জল আছে, অথচ প্রাণ নেই! জানেন কি এই পৃথিবীতেই রয়েছে এরকম স্থান?
পৃথিবীই এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের জানা একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণ রয়েছে। তবে এই পৃথিবীতেও এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে শুধু মানুষ না, যেকোনও প্রাণীর পক্ষেই বেঁচে থাকা খুব কঠিন।
পৃথিবীই এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের জানা একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণ রয়েছে। তবে এই পৃথিবীতেও এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে শুধু মানুষ না, যেকোনও প্রাণীর পক্ষেই বেঁচে থাকা খুব কঠিন। ইলাহা কুয়েমাদা গ্র্যান্ডেতে থাকতে পারে না মানুষ। কারণ সেই দ্বীপটি বিষাক্ত সাপে ভর্তি। এছাড়া রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালি। যেখানে প্রচণ্ড গরমের জন্য মানুষের পক্ষে থাকা প্রায় অসম্ভব। তবে সাধারণত যেই জায়গায় জল রয়েছে সেখানে মানুষ কোনও কারণে না থাকতে পারলেও প্রাণ থাকে সেখানে। তবে সদ্য বিজ্ঞানীরা এমন এক জায়গা আবিষ্কার করেছে যেখানে জল থাকলেও নেই কোনও প্রাণ।
ইথিওপিয়ার দাল্লোল
ইথিওপিয়ায় অবস্থিত ডানাকিল ডিপ্রেশনের দাল্লোল ভূতাত্ত্বিক বা জিওথার্মাল ঝরনাতে কোনও প্রাণী নেই। সেখানে প্রাণীরা বাঁচতে পারে না। সম্প্রতী নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন জার্নালে থেকে নিয়ে সায়েন্স অ্যালার্ট ম্যাগাজিন বিষয়টি প্রকাশিত হয়।
ভিনগ্রহের মতো দেখতে দাল্লোল
সবুজ আর হলুদ রঙে ছেয়ে রয়েছে এলাকা। কিন্তু খুব গরম। আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলে দাল্লোল আগ্নেয়গিরিকে ঘিরে রয়েছে ভিনগ্রহের মতো দেখতে বিরান এই প্রান্তর। পৃথিবীর অন্যতম গরম জায়গা দাল্লোলে অনেকগুলি অতিরিক্ত অস্যিড যুক্ত ও অতিরিক্ত খারযুক্ত লেক রয়েছে। দেখতে সবুজ হলেও সেখানে কোনও প্রাণ নেই।
পৃথিবীর অন্যতম চরম পরিবেশ এখানে
যেদিকে চোখ যায়, সবখানেই শুধু তপ্ত জলাভূমি। আমাদের পৃথিবীতে সবচেয়ে চরম পরিবেশ যেসব জায়গায় রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এই স্থানটি অন্যতম। ২০১৬ সালে একটি গবেষণাতে দাবি করা হয় যে দাল্লোলের জলে অণুযীব পাওয়া গিয়েছে। তবে সম্প্রতী শেষ হওয়া গবেশণায় সেই দাবিকে নাকচ করা হয়।
এলাকায় প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা
এই এলাকায় প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের গবেষণা পরিচালক পুরিফিসিয়োঁ লোপে-গার্সিয়া। তিনি বলেন, হয় অতিরিক্ত অস্যিড যুক্ত ও অতিরিক্ত খারযুক্ত, কিংবা অতি লবণাক্ত কিছু জায়গা রয়েছে এই দাল্লোলে। তিনি জানান, একই সঙ্গে এই তিন বৈশিষ্ট্যযুক্ত কোনো স্থানে প্রাণ টিকে থাকতে পারে না। সে রকমই একটি জায়গা দাল্লোল আগ্নেয়গিরির চারপাশ।
জলে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম ও নুন
গবেষক দলটি ওই এলাকার কিছু স্থানের জলের নমুনা সংগ্রহ করে এবং তা পরীক্ষা করে দেখার চেষ্টা করে। গবেষণায় জানার চেষ্টা করা হয়, আমাদের গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যে যেসব পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তার ছিটেফোঁটাও দাল্লোলে আছে কি না। এসব নমুনায় পাওয়া জেনেটিক বস্তু বিশ্নেষণ করে দেখা হয়, সেখানে আদৌ কোনো জীবন্ত অণুজীব আছে কি না। পরীক্ষায় উঠে আসে যে দাল্লোলের জল ম্যাগনেশিয়ামের বিভিন্ন নুনে অতি ঘন, যা প্রাণের টিকে থাকার পক্ষে অনুপযোগী। কারণ ম্যাগনেশিয়াম দেহ গঠনের সবচেয়ে খুদে একক কোষের আবরণ ধ্বংস করে ফেলে।
একসময়ে জনবসতি ছিল দাল্লোলে
গবেষকদের বক্তব্য, দাল্লোল একটি হাইড্রোথার্মাল স্থান। এখোনে জায়গায় জায়গায় নুন,আগ্নেয়গীরীর জমাট পাথর আর সালফিউরিক অ্যাসিড রয়েছে। এই স্থানটি সমুদ্রতল থেকে প্রায় ১৩০ মিটার বা ৪৩০ ফুট নিচে রয়েছে। তবে এখন এখানে কোনও মানুষ বাস না করলেও জানা যায়, ১৮১৮ সালের এপ্রিল মাসে লবন পরিবহনের জন্য মেসার ফতমা বন্দর থেকে রেলওয়ে লাইন দাল্লোল নেওয়া হয়ছিলো।যার দৈর্ঘ ২৪ কিলোমিটার।বহু আগে এই শহরটি খনির শহর থাকলেও এটি এখন ভূতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে।
১৯২৬ সালে শেষ অগ্নুৎপাত দাল্লোল আগ্নেয়গিরির
ছবিগুলো দেখলে মনে হয়, এটি যেন অন্য গ্রহের ছবি কিংবা হলিউডের কোন সিনেমার বিশেষ কোন স্পেশাল এফেক্ট। তবে তা কিন্তু নয়। পাশাপাশি দাল্লোলের লেকের পাশাপাশি এর আগ্নেয়গিরিটিও অদ্ভুত। এই আগ্নেয়গিরি থেকে সবসময় নীল রংয়ের আভা বের হতে থাকে। যা প্রকৃতিতে সচরাচর দেখা যায় না। এই আগ্নেয়গিরি থেকে সর্বশেষ ১৯২৬ সালে অগ্নুৎপাত হয়েছিলো। আগ্নেয়গিরির ম্যাগমা মাটির নিচে বুদবুদের সৃষ্টি করে। এই রাশায়নিক প্রতিক্রিয়ার ফলে আগ্নেয়গরির গর্তগুলোতে নুন, সালফার,পটাশ এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ দ্রভীভূত হয়ে এখানে জমা হয়।