তাইওয়ানকে আক্রমণ করতে পারে চিন, শক্তিশালী করা হচ্ছে দেশের সেনাকে
চিন এবার তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার পথে পা বাড়াল। দ্বিতীয় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকেই এই দেশ সামরিক শক্তিকে আরও শক্তিশালী করার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে চলেছে।
চিন এবার তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার পথে পা বাড়াল। দ্বিতীয় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকেই এই দেশ সামরিক শক্তিকে আরও শক্তিশালী করার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে চলেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে কেন? জানা গিয়েছে, পিপল'স লিবারেশন আর্মিতে (পিএলএ) প্রচুর পরিমাণে চিন বিনিয়োগ করেছে। যদিও এই দেশটি বর্তমানে কোনও যুদ্ধের সঙ্গে লিপ্ত নয় এবং স্বৈরাচারি এই দেশকে অন্য কোনও দেশ তাদের নিশানা করেনি।
তা সত্ত্বেও সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার পেছনের রহস্য কি থাকতে পারে তা স্পষ্ট নয়। পিএলএকে আধুনিকরণ করার অগ্রাধিকার দিয়েছেন চেয়ারম্যান শি জিনপিং। চিনের সামরিক শক্তির দিক থেকে প্রাথমিকভাবে কে নিশানায় রয়েছে? এ প্রসঙ্গে কানওয়া এশিয়ান প্রতিরক্ষার প্রতিষ্ঠাতা আন্দ্রেই চ্যাংকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে তাইওয়ান এক নম্বরে রয়েছে এবং চিনের নিশানায় এখন তাইওয়ান।'
চ্যাং এ প্রসঙ্গে একটু বিস্তারিতভাবে বলেন, 'দক্ষিণ চিন সাগরে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ। কারণ চিন সেখানে মনে হয় তিনটি কৃত্রিম সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছে। ওই ঘাঁটিতে রয়েছে নিজস্ব বিমানবন্দরও। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমস্যা তৈরি হলে, আমেরিকা এই জাতীয় সামুদ্রিক দ্বীপে হামলা চালাতে পারে এবং তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে।
আকারে ছোট হলেও এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে দক্ষিণ সাগরের সামরিক ঘাঁটিগুলিকে। তবে মূল এবং প্রধান লক্ষ্য আর প্রথম অগ্রাধিকার হল তাইওয়ান।' কানাডার বাসিন্দা আন্দ্রেই, যিনি কয়েক দশক ধরে পিএলএ নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি জানান, শি কেবল মাও সেতুংয়ের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়নি, তবে মাও যা অর্জন করেছিল তার চেয়েও বেশি এগিয়ে যেতে চান তিনি, কারণ শি খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষ। আন্দ্রে বলেন, 'তিনি সত্যি বড় কিছু করতে চান, আমার পাওয়া তথ্য অনুযায়ী। তিনি সর্বদা উচ্চ পদস্থ সামরিক কম্যান্ডারদের সঙ্গে কথা বলেন এবং একীকরণ অর্জন করা এই প্রজন্মের লক্ষ্য।
তবে আমার মনে হয় তাইওয়ান হল সবচেয়ে বিপদজ্জনক এলাকা। আর সেই কারণেই সেনা বাহিনী তাইওয়ানের ওপর নজর বিছিয়ে রেখেছে।' চ্যাং এখানে ১ অক্টোবর হওয়া তাইওয়ানে বিশাল কুচকাওয়াজের কথা উল্লেখ করেছে। যেখান পিএলএ নতুন হাই-টেক অস্ত্রের আধিক্য দেখায়, যার মধ্যে ৪০ শতাংশ আগে কখনও জনসাধারণের সামনে নিয়ে আসা হয়নি।
প্রকৃতপক্ষে, এই কুচকাওয়াজ দেখিয়েছিল যে গবেষণা এবং উন্নয়নের পাশাপাশি বিনিয়োগের বিষয়টি চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সশস্ত্র শাখা পিএলএল-তে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। হাতে এত নতুন চকচকে অস্ত্র নিয়ে পিএলএ কি কোনও কমিউনিস্ট নেতাদের নির্দেশে এটি জোর করে ব্যবহার করতে ইচ্ছুক? চিন কি আসলে তাইওয়ানকে আক্রমণ করতে রাজি হবে?
এ প্রসঙ্গে চ্যাং বলেন, 'হ্যাঁ, এটা অবশ্যই সম্ভব। নয়ত কেন এতো বিনিয়োগ করছে চিন পিএলএ-এর ওপর? যদিও এই মুহূর্তে আমি মনে করি প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত অর্থনীতি ও রাজনৈতিক সংগ্রাম। তাইওয়ান সমাজকে চিনপন্থী করে তোলার জন্য চিন সংবাদমাধ্যমকে হাতিয়ার করে সেখানে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। এটি এই মুহূর্তে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ এবং প্রচার যুদ্ধ, পাশাপাশি তাইওয়ানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ। তবে যদি চিনের এই কৌশলগুলি কাজ না করে তবে অবশ্যই সাহায্য নিতে হবে সামরিক শক্তির। শি জিনপিং এ বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন এবং তিনি তাঁর মেয়াদকালের মধ্যেই কিছু না কিছু করবেনই। কারণ চিন তার বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনীর আকার বৃদ্ধি করার সঙ্গে তার সামরিক পুনর্গঠনও করছে।