ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষণা, ডেঙ্গি-জিকার চিকিৎসায় আশার আলো
ডেঙ্গি ও জিকা নিয়ে আশার আলো দেখাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন ভবিষ্যতে অন্তঃসত্তা মহিলা এবং তাদের শিশুরা যেমন রক্ষা পেতে পারেন, তেমনই রক্ষা পাবেন ডেঙ্গি আক্রান্তরাও
ডেঙ্গি এবং জিকা নিয়ে আশার আলো দেখাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা যে তথ্য হাতে পেয়েছেন, তাতে ভবিষ্যতে অন্তঃসত্তা মহিলা এবং তাদের শিশুরা যেমন রক্ষা পেতে পারেন, ঠিক তেমনই ডেঙ্গির বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়ানো যেতে পারে।
যদিও এই পরীক্ষার ফল রয়েছে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। পূর্বের বেশির ভাগ পরীক্ষার মতোই ইঁদুরের ওপর পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এরপর বড় কোনও পশুর ওপর পরীক্ষা। সবশেষে মানব দেহের ওপর পরীক্ষা। গবেষকদের অনুমান, উদ্ভাবিত অ্যান্টিবডি জিকা আক্রান্ত অন্তঃসত্তা মহিলা কিংবা জিকা এবং ডেঙ্গি উভয় রোগীকেই সারিয়ে তুলতে পারবে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ মেডিসিন এবং লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ বিষয়টি নিয়ে মিলিতভাবে তাঁদের গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে।
ডেঙ্গি এবং জিকা হল সম্পর্কযুক্ত ফ্ল্যাভিভাইরাস। গবেষকরা তাই দেখতে চাইছিলেন, যে অ্যান্টিবডি ডেঙ্গি সংক্রমণকে প্রতিরোধ করে, তা একইভাবে জিকা ভাইরাসের ওপর ফলদায়ক কিনা।
প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষায়, বিজ্ঞানীরা পূর্ণবয়স্ক ইঁদুরের ওপর জিকা ভাইরাস প্রয়োগ করেন। এরপর এক, তিন ও পাঁচদিন পরে ডেঙ্গির অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করা হয়। যেসব ইঁদুরগুলির ওপর অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করা হয়নি, তাদের মধ্যে আশি শতাংশের ওপর ৩ সপ্তাহের মধ্যে মারা যায়। কিন্তু যেসব ইঁদুরগুলিকে জিকা আক্রান্ত হওয়ার তিনদিনের মধ্যে অ্যান্টবডি প্রয়োগ করা হয়েছিল, সেগুলি বেঁচে যায়।
এই অ্যান্টিবডি ভ্রূণকে রক্ষা করছে কিনা তা জানতে, গবেষকরা ছয়দিনের গর্ভাবস্থায় থাকা ইঁদুরগুলির ওপর জিকা ভাইরাস প্রয়োগ করেন। এর পর এক থেকে তিন দিন পরে প্রয়োগ করা হয় অ্যান্টিবডি। ১৩ দিনের গর্ভকালে দেখা যায়, ১ দিনের মাথায় ইঁদুরে জিকার যে জেনেটিক মেটিরিয়াল ছিল তার থেকে ছয়লক্ষ গুণ কম রয়েছে প্ল্যাসেন্টায় এবং ৪৯০০ গুণ কম রয়েছে ভ্রূণের মাথায়।
জলাতঙ্কের চিকিৎসার মতোই গবেষকরা জানাচ্ছেন, অন্তঃসত্তা হয়েছেন এমনটি জানার পর মহিলাদের ওপর চিকিৎসা চালানো যেতে পারে। যাতে তাঁরা জিকার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন।
তবে ডেঙ্গির জন্য এই অ্যান্টিবডি চিকিৎসার এই পদ্ধতি ডেঙ্গির লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। ডেঙ্গির স্ট্রেন যদি ভিন্ন প্রকৃতি হয়, কিংবা জিকার সংক্রমণ যদি খারাপ পর্যায়ে যায়, তাহলে বিষয়টি চ্যালেঞ্জের বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের অধ্যাপক মাইকেল ডায়মন্ড যদিও দাবি করছেন, তাঁদের তৈরি অ্যান্টিবডি দুধরনের ভাইরাসের বিরুদ্ধেই কার্যকরী। ডেঙ্গি আক্রান্ত অঞ্চলে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। কেননা এই অ্যান্টিবডি রোগকে আর খারাপ দিকে নিয়ে যাবে না।