আর্থিক মন্দার দিকে এগোচ্ছ আমেরিকা! মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফের বাড়ল ফেডারেল রিজার্ভ রেট
আর্থিক মন্দার দিকে এগোচ্ছ আমেরিকা! মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফের বাড়ল ফেডারেল রিজার্ভ রেট
মুদ্রাস্ফীতি থেকে রক্ষা পেল না আমেরিকাও। এই মুদ্রাস্ফীতি রোধ করতে ফেডারেল রিজার্ভ দু'দিনের বৈঠক করে। সেখানে ০.৭৫ শতাংশ ফেডারেল তহবিলের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চলতি বছর স্বল্প ঋণের হার ১.৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি মার্কিন নাগরিকদের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। তাঁদের আয়ের তুলনায় ব্যয় বাড়তে শুরু করেছে। তার সঙ্গে সুদের হার ক্রমাগত বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ফেডরেল তহবিলের হার মার্চ মাস থেকে চার বার বাড়ানো হল। এরমাধ্যমে গৃহঋণ, গাড়িঋণ ও ক্রেডিটকার্ডের খরচ বাড়ানো হল।
ফেডারেল ফান্ড রেট বা ফেড তহবিলের হারের অর্থ
ফেড তহবিলের হার আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক দ্বারা নির্ধারিত করা হয়। এই সুদের হারেই মূলত মার্কিন ব্যাঙ্কগুলো একে অপরকে ঋণ দেয়। মূলত গ্রাহকরা এই সুদের হারে ঋণ নেয় না। ব্যাঙ্ক থেকে ব্যাঙ্ক থেকে সাধারণ মানুষ এই সুদের হারে ঋণ নেয় না। তবে তা ফেড তহবিলের ওপর নির্ভর করে।
আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতির কারণ
দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠকে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যে হারে আমেরিকার মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে, তাতে দেশ আর্থিক মন্দার দিকে ক্রমাগত অগ্রসর হচ্ছে। দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। ২০০৮-২০০৯ সালে আমেরিকায় আর্থিক মন্দার মতো পরিস্থিতি দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। বর্তমানে দেশ সেই পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দেশে মুদ্রাস্ফীতি, আর্থিক মন্দার দিকে আগ্রসরের নেপথ্যে রয়েছে করোনা মহামারী। এই করোনা মহামারী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। তার জন্য এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সুদের হার বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা
আমেরিকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফেড তার বেঞ্চমার্ক কমিয়ে শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে বলে জানা গিয়েছে। অর্থনীতিবিদ চেয়ার জেরম পাওয়েল জানিয়েছেন, ফেড তহবিলের হার বাড়ি, গাড়ি ও অন্যান্য পরিষেবার চাহিদার হার কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। খরচ কমানোর সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলেই তিনি মনে করছেন। গত চার দশকে হার ৯.১ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। তা ২ শতাংশে আনার চেষ্টা করছে ফেড। তারপরেও আমেরিকায় আর্থিক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করেছেন। আমেরিকায় বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমাগত বিভিন্ন সংস্থায় ক্রমাগত কর্মী ছাঁটাই ও শেয়ার বাজারের পতনের জেরে আমেরিকায় চলতি বছরের শেষের দিকে বা আগামী বছরের শুরুর দিকে আর্থিক মন্দা দেখা দিতে পারে।
গাড়ি ঋণের সঙ্গে গৃহ ঋনের সুদ বাড়ানো হয়েছে
গৃহ ঋণ বা গাড়ি কেনার জন্য ঋনে সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে গৃহঋনের সুদের হার প্রায় দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, ফেড ইঙ্গিত দিয়েছে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সুদের হার আরও বাড়তে পারে। তবে সুদের হার বাড়ার সঙ্গে বন্ধকের হার নির্ভর করে না। অনেক ক্ষেত্রে সুদের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধকের হার কমতে থাকে। মার্কিন অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, বর্তমানে আমেরিকার গৃহঋণের হার বাড়লেও, বাড়ির বিক্রয়মূল্য কমে গিয়েছে। গত পাঁচ মাসে গাড়ির বিক্রয়মূল্য টানা কমতে শুরু করেছে। যদি একটি বাড়ি কেনার মতো সামর্থ্য থাকে, এটাই সব থেকে ভালো সময়। তবে গাড়ি কেনার জন্য এটা সঠিক সময় নয়। গাড়ির জন্য নেওয়া ঋণে সুদের হার বাড়ছে। ফেডারেল রিজার্ভ ইঙ্গিত দিয়েছে, সুদের হার আরও বাড়বে। যার প্রভাব ক্রেতাদের ওপর যে পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।