেরই নাম নেই এই তালিকায়। সস্ত্রীক প্রোমোটারের নাম যেমন রয়েছে, তেমনই দলীয় অনেক পদাধিকারীই সস্ত্রীক বা আত্মীয়স্বজন নিয়ে ভোটে দাঁড়াতে চাইছেন! অভিযোগ, সুকৌশলে এমনভাবে নাম পাঠানো হয়েছে যাতে একটা ওয়ার্ডে প্রার্থী করা না গেলে কোনও পরিবারের অন্য কেউ অন্য ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারেন।
তালিকা ঘিরে চাঞ্চল্য
দলের জনপ্রতিনিধি বা দলীয় পদাধিকারীরা পছন্দের তালিকা পাঠাতেই পারেন। কিন্তু একজন বিধায়ক দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে কীভাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মদত দিতে পারেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কেন না, অনেক প্রাক্তন কাউন্সিলের নামের পাশে তাঁর পদের উল্লেখ রয়েছে। আবার বিদায়ী কাউন্সিলরের নাম দুই বা তিনে ঠেলে দিয়ে তাঁর নামের পাশে প্রাক্তন কাউন্সিলর শব্দটাই বসানো হয়নি! প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্যদের পাশাপাশি যে বিদায়ী কাউন্সিলরের সঙ্গে বিধায়কের সম্পর্ক নিয়ে নানাবিধ জল্পনা রয়েছে তাঁদের নামই তালিকায় না থাকা বা গুরুত্বহীন জায়গায় থাকায় অন্য মাত্রা পেয়েছে গোটা বিষয়টি। অনেকে এমনটাও বলছেন, লিস্ট যেতেই পারে। শেষ হাসি হাসার সময় এখনও আসেনি। দলের শীর্ষনেতৃত্ব সবদিক খতিয়ে দেখেই যথাযোগ্য পদক্ষেপ করবেন।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মদত বিধায়কের?
বর্ধমান পুরসভায় প্রশাসকমণ্ডলীতে থাকা অনেকের নাম নেই বিধায়ক বা শহর সভাপতির পছন্দের তালিকায়। তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্বের ঘোষণা উপেক্ষা করে বিধায়ক সস্ত্রীক যেভাবে কাউন্সিলর হতে চাইছেন, সেটাও অবাক করেছে অনেককেই। দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। প্রোমোটারের পাশাপাশি বর্ধমান থানার প্রাক্তন আইসিরও নাম রয়েছে পছন্দের তালিকায়। এমনকী দলেরই প্রশাসকমণ্ডলীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া বা দলীয় কর্মী খুনে অভিযুক্তদের নামও দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে তালিকায় রাখা হয়েছে। এঁরা হলেন আবদুল রব ও শিবশংকর ঘোষ। বিধায়কের ঘনিষ্ঠদের কয়েকজনের নাম আবার তাঁদের অজান্তেই বাদ দিয়ে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে বলেও ক্ষোভ জন্মাতে শুরু করেছে দলের অন্দরে।
পরিবারতন্ত্রকে প্রাধান্য!
বর্ধমান পুরসভায় ৩৫টি ওয়ার্ড। যেভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ১, ২ বা ৩ নম্বর পছন্দ হিসেবে তালিকায় রাখা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে অর্ধেকেরও বেশি ওয়ার্ডে দাপট দেখাবে পরিবারতন্ত্র। যেমন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে নাম রয়েছে বিধায়ক খোকন দাসের, ২৩ নম্বরে তাঁর স্ত্রী মৌসুমী দাসের নাম রয়েছে। এই দুই ওয়ার্ডে অন্য কারও নামই প্রস্তাব করা হয়নি। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে নাম রয়েছে প্রাক্তন কাউন্সিলর পরেশচন্দ্র সরকারের, তাঁর পুত্রবধূ চৈতালি সরকারের নাম রয়েছে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথম পছন্দ হিসেবে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বাকি যাঁর নাম রাখা হয়েছে সেই শিবশংকর ঘোষ দলীয় কর্মী খুনের অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রোমাটার নারুগোপাল ভকতের নাম রয়েছে এক নম্বরে, তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমা ভকতের নাম রয়েছে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রথম পছন্দের প্রার্থী হিসেবে। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে নাম রয়েছে প্রাক্তন কাউন্সিলর মমতা রায়ের, ২১ নম্বরে দ্বিতীয় পছন্দ জয়দেব মুখোপাধ্যায়, সম্পর্কে তাঁরা আবার ভাই-বোন। ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে কাটাকাটির পর তিনটি পছন্দের নাম হিসেবেই শহর সভাপতি অরূপ দাসের নাম রয়েছে। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে তিন নম্বর পছন্দ হিসেবে তাঁর ভাই প্রসেনজিৎ দাসের নাম রয়েছে। দলের জেলা মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের স্ত্রী সোনামণি দাসের নাম আবার রয়েছে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রথম পছন্দ হিসেবে।
কাদের নাম রয়েছে তালিকায়?
এবার একনজরে দেখা যাক কোন ওয়ার্ডে কাদের নাম পাঠানো হয়েছে:
ওয়ার্ড
নং
১-
বিকাশ
মণ্ডল,
সুমিত
শর্মা।
ওয়ার্ড
নং
২-
তাঞ্জুবা
বেগম,
ইয়াসমিন
খান,
রিমা
মির্জা
(বি.এ.
তৃতীয়
বর্ষের
ছাত্রী)।
ওয়ার্ড
নং
৩-
চায়না
কুমারী,
অনিতা
কুমারী
প্রসাদ
(বি.এ.),
মমতা
কুমারী।
ওয়ার্ড
নং
৪-
শেখ
নুরুল
আলম
(সাহেব),
শেখ
মহম্মদ
আলি
(প্রাক্তন
কাউন্সিলর)।
ওয়ার্ড
নং
৫-
শেফালি
বেগম
(প্রাক্তন
কাউন্সিলর),
ইফতেকার
আহমেদ।
ওয়ার্ড
নং
৬-
মণিকা
মণ্ডল,
সিমরণ
বাল্মিকী
(এম.এ.),
শিবাণী
রাজবংশী।
ওয়ার্ড
নং
৭-
ইতু
বন্দ্যোপাধ্যায়,
মিঠু
সিং,
এনাক্ষী
সাহা।
ওয়ার্ড
নং
৮-
সুতপা
ভট্টাচার্য,
তন্ময়
সিংহ
রায়,
বিশ্বজিৎ
ভট্টাচার্য।
ওয়ার্ড
নং
৯-
শিখা
সেনগুপ্ত
(প্রাক্তন
কাউন্সিলর)।
ওয়ার্ড
নং
১০-
চৈতালি
সরকার,
চন্দ্রা
দাস।
ওয়ার্ড
নং
১১-
পরেশচন্দ্র
সরকার
(প্রাক্তন
কাউন্সিলর),
শিবশংকর
ঘোষ।
ওয়ার্ড
নং
১২-
ভবতোষ
চক্রবর্তী,
নীহারেন্দু
আদিত্য,
ডা.
কিরণ
দাস।
ওয়ার্ড
নং
১৩-
তৃষ্ণা
সরকার,
পম্পা
পাল
(প্রাক্তন
কাউন্সিলর),
সমাপ্তিকা
মণ্ডল।
ওয়ার্ড
নং
১৪-
গৌরীশংকর
ভট্টাচার্য
(প্রাক্তন
কাউন্সিলর),
শেখ
তাজিবুর
রহমান
(জুয়েল),
সুজিত
বিশ্বাস।
ওয়ার্ড
নং
১৫-
নিমাই
মজুমদার,
ডা.
শঙ্খশুভ্র
ঘোষ।
ওয়ার্ড
নং
১৬-
পূর্ণিমা
ভকত,
সুজিত
বিশ্বাস।
ওয়ার্ড
নং
১৭-
রূপালী
কৈবর্ত্য
(প্রাক্তন
কাউন্সিলর)।
ওয়ার্ড
নং
১৮-
প্রদীপ
রহমান
(প্রাক্তন
কাউন্সিলর)।
ওয়ার্ড
নং
১৯-
সাহাবুদ্দিন
খান
(প্রাক্তন
কাউন্সিলর),
মোল্লা
লিয়াকত
হোসেন,
ইমরান
কায়ুম।
ওয়ার্ড
নং
২০-
মমতা
রায়
(প্রাক্তন
কাউন্সিলর),
স্বীকৃতি
হাজরা
(এমবিএ)।
ওয়ার্ড
নং
২১-
শ্যামাপ্রসাদ
বন্দ্যোপাধ্যায়,
জয়দেব
মুখোপাধ্যায়,
সৌগত
হালদার,
সুনীল
শ।
ওয়ার্ড
নং
২২-
নারুগোপাল
ভকত,
সমীর
মুন্ডা,
সুবীর
ঘোষ।
ওয়ার্ড
নং
২৩-
মৌসুমী
দাস।
ওয়ার্ড
নং
২৪-
খোকন
দাস
(প্রাক্তন
কাউন্সিলর)।
ওয়ার্ড
নং
২৫-
আশিস
বিশ্বাস,
অনুপ
আচার্য,
ভজন
দত্ত,
আজিজুল
হক
মণ্ডল।
ওয়ার্ড
নং
২৬-
নয়ন
মল্লিক
(এম.এ.)
(এমসিএ),
রিঙ্কু
খাতুন,
নাজমুনারা
বেগম।
ওয়ার্ড
নং
২৭-
ইন্তেখাব
আলম,
মহম্মদ
আসরাফউদ্দিন,
বসির
আহমেদ
(প্রাক্তন
কাউন্সিলর)।
ওয়ার্ড
নং
২৮-
রেখা
তিওয়ারি,
অমিত
সোনকর,
প্রসেনজিৎ
দাস।
ওয়ার্ড
নং
২৯-
সুশান্ত
প্রামাণিক।
ওয়ার্ড
নং
৩০-
রত্না
রায়
(প্রাক্তন
কাউন্সিলর),
হেনা
খান
(এম.এ.)
(বি.এড.)।
ওয়ার্ড
নং
৩১-
শান্তনু
দত্ত,
আবদুল
রব।
ওয়ার্ড
নং
৩২-
অরূপ
দাস
(প্রথম,
দ্বিতীয়
ও
তৃতীয়
পছন্দ
হিসেবে)।
ওয়ার্ড
নং
৩৩-
সোনামণি
দাস,
বাকি
যে
দুজনের
যে
নাম
লেখা
হয়েছে
তা
অস্পষ্ট।
(৩১,
৩২
ও
৩৩
নম্বর
ওয়ার্ডের
নামগুলিতে
যে
কাটাকুটি
করা
হয়েছে
তা
তালিকা
দেখে
বোঝা
যাচ্ছে)।
ওয়ার্ড
নং
৩৪-
উমা
সাঁই,
রমাপ্রসাদ
মুখোপাধ্যায়।
ওয়ার্ড
নং
৩৫-
সনৎ
বক্সী
(প্রাক্তন
কাউন্সিলর),
সোমা
বক্সী,
তপন
দাস।