অর্থনৈতিক সঙ্কট ও মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে নেপালে নির্বাচন, কোন দিকে ঝুঁকে সাধারণ মানুষ
অর্থনৈতিক সঙ্কট ও মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে নেপালে নির্বাচন, কোন দিকে ঝুঁকে সাধারণ মানুষ
নেপালে আগামী ২০ নভেম্বর জাতীয় ও সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। নেপালে বর্তমানে অর্থিক সঙ্কট চলছে। তার মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এরমধ্যে নেপালে নির্বাচন যথেষ্ঠ তাৎপর্যপূর্ণ। বর্তমানে মধ্যপন্থী নেপালি কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোট ক্ষমতায় রয়েছে। নেপালি কংগ্রেস মাওবাদী সহ চারটে দলের সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় রয়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছে নেপালি কংগ্রেসের জয় লাভের ক্ষমতা সব থেকে বেশি।
নেপালের ভোটে বেশ কয়েকটি বিষয় প্রধান ভূমিকা রাখবে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছে। নেপালে সব থেকে প্রধান সমস্যা হল আর্থিক সঙ্কোচন ও মুদ্রাস্ফীতি। এছাড়াও নেপালে রাজনৈতির অস্থিরতা রয়েছে। নেপালের কোনও রাজনৈতিক দল জিতবে, তার ওপর প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে নেপালের সম্পর্ক নির্ভর করছে। নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো। আবার নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে চিনের সম্পর্ক ভালো।
অর্থনীতি ও মুদ্রাস্ফীতি
নেপালের জনসংখ্যা মাত্র ৩০ মিলিয়ন। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রভাব পড়েছে নেপালের ওপর। বিশ্বব্যাপী জ্বালানী ও খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির জেরে নেপালে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। নেপালে মুদ্রাস্ফীতি ৮ শতাংশ বেড়েছে। যা নেপালে গত ছয় বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। নেপাল মূলত পর্যটন কেন্দ্রিক দেশ। পর্যটনের ওপর নির্ভর করে নেপালের অর্থনীতি। করোনা মহামারীরর জেরে পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার প্রভাব নেপালের অর্থনীতিতে পড়েছে।
সঙ্কটে নেপাল
বর্তমানে দেশটি পাঁচ ভাগের এক ভাগ মানুষ দৈনিক ২ ডলারের নিচে আয় করে। তবে নির্বাচনের আগে প্রতিটি রাজনৈতিক দল খাদ্যপণ্যের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশ্বব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নেপালে ২০২১ সালে আর্থিক বৃদ্ধি হয়েছিল ৫.৫১ শতাংশ। চলতি বছরে তা দাঁড়িয়েছে ৫.১ শতাংশ।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
নেপালের অর্থনীতির এই সঙ্কটের জন্য অনেকাংশে দায়ী দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অস্থিরতা। চিনের ও ভারতের সঙ্গে নেপালের রাজনীতি যুক্ত। ২০০৮ সালে ২৩৯ বছরের পুরনো রাজতন্ত্রের অবসান হয়। নেপালে গণতন্ত্র আসে। নেপালে রাজতন্ত্রের অবসানের পর নেপালি ১০টি ভিন্ন সরকার গঠন করেছে। কিন্তু কোনও সরকার অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। নেপালির তিনটি প্রধান দল - নেপালি কংগ্রেস, কমিউনিস্ট ইউনিফাইড মার্কসবাদী-লেনিনবাদী (ইউএমএল) পার্টি এবং মাওবাদী কেন্দ্র। একদশক ধরে লড়াইয়ের পর নেপালের মাওবাদীরা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। মাওবাদীরা মূল ধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে। অর্থমন্ত্রী জনার্দন শর্মা, যিনি একজন মাওবাদী গেরিলা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, বলেছেন নেপালের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে সাধারণ নির্বাচন প্রয়োজন।
নেপালে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো
প্রতিযোগিতাটি মূলত নেপালি কংগ্রেস পার্টি এবং ইউএমএল পার্টির মধ্যে। বর্তমানে চারটে দলের সঙ্গে জোট বেঁধে নেপালিরা ক্ষমতায় রয়েছে। নেপালি কংগ্রেস ক্ষমতায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা, যিনি নেপালি কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি প্রাক্তন মাওবাদী বিদ্রোহীদের প্রধান দল মাওবাদী কেন্দ্র দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সরকারে আছেন। ৭৬ বছর বয়সী দেউবা ষষ্ঠবারের মতো ক্ষমতায় ফিরতে চাইছেন। তার নেপালি কংগ্রেস দলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো। অন্যদিকে মাওবাদী কেন্দ্রের নেতা প্রচণ্ড কিং মেকার হিসেবে নেপালের রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে।
ভারত ও চিনের স্বার্থ
নেপালের সঙ্গে ভারত ও চিনের কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে। চিনের বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভে নেপাল স্বাক্ষর করেছে। অন্যদিকে নেপালকে আমেরিকা ব্যাপক অনুদান দিয়েছে। যা চিনের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে নেপালের সঙ্গে চিনের ঘনিষ্ঠতা ভারতের চিন্তার কারণ হয়। নেপালের সঙ্গে চিনের ঘনিষ্ঠতা হলে ভারতের ওপর বেজিংয়ের নজর রাখা অনেকটা সহজ হবে।
ঐতিহাসিক রায়, অনগ্রসরদের ১০ সংরক্ষণে সবুজ সংকেত সুপ্রিম কোর্টের, জেনে নিন কী বলল আদালত?