একুশের পরই চাকা ঘুরে গিয়েছে! উত্তরপ্রদেশে জাতপাত আর বর্ণের পাটিগণিত একনজরে
একুশের পরই চাকা ঘুরে গিয়েছে! উত্তরপ্রদেশে জাতপাত আর বর্ণের পাটিগণিত একনজরে
উত্তরপ্রদেশে এবার জিতবে কে? এবারও কি যোগী আদিত্যনাথের হাতে থাকবে রাজপাট, নাকি নতুন মোড় আনবে উত্তরপ্রদেশের জাতপাত আর বর্ণের রাজনীতি। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ দাবি করেছেন, একুশের পর থেকেই খেলা ঘুরতে শুরু করেছে। বিজেপির পাল্টা দাবি, ৪০ শতাংশের নীতে নামবে না ভোট, শেষ হাসি হাসবানে তারা। রাজনৈতিক তরজা তো চলতেই থাকবে ভোটের ফলাফল প্রকাশের আগে পর্যন্ত। তার আগে একবার চোখ মেলা যাক উত্তরপ্রদেশে জাতপাত আর বর্ণের পাটিগণিতে।
উত্তরপ্রদেশ উচ্চবর্ণ ও ওবিসি ভোটের হার
উত্তরপ্রদেশের ভোট মানেই জাতপাত আর বর্ণের অঙ্ক। যে যত পারদর্শী হয়ে অঙ্ক কষতে পারবে, সাফল্য তার দুয়ারেই কড়া নাড়বে। উত্তরপ্রদেশে উচ্চবর্ণের ভোট ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ। সাধারণ জাতিভুক্ত সেই ভোটারদের মধ্যে ১০ শতাংশ ব্রাহ্মণ ও ৭ শতাংশ ঠাকুর। উত্তরপ্রদেশে সবথেকে বেশি ৩৯-৪০ শতাংশ ওবিসি ভোট।
অন্য জাতি ও বর্ণের ভোট উত্তরপ্রদেশে
ব্রাহ্মণ ও ওবিসি বাদ দিয়ে বাকি ভোটারদের মধ্যে ৭-৯ শতাংশ যাদব এবং ৪ শতাংশ নিষাদ গোষ্ঠীর ভোট রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। এছাড়া প্রায় ২০ শতাংশ তফশিলি জাতি ও উপজাতি, তার মধ্যে ১০ শতাংশ জাতবও রয়েছেন। বাকি ১৬ থেকে ১৯ শতাংশ মুসলিম ভোটার।
উত্তরপ্রদেশে ৫ ভোট-গোষ্ঠীর বিভাজন
উত্তরপ্রদেশের ভোটে পাঁচটি প্রধান ভোট-গোষ্ঠীর দিকেই নজর থাকে রাজনৈতিক দলগুলির। উচ্চ বর্ণ, মুসলিম, অ-যাদব ওবিসি, যাদব এবং জাতব- এই পাঁচ গোষ্ঠীর মধ্যে দুয়ের বেশি প্রধান গোষ্ঠীর ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসাতে পারলেই সাফল্য আসবে। আর তা বিগত নির্বাচনে করে দেখিয়েছে শাসক দল। দুটি পূর্ণ গোষ্ঠীর ভোট এবং অ-যাদব ওবিসিদের ভোটে থাবা বসিয়ে ২০১২ সালে সপা জয়ী হয়ছি। আর মুসলিম-যাদব সমন্বয় ঘটিয়ে বিএসপি ২০০৭ সালে তা করে দেখিয়েছিল। আর বিজেপি সাড়ে তিনটি গোষ্ঠীর ভোটে আধিপত্য বিস্তার করে সাফল্য এনেছিল।
জাতপাতের যে অঙ্কে পরিবর্তন এনেছিল বিজেপি
বিজেপি ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে অ-যাদব ওবিসি এবং অ-জাতভ দলিতকে একত্রিত করে সাফল্য পেয়েছিল। যাদব, জাতব ও মুসলিমদের বাদ দিয়ে অ-যাদব ওবিসিরা বিজেপির দিকে ঘুরে গিয়েছিল। উচ্চবর্ণের অর্থাৎ ব্রাহ্মণ ও ঠাকুরদের ভোট বিজেপির পক্ষে ছিলই। যাদবদের পরে মৌর্যদের ৬-৭ শতাংশ এবং কুর্মিদের ৫ শতাংশ উত্তরপ্রদেশ সবথেকে বড় অ-যাদব ওবিসি ভোট ব্যাঙ্কেও থাবা বসায় বিজেপি।
বিজেপি ৬০ শতাংশ ভোট টার্গেটে যে অঙ্ক
বিজেপি ৬০ শতাংশের এর বেশি ভোট ব্যাঙ্ককে লক্ষ্যমাত্রা করেছিল ২০১৭ সালে। তারা টার্গেট করেছিল ১০ শতাংশ ব্রাহ্মণ ভোট, ১২ শতাংশ ঠাকুর এবং বৈশ্য ভোটার, ৩৩ শতাংশ অ-যাদব ওবিসি ভোট এবং ৭-১০ শতাংশ অ-জাতব দলিত ভোটকে। এর ফলে ৬০ শতাংশের মধ্যে ২০১৭ সালে ৪০ শতাংশ ভোট পেতে সক্ষম হয়েছিল বিজেপি। কারণ বিজেপি প্রায় সাড়ে তিনটি বড় গ্রুপের ভোট পেয়েছিল।
উত্তরপ্রদেশে জাতপাতের অঙ্কে মুসলিম ভোট
উত্তরপ্রদেশে মুসলিম ভোটগুলি এসপি-কংগ্রেস জোট এবং বিএসপির মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। মুসলিমরা পশ্চিম ইউপিতে জোটের পক্ষে ভোট দিয়েছে। সেখানে তারা মোট ভোটারের ২৯ শতাংশ। ইউপি বা উত্তর প্রদেশের অন্যান্য অংশের মুসলমানরা বিএসপিকে ভোট দিয়েছে। উত্তরপ্রেদেশ মোট মুসলিম ভোটার ১৬ থেকে ১৯ শতাংশ।
২০২১ সাল থেকে জাতপাতের অঙ্কে পরিবর্তন
সমাজবাদী পার্টি মনে করছে, এখন পুরনো ভোট-অঙ্কে পরিবর্তন হয়েছে। ২০২১ সাল থেকেই পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করেছে। কারণ বিজেপি 'ঠাকুর' সম্প্রদায়ের যোগী আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে। এই সিদ্ধান্ত ব্রাহ্মণদের পাশাপাশি অ-যাদব ওবিসিদের ক্ষুব্ধ করেছে। ফলে বিজেপির সেই জাত-ব্যাঙ্ক ভেঙে গেছে। বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ওই সম্প্রদায়ের নেতারা। তারা এখন এসপি-র দিকে ঝুঁকেছে। ইতিমধ্যে তিনজন ওবিসি মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং তারা সমাজবাদী পার্টির দিকে ঝুঁকেছেন।
২০১৭ ও ২০১৯ সালের ভোট-অঙ্ক উত্তরপ্রদেশে
২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি ৪০ শতাংশের বেশি ভোট নিয়ে। সপা-কংগ্রেস-বসপার জোটকে পর্যুদস্ত করে ৩১২টি আসন তারা দখল করেছিল উত্তরপ্রদেশে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কোনও দল এমন সাফল্য অর্জন করতে পারেনি দেশের বৃহত্তম রাজ্যে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি-বহুজন সমাজ পার্টি ৩৮ শতাংশ ভোট পেলেও বিজেপির ভোট শতাংশ পৌঁছে গিয়েছিল ৫০ শতাংশে। উত্তরপ্রদেশে ২০২২-এর নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি বা সপা এবং বিএসপি আলাদাভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তারপরও সমাজবাদী পার্টি একাই সরকার গঠন করবে বলে দাবি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের। বিজেপি বলছে, তারা ৪০ শতাংশের কম ভোট পাবে না। ফলে ক্ষমতায় থাকবে তারাই।
বিজেপি না সপা? উত্তরপ্রদেশে আসন্ন নির্বাচনের চাবিকাঠি ওবিসি ভোটারদের হাতে