ব্যানারে নেতাজীর মৃত্যুদিন ছাপিয়ে মহাবিতর্কে কলকাতা বইমেলা কর্তৃপক্ষ
ব্যানারে নেতাজীর মৃত্যুদিন ছাপিয়ে মহাবিতর্কে কলকাতা বইমেলা কর্তৃপক্ষ
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কি বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা। নেতাজির মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক থামেনি। আজও এই প্রশ্নগুলির উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছে মানুষ। কিন্তু আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় ব্যানারে বড় বড় করে টাঙানো নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মৃত্যু দিবস। আর এই নিয়েই নতুন করে বিতর্ক উসকে দিল।
আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা হল ১ এ টাঙানো রয়েছে একটি ব্যানার। সেই ব্যানারে লেখা রয়েছে, 'নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু হল- নেতাজি সুভাষ চিন্দ্র বসু জন্ম ১৮৯৭, ২৩ জানুয়ারি- মৃত্যু ১৮ আগস্ট ১৯৪৫।' এর অর্থ নেতাজির মৃত্যু তারিখও সেখানে উল্লেখ করা রয়েছে। এই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই তৈরি হয়েছে বিপুল বিতর্ক। অন্যদিকে, এই একই বিষয়ে কলকাতা বইমেলা আয়োজক সংস্থা গিল্ডের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী।
শুভেন্দু অধিকারী এ বিষয়ে টুইটে লেখেন, 'আমি দেশদ্রোহিতা মামলায় অবিলম্বে বিষয়টিতে পদক্ষেপ করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি। এছাড়াও দেশপ্রেমী বাঙালির কাছে আবেদন করছি কলকাতা বইমেলা ততদিন পর্যন্ত বয়কট করুন যতদিন না পর্যন্ত এই ভুল শুধরে নেওয়া হচ্ছে।' অন্যদিকে, এই প্রসঙ্গে গিল্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বিষয়টি জানা গিয়েছে, নেতাজির জন্মদিন সবাই জানে, কিন্তু মৃত্যুদিন কেউ জানে না। বইমেলায় সত্যিই এই ধরনের কোনও তথ্য কোনও হোর্ডিংয়ে থাকলে, তা সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে, এই মুহূর্তে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তুঙ্গে।
১৮ই আগস্ট,৭৭ বছর আগে এইদিনেই নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস তাইহোকুর তথাকথিত বিমান দুর্ঘটনার অন্তরালে অন্তর্ধান হন। সেদিন ঐ বিমানে যাঁরা যাঁরা নেতাজীর সাথে তথাকথিত মৃত্যুমুখে পতিত হন তাঁরা হলেন- ১) পাইলট তাকিজাওয়া, ২) কো পাইলট আয়োগী, ৩) রুশ বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট জেনারেল শিদেই ! রহস্যজনকভাবে একজনেরই প্রয়োজন ছিল নেতাজীর
রাশিয়া চলে যাওয়ার ব্যাপারে সঙ্গী হওয়ার ! আর ঠিক বাছাই করা একজনই মৃত্যুমুখে পতিত হলেন ? বাকিরা বেঁচে গেলেন ! কাকতালীয় নয় কী ? এখনও যাঁরা বিমান দুর্ঘটনার কাহিনী বিশ্বাস করে তা ফলাও করে প্রচার করেন, সেইসকল পন্ডিতগণ কিন্তু নেতাজীর ঐ রহস্যময় বিমানযাত্রার অন্যতম সঙ্গী ও বোসের এ্যাডজুটেন্ট 'কর্ণেল হবিবুর রহমান'র বিবৃতিকেই পরম সত্য ও বাস্তব বলে থাকেন।
আর তাছাড়া তিনিই একমাত্র ভারতীয় সঙ্গী ছিলেন বোসের ঐ শেষ বিমান যাত্রার। পরবর্তীকালে মিস্টার রহমান পাকিস্তানের সংবাদপত্র "Lahore Civil and Military Gazette"এ উল্টে এই বিমান দুর্ঘটনা তথা নেতাজীর মৃত্যুতত্ত্বই অস্বীকার করেন ! শুধু তাই-ই নয় 'শাহনওয়াজ কমিশনে' সাক্ষ্য দিতে এসে রহমান সাহেব 'শ্রী সুনীলকৃষ্ণ গুপ্ত ও শ্রী অমর গোস্বামী'র একপ্রশ্নের উত্তরে বলেন- "Let them declare that Netaji is dead. It would be our double gain when he will return."হাবিবুরের মতে দুর্ঘটনার ফলে বিমানে আগুন লেগে যায় সুভাষ চন্দ্র বসু এবং হাবিবুর রহমান বিমানের সামনের দিক দিয়ে মাটিতে ঝাঁপ দেন।
I urge @HMOIndia to take stringent action immediately for this seditious act.
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) March 1, 2022
Also would urge patriotic Bengalis to boycott the Kolkata Book Fair till this dishonour to Netaji is rectified.@jdhankhar1 @AmitShah @ANI @PTI_News @republic @IndiaToday @TimesNow @CNNnews18 @htTweets pic.twitter.com/Q8vMHHYrLN
জ্বালানির ট্যাঙ্কার ফেটে যাওয়ায় সুভাষ চন্দ্রের সমস্ত শরীর গ্যাসোলিনে ভিজে গিয়েছিল, এবং গায়ে আগুন ধরে গিয়েছিলো।সেই আগুনে সুভাষ চন্দ্রের মুখ ও শরীরের অধিকাংশ অংশ পুড়ে যায়। তাছাড়া দুর্ঘটনার আঘাতে সুভাষের কপালে একটা চার ইঞ্চি ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আগুনে পুড়ে সুভাষের শরীর প্রায় কালো হয়ে গিয়েছিল এবং এবং নিদারুন কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্যে সুভাষ চন্দ্র বসু শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন। রহমানের এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী "ভারতের মুক্তিদাতা" আপামর ভারতবাসীর হৃদয়রের মনিকোঠায় থাকা মানুষটি অসহনীয় কষ্ট ও নিদারুন যন্ত্রনা সহ্যকরে বিদেশের মাটিতে নিজের শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন।
অপদার্থ!
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) March 1, 2022
জেনে নাকি না জেনে?
বইমেলায় গিল্ডের করা প্যাভিলিয়নে নেতাজির জন্মতারিখের সঙ্গে মৃত্যুর দিনও!!!
তাহলে অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান করে দিল গিল্ডই।
অবিলম্বে এইসব সরানো হোক।
আমরা নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের যথাযথ তদন্তের পক্ষে। pic.twitter.com/VbO6lhwmY4
তৎকালীন সময়ে দাঁড়িয়ে জওহরলাল নেহেরু রহমানের এই ব্যাখ্যা সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে এই ব্যাখ্যা যে সত্য তা প্রমান ও প্রতিষ্ঠা করার বহু প্রচেষ্টা করেন। অর্থাৎ উনি বিশ্বাস করতেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বিমান দুর্ঘটনাতেই মারা গেছেন এবং তিনি এও বিশ্বাস করতেন সুভাষের মৃত্যুর কথা তিনি সকলকে বিশ্বাস করিয়েই ছাড়বেন।
প্রশ্ন ঠিক এই খানেই!যদি উপরের ব্যাখ্যায় তিনি সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন তাহলে এক সময়ের তাঁর সহযোদ্ধা, তাঁর বন্ধু সুভাষ দেশ মাতৃকার শৃঙ্খল মোচনের জন্য এতটা যন্ত্রনা ও নিদারুন কষ্ট সহ্য করে বিদেশের মাটিতে জীবন ত্যাগ করেছে জেনেও তিনি সুভাষের জন্য অথবা তাঁর রেখে যাওয়া আজাদ হিন্দ বাহিনীর সৈনিকদের জন্য তিনি কিছুই করলেন না কেন ?
১৯৪৫ সালের ২৫ সেপ্টম্বর জিকরগাছা, নীলগঞ্জ অঞ্চলে আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাম্পে ব্রিটিশ পুলিশ যে গনসংহার চালায়, যার ফলে হাজার হাজার নিরস্ত্র আই এন এ সৈনিক যাদের সেখানে রাখা হয়ে ছিল বিচারের জন্য তাদের মৃত্যু হয়, তাদের দেহ লোপাট করে দেওয়া হয়। এই নির্মম ঘটনা নেহেরু সকলের সামনে আনলেন না কেন ? কেন তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন না! এসব বিতর্কের মাঝে কীভাবে বইমেলা কর্তৃপক্ষ এমন দায়সারা কাজ সারল তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।