গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ঐক্যের সুর পাহাড়ে! বিরোধীদের সঙ্গে এক মঞ্চে তৃণমূল নেতাও
হঠাৎ উলটপুরাণ পাহাড়ে। গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে হঠাৎ পাহাড়ে ঐক্যের সুর শোনা গেল। এমনকী বিরোধীদের সঙ্গে এক মঞ্চে হাজির হলেন তৃণমূল নেতাও।
হঠাৎ উলটপুরাণ পাহাড়ে। গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে হঠাৎ পাহাড়ে ঐক্যের সুর শোনা গেল। এমনকী বিরোধীদের সঙ্গে এক মঞ্চে হাজির হলেন তৃণমূল নেতাও। শুধু বিরোধীদের সঙ্গে এক মঞ্চে শামিল হওয়াই নয়, একেবারে বিরোধীদের সঙ্গে এক সুরে গোর্খাল্যাল্ডের দাবিতে সরব হলেন তৃণমূল নেতা। পাহাড়ে হঠাৎই বিভাজনের হাওয়া জোরদার বইতে শুরু করে দিল।
পাহাড়ে পঞ্চায়েত ভোট সামনেই। সেই কারণে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই যে যার মতো প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। একইসঙ্গে বইতে শুরু করেছে গোর্খাল্যান্ডের দাবি। শাসক-বিরোধী এবার একযোগে গোর্খাল্যাল্ড দাবি করে বসল। এখন পাহাড়ের তৃণমূল নেতা গোর্খাল্যান্ডের দাবির সঙ্গে সহমত ব্যক্ত করার পরই স্বাভাবিকভাবে চাপে পড়ে গেল রাজ্যের শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
গোর্খল্যান্ডের দাবিতে সম্প্রতি দিল্লিতে আয়োজিত বৈঠকে অংশ নেন তৃণমূল নেতা বিনয় তামাংস। তিনিও গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে বিরোধী সমস্ত দলের সঙ্গে দলা মেলান। জিটিএ-র সভাসদ বিনয় তামাংয়ের এই অবস্থান বদল করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি একেবারেই সংক্ষিপ্ত জবাব দেন। বলেন, পার্টি পরে, আগে গোর্খাল্যান্ড।
বিনয় তামাং ছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংয়ের সঙ্গী। ২০১৯-এর আগে দার্জিলিং উত্তপ্ত হওয়ার পর বিমল গুরুং পাহাড় ছাড়া হতেই সমীকরণ বদলাতে শুরু করে। বিনয় তামাং ক্রমেই সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার। তারপর ২০২১-এর আগে বিমল গুরুং ফিরে এসে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পুরনো অবস্থান দাবি করতেই আড়াআড়ি বিভাজিত হয়ে পড়ে পাহাড়ের শাসক দলটি।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা গুরুংপন্থী ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা তামাংপন্থী দল তৃণমূলের আনুকূল্যে থাকলেও পারস্পরিক লড়াই করে একুশের নির্বাচনে। তারপরই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ছেড়ে সটান তৃণমূলের যোগদেন বিনয় তামাং। আর তাঁর সঙ্গী অনীত থাপা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ছেড়ে নতুন দল গড়েন। সেই বিজেপিএম এখন পাহাড়ের শাসক দল।
এদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রাক্কালে গোর্খাল্যান্ডের দাবি তোলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রধান বিমল গুরুং। তিনি বলেন, গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে যে দল তাঁদের সমর্থন করবে, তাঁরা তার পক্ষেই থাকবেন। ফলে ২০২১-এ তৃণমূলে পক্ষে গলা মেলালেও এখন অন্য সুর শুনতে পাওয়া যায়। এখন বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে একই মঞ্চে শেয়ার করেন তৃণমূল নেতা বিনয় তামাং, ছিলেন পাহাড়ের আরও একটি দল হামরো পার্টির প্রধান অজয় এডওয়ার্ডসও।
এখন তৃণমূল নেতা বিনয় তামাং বিরোধীদের সঙ্গে এক মঞ্চে উপস্থিত হওয়ার পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়, তবে কি পাহাড়ে তৃণমূলে ভাঙন ধরতে চলেছে? পাহাড়ে তৃণমূলের অন্যতম প্রধান মুখ বিনয় তামাং দলবদল করতে চলেছেন? সেক্ষেত্রে আবার পাহাড়ে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। সেই সম্ভাবনাই ঘোরাফেরা করছে পাহাড়ের রাজনীতির অলিন্দে।
এদিন দিল্লিতে প্রায় দু-ঘণ্টা ধরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে এক সেমিনার হয়। সেখানে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রধান বিমল গুরুং গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ের সমস্ত দলকে একমত হওয়ার আহ্বান জানান। হামরো পার্টির সুপ্রিমো অজয় এডওয়ার্ডের কণ্ঠেও শোনা যায় তার প্রতিধ্বনি। গোর্খাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে জোট বাঁধার কথা বলেন তিনি। সেইসঙ্গে তৃণমূল নেতা বিনয় তামাংও একই সুরে কথা বলেন। তৃণমূলের ঐক্যবদ্ধ বাংলার পরিবর্তে তাঁর মুখে শোনা যায় গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সমর্থনের কথা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বছর ঘুরলেই গোটা রাজ্যের সঙ্গে পাহাড়েও পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে পাহাড়ে তিনটি পুরবোর্ডের নির্বাচন রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গোর্খা জনমুক্তির মোর্চার সেমিনারে পাহাড়ের শীর্ষ নেতৃত্বের এক মঞ্চে উঠে আসা তাৎপর্যপূর্ণ। এমনকী সেখানে তৃণমূল নেতা বিমল গুরুংও শামিল। শুধু নেই বিজিপিএম প্রধান অনীত থাপা। ফলে পাহাড়ে ফের নতুন সমীকরণ তৈরি হওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।