উত্তল সময়েও বেজিংয়ের দুর্গোৎসব এবার পঞ্চম বছরে, নেতৃত্বে বাঙালি প্রাক্তন বিমান সেবিকা
কমিউনিস্ট চিনে মাত্র দু'টি দুর্গাপুজো হয়। একটি চিনের রাজধানী বেজিংয়ে এবং অন্যটি সাংহাইয়ে। গুজব-জল্পনা কল্পনার মধ্যে একদিকে যখন চিনের রাজধানী বেজিং প্রস্তুতি নিচ্ছে চিন কমিউনিস্ট পার্টির যুগ-সজ্ঞায়িত বৈঠকের, পার্টির প্রধান শি জিংপিংকে নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে, সেই সময় বেজিং চিনের জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে ১ অক্টোবর থেকে লম্বা সপ্তাহান্তের ছুটি পেয়েছে। কিন্তু এই ইত উত্তেজনা, প্রতিবন্ধকতা কোনওভাবেই বেজিংয়ের বাঙালিদের বহু-প্রতীক্ষিত দুর্গাপুজোর আনন্দকে ম্লান করতে পারেনি।
ভারতীয় দূতাবাসের ভেতর দুর্গাপুজো
বিজয়া দশমীর গোটা দিন জুড়ে বাঙালিরা বেজিংয়ের ভারতীয় দূতাবাসের ভেতর অবস্থিত স্বামী বিবেকানন্দ সাংস্কৃতিক সেন্টার অডিটোরিয়ামে দুর্গোৎসব পালন করেন। সামাজিক-সংস্কৃতি সংগঠন দ্য বেজিং বং (টিবিবি) এই পুজোর উদ্যোগ নেয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন কলকাতার প্রাক্তন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট।
বেজিংয়ের পুজো পাঁচ বছরে পড়ল
কলকাতায় জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা অনিন্দিতা দাস, যিনি পরে তাঁর অভিভাবকের সঙ্গে দিল্লি এবং এরপর লন্ডনে চলে আসেন, তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, 'আমাদের সমংগঠন দ্বারা পরিচালিত প্রথম দুর্গাপুজো হয়েছিল ২০১৮ সালে এবং গত চার বছর ধরে এই পুজো হয়ে চলেছে। এমনকী কোভিড বছর ২০২০ ও ২০২১ সালেও আমরা পুজোর আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু এই বছরটা একটু ব্যতিক্রম কারণ আমাদের সংগঠনের বহু সক্রিয় সদস্য মহামারির নিষেধাজ্ঞার কারণে চিনের বাইরে আটকে পড়েছে বা চিন ছেড়ে চলে গিয়েছেন।' জার্মান এয়ারলাইন লুফথানসার প্রাক্তন বিমান সেবিকা অনিন্দিতা দাস কিছু বছর আগেই তাঁর পাইলট স্বামী এরউইন ব্রুকম্যান ও দুই সন্তান নেইল ও কনস্টানটাইনের সঙ্গে বেজিংয়ে চলে আসেন। অনিন্দিতার স্বামী এরউইন নেদারল্যান্ডের বাসিন্দা। দাস বলেন, 'আমরা টিবিবি-এর শুরু থেকেই সক্রিয় সদস্য এবং গত চার বছর ধরে পুজো সহ সব ইভেন্টে অংশ নিচ্ছি। কিন্তু এই বছর টিবিবি সদস্যদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং পুজোয় নেতৃত্ব দেওয়ার মতো মানুষের অভাব থাকায় আমার মতো সম মনস্ক কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে এই পুজোর ঐতিহাসিক পঞ্চম বছর উদযাপন করছি। আমি নিজেকে নেতৃত্ব দিচ্ছি এমনটা বলব না। দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো সম্মান দেওয়ার পর টিবিবির পক্ষ থেকে জাঁকজমকের সঙ্গে হওয়ার এই দুর্গাপুজোয় আমি কেবলমাত্র সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় বজায় রাখছি।'
পুরোহিত পাওয়া দুষ্কর
দুর্গাপুজোর রীতি-রেওয়াজ করার জন্য বেজিংয়ে পুরোহিত খোঁজা একটা কঠিন বিষয়। পুজোর প্রধান আয়োজক আনাঘা ঠাকুর বলেন, 'প্রথম দু'বছর, আমরা ভারত থেকে পুরোহিত নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু গত দু'বছরে কোভিড প্রকোপের ফলে ভিসার ওপর বিধি-নিষেধ থাকায় এক সদস্যকেই পুরোহিত হিসাবে মেনে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কিছু মাস আগেই তিনি ভারতে চলে যান। যে সদস্য স্বেচ্ছায় পৌরহিত্যের কাজ করবেন বলেছিলেন তিনিও শেষ মুহূর্তে বেজিং আসতে পারেননি কারণ চিনের সাম্প্রতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার জন্য তাঁকে তাঁর তিয়ানজিনের বাড়ি থেকে বেরনোর অনুমতি দেওয়া হয়নি।' মহারাষ্ট্রের নাসিকের বাসিন্দা আনাঘা, যিনি বিয়ে করেন বেজিংয়ের বাঙালি সফটওয়্যার জয়ন্ত নন্দীকে।
ভার্চুয়ালি পুজোর রীতি–রেওয়াজ করা হয়
তবে হতাশ না হয়ে অনিন্দিতা সমাজ সেবী ও লেখক বিশ্বজিৎ ঝা-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, যিনি ২০১৯ সালে দুর্গাপুজো করার জন্য জলপাইগুড়ির রায়গঞ্জ থেকে বেজিংয়ে উড়ে আসেন। কিন্তু তাঁরও পেশাগত ব্যস্ততার কারণে এ বছর তিনিও সময় দিতে পারেননি। তবে তিনি তাঁর বাবা তথা শিক্ষক ও প্রশিক্ষণরত পুরোহিত বিনয় ভূষণ ঝাকে এই দায়িত্ব নিতে বলেন। দা বলেন, 'বিশ্বজিতের বাবা তাঁর বাড়ির মন্দির থেকেই ভার্চুয়ালি খুব সুন্দর ভাবে একদিনের সংক্ষিপ্ত পুজোর আচার-রীতি করেন।' অনিন্দিতা জানিয়েছেন যে সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে দুর্গাপুজোর আমেজকে বজায় রাখার অ্যাসাইন্টমেন্ট পূরণ করতে পেরে তিনি খুশি।