ভয়াবহ আকার নিচ্ছে সাগরের প্লাস্টিক দূষণ! ২০৪০-র মধ্যে তিনগুণ ক্ষতির সম্ভাবনা
ভয়াবহ আকার নিচ্ছে সাগরের প্লাস্টিক দূষণ! ২০৪০-র মধ্যে তিনগুণ ক্ষতির সম্ভাবনা
পৃথিবীর তিনভাগ জল এবং একভাগ স্থল। বর্তমানে মনুষ্য সৃষ্ট প্লাস্টিক দূষণের জেরে এই তিনভাগে বসবাসকারী সামুদ্রিক জীবেদের বেঁচে থাকাটাই ক্রমশ প্রশ্নের মুখে দাঁড়াচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল সলিড ওয়েস্ট অ্যাসোসিয়েশন নামক একটি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের গবেষণার রিপোর্ট বলছে, সরকারি তরফে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে হয়তো আগামী ২০ বছরে সমুদ্রে আবর্জনার স্তূপের পরিমাণ ও সামুদ্রিক জীবনহানির সংখ্যা তিনগুণ হবে।
করোনাকালে ব্যবহৃত প্রচুর পরিমাণে মাস্ক ও গ্লাভস মিশছে সমুদ্রের জলে
এই এনজিওর মতে, করোনা সঙ্কটে এককালীন ব্যবহৃত মাস্ক ও গ্লাভস এশিয়ার বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে এসে জমছে। এছাড়া খাবার প্রক্রিয়াকরণ ও অনলাইন ডেলিভারির প্যাকেটও সামিল হয়েছে এই আবর্জনার স্তূপে। ইতিমধ্যে পিউ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং সিস্টেমআইকিউয়ের তরফে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে এমন পদ্ধতির উদ্ভাবন করা হয়েছে যাতে সাগরে ৮০% কম প্লাস্টিক ফেলা সম্ভব হবে। পিউ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের সিনিয়র ম্যানেজার এবং এই গবেষণার সহ-গবেষক হিসেবে কর্মরত উইনি লউ জানিয়েছেন, "প্লাস্টিকের সমস্যা শুধুমাত্র আমার বা তোমার নয়, এটি সত্যিই একটি জাতীয় সমস্যা।" গবেষণায় জানা গেছে, এভাবে চলতে থাকলে প্রতি বছরে সাগরে ফেলা প্লাস্টিকের পরিমাণ ১.১০ কোটি টন থেকে বেড়ে ২.৯০ কোটি টনে পৌঁছাবে।
সমস্যা এড়াতে দরকার উপযুক্ত কৌশল
এইভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সালে সমুদ্রবক্ষে ৬০ কোটি টন প্লাস্টিক ভেসে বেড়াবে, এমনটাই খবর রিপোর্ট অনুযায়ী। পিউ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও সিস্টেমআইকিউয়ের অধ্যবসায় এমন এক কৌশলের অবতারণা করা হয়েছে যাতে প্লাস্টিক উৎপাদনের জন্য নির্ধারিত খরচের মধ্যেই প্লাস্টিকের বদলে অন্যান্য পুনর্নবিকরণযোগ্য সামগ্রী ক্রয় এবং আবর্জনা সংগ্রহ করে তাকে পুনরায় ব্যবহার করার যোগ্য করা যেতে পারে।
১৯৫০ থেকে ২০১৭ সালে প্লাস্টিকের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রায় ১৭০ গুণ
গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৫০ সালে বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিকের উৎপাদন থেকে ২০১৭ সালে ২০ লক্ষ টন হলেও ২০১৭ সালে তা দাঁড়ায় ৩৪.৮০ কোটি টনে। এভাবে চললে ২০৪০-এ এই পরিমাণ তিন গুণ বেড়ে যাবে। এই বিষয়ে এক্সনমোবিল, ডউ এবং চেভরন ফিলিপস কেমিক্যাল জানিয়েছে যে, উৎপাদন বৃদ্ধি করলেও দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম তারা। অন্যদিকে সরকারি তরফে আইনের কড়াকড়ি করা হলেও সমীক্ষা বলছে যে, এইরকম ঢিলেঢালা নিষেধাজ্ঞা চলতে থাকলে ২০৪০ সালে মাত্র ৭% প্লাস্টিক নির্গমন রোধ করা সম্ভব। য়াতে লাভের লাভ বিশেষ কিছুই হবে না। এদিকে ইতিমধ্যেই কোকাকোলা, নেসলে, পেপসিকো, ইউনিলিভার-এর ন্যায় বৃহৎ সংস্থাগুলিও ভবিষ্যতে পুনর্নবিকরণ প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ করতে হবে
পিউ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং সিস্টেমআইকিউ-এর সমীক্ষা বলছে, সাগরে প্লাস্টিক নির্গমনের পরিমাণ ৮০% কমিয়ে আনতে গেলে কাগজ জাতীয় বা পুনর্নবিকরণ উপাদানের ব্যবহার করতে হবে এবং প্যাকিং ব্যবস্থায় যতটা সম্ভব অধিক পরিমাণে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য উপাদানের ব্যবহার করতে হবে। অন্যদিকে ব্রেক ফ্রি ফ্রম প্লাস্টিক নামক একটি স্বেচ্ছাসেবক সঙ্ঘের আধিকারিক ভন হার্নান্দেজ পিউ ও সিস্টেমআইকিউয়ের প্লাস্টিককে কৌশলগত উপায়ে পুনর্নবিকরণের বিরোধিতা করেছেন। তাঁর মতে, "এর ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ বাড়বে এবং ২০৫০ পর্যন্ত যদি প্লাস্টিক উৎপাদনকারীরা একইভাবে প্লাস্টিক তৈরি করতে সক্ষম হয়, তাহলে ওদের সমীক্ষা অর্থহীন হয়ে যাবে।"
সোনার দাম হু হু করে বাড়ছে! কলকাতায় দর কোথায় পৌঁছল