জ্বালানি তেল: বাংলাদেশে পেট্রোল-অকটেনের চাহিদা-যোগান পরিস্থিতি কী?
'বাংলাদেশে চাহিদার চেয়ে বেশি পেট্রোল ও অকটেনের মজুদ রয়েছে' - জুলাইয়ের শেষদিকে এমন মন্তব্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে। তার এক সপ্তাহের মধ্যেই অন্যান্য জ্বালানি তেলের পাশাপাশি অকটেন ও পেট্রোলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, "ডিজেল আমাদের কিনতে হয়, সেটা ঠিক। কিন্তু অকটেন আর পেট্রোল কিন্তু আমাদের কিনতে হয় না। আমরা যে গ্যাস উত্তোলন করি সেখান থেকে বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে পরিশোধনের মাধ্যমে পেট্রোলও পাই, অকটেনও পাই।"
"বরং আমাদের চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি অকটেন ও পেট্রোল আমাদের আছে, আমরা অনেক সময় বাইরে বিক্রিও করি" - বলেন তিনি।
অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর ঐ বক্তব্যের ভিডিও পোস্ট করে প্রশ্ন তুলছেন - বাংলাদেশে চাহিদার বেশি পেট্রোল ও অকটেনের মজুদ থাকলে কেন এই দাম বাড়ানো হলো।
বাংলাদেশে পেট্রোল আর অকটেনের চাহিদা-যোগানের পরিস্থিতি আসলে কী?
জ্বালানি তেলের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ আমদানি করে ডিজেল। বাংলাদেশে প্রতি বছর ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের সিংহভাগই ডিজেল। বছরে মোট ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মধ্যেও পেট্রোল ও অকটেনের হার সামান্যই।
- বিদ্যুৎ আর জ্বালানি সাশ্রয়ে বড় পদক্ষেপের ঘোষণা বাংলাদেশে
- বাংলাদেশে জ্বালানি সংকট চলতে পারে শীত না আসা পর্যন্ত
- জ্বালানী নিয়ে 'আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই', বিপিসির দাবি
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে সে বছর মোট জ্বালানি তেল ব্যবহার হয়েছিল ৫৫.০৩ লক্ষ মেট্রিক টন।
ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭৩.১১% ছিল ডিজেল, পেট্রোলের ব্যবহার ছিল ৫.৮৬% আর অকটেন ব্যবহার হয়েছে মোট জ্বালানি ৪.৭৮ ভাগ।
বিপিসি'র সূত্র অনুযায়ী, মোট জ্বালানি তেলের ব্যবহার প্রতিবছর কিছুটা বৃদ্ধি পায়। জ্বালানি তেলের বার্ষিক ব্যবহারের পরিমাণই জ্বালানি তেলের চাহিদা হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিপিসি'র তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ সালে মোট জ্বালানি তেলের চাহিদা ছিল প্রায় ৭০ লক্ষ মেট্রিক টন - যার মধ্যে অকটেনের ব্যবহার ছিল ৩ লক্ষ ৩৯ হাজার ৬০২ মেট্রিক টন, আর পেট্রোলের ব্যবহার ছিল ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন সূত্র বলছে, বাংলাদেশে বছরে অকটেনের চাহিদা থাকে তিন থেকে সাড়ে তিন লক্ষ মেট্রিক টন আর পেট্রোলের চাহিদা থাকে চার থেকে সাড়ে চার লক্ষ মেট্রিক টন।
অকটেনের চাহিদার একটা অংশ আমদানি হয়
এই জ্বালানি তেলের মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোল আমদানি না করলেও বিপিসি'র সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশের বাৎসরিক অকটেনের চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশ আমদানি করে থাকে।
বার্ষিক চাহিদার কী পরিমাণ অকটেন আমদানি করতে হয়, সে সম্পর্কে তথ্য পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের মার্চ মাসে সংস্থাটি ৫১ হাজার ৮৬ মেট্রিক টন অকটেন আমদানি করেছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে এই আমদানির পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৯১৩ মেট্রিক টন।
আমদানির পাশাপাশি, বাংলাদেশের ভেতরে গ্যাস উত্তোলনের সময় গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া উপজাত বা 'কনডেনসেট' থেকেও স্থানীয়ভাবে অকটেন উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ কি জ্বালানি তেল রপ্তানি করে?
বাংলাদেশ যেই অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে, তা প্রক্রিয়াজাত করে পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন করার সময় উপজাত হিসেবে 'ন্যাফথা' উৎপাদিত হয় - যা বিদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে।
'ন্যাফথা' পেট্রোলের মতই তুলনামূলক কম পরিশোধিত এক ধরণের জ্বালানি তেল।
দশ-বারো বছর আগে বাংলাদেশ প্রতি বছর লক্ষাধিক মেট্রিক টন ন্যাফথা রপ্তানি করতো। তবে বর্তমানে দেশের ভেতরে বিভিন্ন বেসরকারি পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্টে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল হিসেবে ন্যাফথা ব্যবহৃত হওয়ায় ন্যাফথা রপ্তানির পরিমাণ বেশ কমেছে।
বিবিসি বাংলায় আজকের আরো খবর:
মংলা বন্দরকে যেভাবে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য ব্যবহার করবে ভারত
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর, ইসরায়েলি অবরোধ তোলা হয়েছে
পীত সাগর ও বোহাই সাগরে নতুন সামরিক মহড়ার ঘোষণা চীনের
ভারতে মুসলিম বিদ্বেষী সঙ্গীতের উত্থান চলছেই
পাইলট হতে ব্যর্থ সিকান্দার রাজা এখন 'পূর্ণাঙ্গ ম্যাচ উইনার'