পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ দল পিটিআই, সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা, কিংমেকার হচ্ছেন বিলাওয়াল
শঙ্কাটাই এবার সত্যি হওয়ার পথে। পাকিস্তানে সংখ্য়াগরিষ্ঠতা হয়তো পাওয়া হচ্ছে না কোনও দলেরই।
শঙ্কাটাই এবার সত্যি হওয়ার পথে। পাকিস্তানে সংখ্য়াগরিষ্ঠতা হয়তো পাওয়া হচ্ছে না কোনও দলেরই। এখন পর্যন্ত ভোট গণনার যা ট্রেন্ড তাতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী পিটিআই ও পিএমএল-এন কারোর কাছেই সংখ্যা গরিষ্ঠ নম্বর থাকছে না। সরকার গঠনে দুই দলকেই হয়তো তাকিয়ে থাকতে হবে পিপিপি এবং অন্য়ান্য দলগুলির দিকে।
ভারতীয় সময় সকাল ৮টা পর্যন্ত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের গণনার যে আপডেট পাওয়া গিয়েছে তাতে ১১৪টি আসনে এগিয়ে রয়েছে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ বা পিটিআই। ৬৪টি আসনে এগিয়ে রয়েছে নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ-এন বা পিএমএল-এন। বেনজির ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি-র ঝুলিতে সম্ভবত যাচ্ছে ৪২টি আসন। আর অন্যান্য দলগুলির ঝুলিতে থাকছে ৫০টি আসন। ২৬৯ আসনের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে যে কোনও রাজনৈতিক দলকে সংখ্য়াগরিষ্ঠতা পেতে সরাসরি জয় করা ১৩৭টি আসন থাকতে হবে।
সরকার যেই গড়তে চাক তাকে হয় পিপিপি বা অন্য়ান্য দলগুলির সঙ্গে জোট তৈরি করতে হবে। সুতরাং, ত্রিশঙ্কু হতে চলা পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বিলিতে পিপিপি ও অন্য়ান্য দলগুলির প্রাপ্ত আসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। তবে সূত্রের খবর বিলাওয়াল ভুট্টো হয়তো তাঁর দল পিপিপি-কে নিয়ে ইমরানের পিটিআই-এর হাত ধরতে পারেন।
ইমরানের পিটিআই সরকার গঠনের খুবই কাছে রয়েছে। কিন্তু সেনাবাহিনী ও আইএসআই-এর আশীর্বাদ ধন্য পিটিআই-এর সঙ্গে পিপিপি-র জোট নিয়ে জটিলতা রয়েছে। কারণ, সেনাবাহিনী কোনওভাবেই পিপিপি-কে ক্ষমতার আশপাশে আসতে দিতে রাজি নয়। তাই ইমরানের দলের সঙ্গে জোট গড়ার বিষয়টির এখনই এখনই মিমাংসা সম্ভব নয়।
বুধবার সকাল ৮ থেকে পাকিস্তানে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছিল। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ও প্রভিনশনাল অ্য়াসেম্বলি মিলিয়ে মোট ৮৪৯টি আসলে ভোটগ্রহণ হয়। ১২,৫৭০ জন প্রার্থী এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটগ্রহণে শ্লথগতির অভিযোগে সরবও হয় রাজনৈতিক দলগুলি এবং ১ ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় ভোটদানের দাবিও জানানো হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় ভোটগ্রহণের সময় শেষ হয়ে গেলেও অসংখ্য ভোটদাতা তখনও লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ব্যালটে ভোট নেওয়ায় সময় আরও বেশি লেগে গিয়েছে বলে দাবি করে রাজনৈতিক দলগুলি। পিএমএল-এন অবশ্য আবার ভোটের শ্লথ গতির আড়ালে রিগিং-এের অভিযোগ আনে। সেনাবাহিনী, আইএসএসআই-এর ষড়যন্ত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে ভোটগ্রহণের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
যেখানে যেখানে সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও ভোটদাতারা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন সেখানেও নির্বাচন কমিশন থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, যাঁরা ভোট ক্ষেত্রের চৌহদ্দির সীমানা পার করে ভিতরে আসতে পেরেছেন তাঁদেরকেই শুধুমাত্র ভোট দিতে দেওয়া হবে। এই নিয়েও অসন্তোষ ছড়ায়।
মনে করা হচ্ছে সমস্ত আসনের ফল ঘোষণা হতে হতে সকাল হয়ে যাবে। এদিকে, পাকিস্তানের এদিন ভোট গ্রহণের মধ্যে নাশকতার ঘটনা ঘটে। কোয়েটায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ২৯ জনের মৃত্যু হয়। বিভিন্ন স্থানে হিংসায় ৩ প্রার্থীরও মৃত্যু হয়েছে।
সন্ত্রাসের আবহে যদিও ভোটদাতাদের সংখ্যা কমেনি। সন্ত্রাসের হুমকির মধ্যেও অধিকাংশ ভোটিং বুথেই মানুষ হাজির হয়েছেন তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে। এরই মধ্যে ভোটদাতাদের উদ্দেশে সতর্ক বার্তাও দেয় তেহরিক-ই-তালিবান জঙ্গি গোষ্ঠী। এই জঙ্গি গোষ্ঠীর নাম করে পোস্টারও দেওয়া হয়। যেখানে ভোটদাতাদের পরিসষ্কার করে ভোটকেন্দ্রগুলি থেকে দূরে থাকার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। নচেৎ ভোটদাতাদের প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে বলে এই হুমকিভরা পোস্টারে উল্লেখ করা হয়েছিল।
উত্তর ওয়াজিরিস্তানের খাইসোরে পোলিং আধিকারিক বুথেই যাননি। ফলে এখানে ১২০০ ভোটদাতা ভোট দিতে পারেনি। এই নিয়ে রীতিমতো উত্তেজনা ছড়ায়।
ভোটগ্রহণে সাধারণ মানুষ যেভাবে নিরাপত্তা আধিকারিকদের সহযোগিতা করেছে এবং ভালবাসা ব্যক্ত করেছে তাতে অভিভূত আইএপিআর-এর ডিজি মেজর জেনারেল আসিফ ঘাফুর। তিনি এই নিয়ে বেশকিছু টুইটও করেছেন।
এদিকে ইসিপি যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ২৭২ আসনে এদিন ভোটগ্রহ হয়েছে। আর এই আসনে ৩,৪৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। পঞ্জাব থেকে ১৬২৩জন, সিন্ধু থেকে ৮২৪ জন , খাইবার পাখতুনখোয়া থেকে ৭২৫ জন এবং বালুচিস্তান থেকে ২৮৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।