Tokyo Paralympics: কঠিন পথ পেরিয়ে প্যারালিম্পিকে পদক করোনাজয়ী নিশাদ-বিনোদের
জাতীয় ক্রীড়া দিবসের বিকেলে জোড়া সুখবর। টোকিও প্যারালিম্পিক গেমসে হাই জাম্পে ভারতকে রুপো এনে দিয়েছেন নিশাদ কুমার। এরপরই ডিসকাসে ব্রোঞ্জ বিজয় কুমারের। দুজনেরই টোকিওর পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। এমনকী বাধা হয়েছিল করোনাও। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর মনের জোরে নিশাদ, বিনোদরা দেখিয়ে দিলেন আমরাও পারি। দীপা মালিককে দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। আজকের পর তাঁরাও হলেন দৃষ্টান্ত।
More joyful news comes from Tokyo! Absolutely delighted that Nishad Kumar wins the Silver medal in Men’s High Jump T47. He is a remarkable athlete with outstanding skills and tenacity. Congratulations to him. #Paralympics
— Narendra Modi (@narendramodi) August 29, 2021
India is rejoicing thanks to Vinod Kumar’s stupendous performance! Congratulations to him for the Bronze Medal. His hard work and determination is yielding outstanding results. #Paralympics
— Narendra Modi (@narendramodi) August 29, 2021
দুর্ঘটনায় হাত হারিয়ে
নিশাদ কুমার হিমাচল প্রদেশের উনার বাসিন্দা। জন্ম ১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর। আট বছর বয়সে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। এতে তাঁর ডান হাত বাদ যায়। ২০০৯ সাল থেকে প্যারা অ্যাথলেটিক্সকে বেছে নেন নিশাদ। ২০১৯ সালের নভেম্বরে বিশ্ব প্যারা অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে পুরুষদের হাই জাম্পে টি ৪৭ ক্যাটেগরিতে তিনি ব্রোঞ্জ জেতেন। এই পদক জয়ের সুবাদেই তিনি টোকিও প্যারালিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণের ছাড়পত্র পেয়ে যান। যদিও এ বছরের গোড়ার দিকে তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। করোনাজয়ী হিসেবে সুস্থ হয়ে ট্র্যাকে ফেরেন। এ বছর দুবাইয়ে বসেছিল বিশ্ব প্যারা অ্যাথলেটিক্স গ্রাঁ প্রি-র আসর। সেখানে টি ৪৬ ক্যাটেগরিতে অংশ নিয়ে হাই জাম্পে সোনা জেতেন নিশাদ। তারপর আজকের এই সাফল্য।
|
রুপো নিশাদের
নিশাদ উনার বাসিন্দা হলেও বেঙ্গালুরু সাইতে প্যারা অ্যাথলেটিক্সের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ফিজিক্যাল এডুকেশন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। টোকিও প্যারালিম্পিকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর থেকেই তিনি পাখির চোখ করেছিলেন পদক জয়কে। জাতীয় ক্রীড়া দিবসে ভাবিনা প্যাটেল আজ সকালে টিটিতে রুপো জিতে টোকিও প্যারালিম্পিক গেমস থেকে দেশকে এনে দিয়েছিলেন প্রথম পদক। টি ৪৭ ক্যাটেগরির হাই জাম্পে নিজেরই সেরা পারফরম্যান্স এশিয়ান রেকর্ড স্পর্শ করে ২.০৬ মিটার উচ্চতা অতিক্রম করে দেশকে নিশাদ এনে দিয়েছেন দ্বিতীয় পদক। ভাবিনার পর নিশাদের সঙ্গেও ফোনে কথা বলে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
|
বিনোদের ব্রোঞ্জ
টোকিও প্যারালিম্পিক গেমসে ভারতের তৃতীয় পদকটি আজই এনে দিয়েছেন বিনোদ কুমার। তিনিও নিশাদের মতোই কয়েক মাস ধরে বেঙ্গালুরু সাইতে অনুশীলন করছিলেন। পুরুষদের এফ ৫২ বিভাগের ডিসকাস থ্রো-য় বিনোদ কুমার এশিয়ান রেকর্ড গড়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন। ৪১ বছরের বিনোদ কুমারের পিতাও সেনাবাহিনীতে ছিলেন। ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। বিনোদ কুমার ডিসকাস ছুড়ে ১৯.৯১ মিটার দূরে পাঠাতে সক্ষম হন। এই কীর্তি তাঁর প্যারালিম্পিকে ব্রোঞ্জ জয় নিশ্চিত করে দেয়। বিএসএফে যোগ দেওয়ার পর ট্রেনিংয়ের জন্য ২০০২ সালে গিয়েছিলেন লেহ-তে। সেখানে পর্বতগাত্র থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর চোট পান। এর ফলে প্রায় এক দশক তাঁকে শয্যাশায়ী থাকতে হয় বিনোদ কুমারকে। কোমরের নীচ থেকে পুরোটাই প্যারালাইসিস হয়ে যায়। এই অবস্থাতেই তাঁর বাবা ও মা প্রয়াত হন। ২০১২ সালে বিয়ে করেন। দুই সন্তানের পিতা প্যারা অ্যাথলেটিক্সে ক্যাটেগরি পেতে প্যারিস গিয়েছিলেন বোনের কাছ থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা ধার করে। যা আজ পদক জেতার পর মেটাতে পারবেন বলে তৃপ্ত বিনোদ কুমার।
|
কঠিন সফর
বিনোদ কুমারের হরিয়ানার রোহতাকে রাজীব গান্ধী স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কাছে একটি মুদিখানার দোকান রয়েছে। টোকিও প্যারালিম্পিকের প্রস্তুতির জন্য বেঙ্গালুরুর সাইতে গত অক্টোবর থেকে থাকার কারণে তাঁর স্ত্রী দোকানটি চালান। এই দোকানে বসেই অ্যাথলিটদের অনুশীলন দেখতেন বিনোদ। কিন্তু স্পাইনাল ইনজুরি ইচ্ছাশক্তিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। প্যারা অ্যাথলিটে যোগ দেওয়ার খবরাখবর নিতে শুরু করেন। কিন্তু খরচের কথা ভেবে পিছিয়ে আসেন বিনোদ। যা রোজগার হত তা তাঁর ও স্ত্রী অনিতার সংসার চালানোর পক্ষেই যথেষ্ট ছিল। ২০১৬ সালে বর্তমানে ভারতের প্যারালিম্পিক কমিটির প্রধান দীপা মালিক রিওতে পদক জেতার পর বদলে যায় ছবিটা। বিনোদও প্যারা অ্যাথলিটের প্রতি আগ্রহী হন। তাঁর মনে এই বিশ্বাস জন্মায় যে দীপা যদি রুপো জিততে পারেন আমিও দেশকে পদক জেতাতে পারব। তিরন্দাজির কোচ সঞ্জয় সুহাগের পরামর্শে কোচ হিসেবে অমরজিৎ সিংকে পেয়ে জয়পুরে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জেতেন। পরের বছর ফের পদক জেতেন। এরপর কোচ সত্যনারায়ণ বিনোদকে প্যারিসে নিয়ে যান। সেখানে ইন্টারন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি দুই বছরের জন্য টি বা এফ ৫২ ক্যাটেগরির ছাড়পত্র দেয়। ২০১৯ সালে দুবাইয়ে বিশ্ব প্যারা অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে চতুর্থ হয়ে বিনোদ কুমার টোকিওর টিকিট পেয়ে যান। তবে পথ কঠিন হয়েছিল দুইবার করোনা আক্রান্ত হওয়ায়। দুবারই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। করোনা জয় করার পরও সমস্যা ছিল। কেন না, গত বছর টোকিও প্যারালিম্পিক পিছিয়ে যাওয়ায় ফের ক্যাটেগরি নবীকরণ করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। গত রবিবারেই তা সম্পন্ন হয়। আর এক সপ্তাহ ঘুরতেই প্যারালিম্পিকে ব্রোঞ্জ জয় বিনোদ কুমারের।
And in no time another medal from #VinodKumar, today has been special.. he took to sports in late 30s and now at 42yrs creating an Asian Record and winning a @Paralympics medal. True grit and determination. #Bronze @ianuragthakur @narendramodi @Media_SAI #Praise4Para @Tokyo2020 pic.twitter.com/uWyoPasUef
— Deepa Malik (@DeepaAthlete) August 29, 2021