বর্ণিকাকাণ্ডের ছায়া, কলকাতায় রাতের অন্ধকারে ২৫ মিনিট ধরে দৌড় ভিন রাজ্যের তরুণীর
মঙ্গলবার রাতে বছর চব্বিশের এক তরুণীকে গাড়িতে ধাওয়া করে পাঁচ যুবক। প্রায় পঁচিশ মিনিট ধরে কলকাতার অলি-গলিতে প্রাণভয়ে দৌঁড়ন ওই তরুণী। শেষমেশ একটি বাড়িতে ঢুকে তিনি আশ্রয় নেন।
মহিলাদের জন্য আদৌ কতটা নিরাপদ কলকাতা? ফের সামনে চলে এলে এই প্রশ্ন। বুধবার রাতে দক্ষিণ কলকাতায় অটো রিক্সা চালক এক প্রৌঢ় মহিলার শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ সামনে আসে। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল কলকাতা। এই ঘটনার রেশ মেলাতে না মেলাতেই সামনে এসেছে এই ভয়ঙ্কর ঘটনা। জানা গিয়েছে, অটো চালকের হাতে প্রৌঢ়ার শ্লীলতাহানির ঘটনার একদিন আগের রাতে এই ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার রাতে বছর চব্বিশের এক তরুণীকে গাড়িতে ধাওয়া করে পাঁচ যুবক। প্রায় পঁচিশ মিনিট ধরে কলকাতার অলি-গলিতে প্রাণভয়ে দৌঁড়ন ওই তরুণী। শেষমেশ একটি বাড়িতে ঢুকে তিনি আশ্রয় নেন। অভিযুক্ত পাঁচ যুবককেও গ্রেফতার করেছে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট।
পুলিশ সুত্রে খবর, মঙ্গলবার রাত ৯টা নাগাদ সল্টলেক তথ্য-প্রযুক্তি পার্ক সেক্টর ফাইভ থেকে কাজ সেরে কেস্টপুরের ভাড়া বাড়িতে ফিরছিলেন ওই তরুণী। বৈশাখী থেকে কেস্টপুর খাল পার হতে তিনি ২০৬ নম্বর ফুট ব্রিজ ধরেন। ফুট ব্রিজ থেকে নামার পর কেস্টপুরের সমরপল্লী এলাকায় একটি দোকানে জিনিস কেনার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন ওই তরুণী। সে সময় তিনি নজর করেন একটি সাদা রঙের হন্ডা সিটিতে কয়েক জন তাঁকে অনুসরণ করছে। তরুণী লক্ষ্য করেন তিনি এক গলি থেকে অন্য গলিতে ঢুকলেও গাড়িটি তাঁর পিছু ছাড়ছে না। গাড়িতে বেশ কয়েক জন যে আছে তাও বুঝতে পারছিলেন ওই তরুণী। ঘটনাস্থল থেকে তখনও ওই তরুণীর ভাড়া বাড়ি বেশ খানিকটা দূরেই ছিল।
শেষমেশ না পেরে ওই তরুণী প্রাণ ভয়ে অলি-গলিতে দৌঁড়তে থাকেন। অভিযোগ ততক্ষণে গাড়ি থেকে বেরিয়ে ওই যুবকরাও তাঁর পিছনে দৌঁড়তে শুরু করে। এভাবে প্রায় ২৫ মিনিট ছোটার পরে তিনি একপ্রকার জোর করেই এলাকার একটি ঘরে ঢুকে পড়েন। যার ঘরে তিনি ঢুকেছিলেন তিনিও এক তরুণী। অন্য তরুণীটি বাড়ির মালিককে ডেকে আনেন। এরপর রাতে সাড়ে দশটা নাগাদ ওই বাড়ির মালিক ভীত-আতঙ্কগ্রস্ত তরুণীটিকে তাঁর ঘরে পৌঁছে দিয়ে আসেন।
বিনীত দেশাই নামে একজনের ফেসবুক পোস্টে বুধবার এই ঘটনা সামনে আসে। বিধাননগর পুলিশ এরপর তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ হন্ডা সিটির মালিক এবং সেই রাতে গাড়িতে থাকা যুবকদেরও চিহ্নিত করে। তারই ভিত্তিতে বিশ্বজিৎ মজুমদার, অভিষেক দাস, কিশোর বিশ্বাস, সজল দাস ও অভিষেক বাচারকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে বিশ্বজিৎ আবার প্রোমোটার এবং সাদা রঙের হন্ডা সিটি গাড়িটি তার বলেই জানা গিয়েছে। পুলিশ হন্ডা সিটি গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করেছে।
অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য তরুণীটিকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, ওই তরুণীকে নাকি ফোন করেছিলেন ধৃত প্রোমোটার বিশ্বজিৎ মজুমদারের স্ত্রী। তিনি নাকি ওই তরুণীর কাছে দাবি করেন, শুধুমাত্র ভয় দেখাতে এই ঘটনা। কিন্তু কীসের জন্য রাতের অন্ধকারে ওই তরুণীকে ভয় দেখাতে হল? বিশ্বজিৎ এবং তার সঙ্গীরা কি আগে থেকেই ওই তরুণীকে চিনতেন? এসব কিছু এখনও জানা যায়নি। অসমের বাসিন্দা ওই তরুণী বেশ কয়েক বছর ধরেই কলকাতায় তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। এমন ঘটনা তিনি এই প্রথম প্রত্যক্ষ করলেন। এর আগেও তিনি অনেক রাতে বাড়ি ফিরেছেন কিন্তু কোনও দিনই এমন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই চরম আতঙ্কে রয়েছেন তিনি।
সমরপল্লি এলাকার মানুষরা এমন ঘটনায় আতঙ্কে। তাঁদের অনেকেরই প্রতিক্রিয়া বুদ্ধিমানের মতো কোনও বাড়িতে না ঢুকে পড়লে আরও ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে পারত ওই তরুণীর সঙ্গে।
গত বছরই হরিয়ানায় এমন এক ঘটনা সামনে এসেছিল। হরিয়ানার বিজেপি মন্ত্রী তথা রাজ্য বিজেপি-র সভাপতির ছেলে বর্ণিকা কুণ্ডু নামে এক যুবতীকে চলন্ত গাড়ি থেকে অপরহরণের চেষ্টা করেছিল। গভীর রাতে নির্জন রাস্তায় আতঙ্কে নিজের গাড়ির কাঁচ তুলে বসেছিলেন বর্ণিকা। বন্ধুরা পরে ফোন পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। সেই ঘটনা আপাতত আদালতে বিচারাধীন। এবার সেই একই ঘটনার যেন ফোটোকপি কলকাতার শহরতলিতে।