জানেন কি? পণ প্রথার বিরুদ্ধে অনন্য লড়াই লড়ছে ভারতের এই প্রান্তিক গ্রাম
জানেন কি? পণ প্রথার বিরুদ্ধে অনন্য লড়াই লড়ছে ভারতের এই প্রান্তিক গ্রাম
শ্রীনগর: কাশ্মীর মানে এখন সৌন্দর্যের চেয়ে বেশি মাথায় আসে জঙ্গিহানা , গোলাগুলি, অশান্তির ছবি। তবে সংখ্যালঘু ভারতীয় এই উপত্যকার এক গ্রামের মানুষ এসবের বাইরে বেরিয়ে সমাজ দর্শনের উদাহরণ রেখে চলেছেন প্রতিনিয়ত। ২০২২সালে দাঁড়িয়েও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও বর্তমান পণ প্রথা। আর গ্রামের মানুষ লড়ছে এই পণ প্রথার বিরুদ্ধেই।
বাবা ওয়াইল গ্রামের মানুষরা বিবাহের সময় পণ দেন না। আর এখন পণের দাবিও করে না পাত্র পক্ষও। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত বাদাম গাছে ঘেরা এই গ্রাম। শ্রীনগর থেকে মাইল ত্রিশেক দূরে অবস্থিত এই গ্রাম, কিন্তু গাড়ি করে পৌঁছতে সময় লেগে যায় ঘন্টা দুয়েক। আসলে পাহাড়ি রাস্তা মোটেই ভালো নয়। তাই চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ভারতের এক কোনের এই স্থানে পৌঁছতে বেশ বেগ পেতেই হয়। সেখানকার মানুষের সঙ্গে কথা বললেই জানতে পারা যায় দেশের প্রতিটি কোনে ঘটে চলা পণ প্রথার বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াইয়ের কথা।
প্রায় ৭৫০ বছর ধরে এই গ্রামে বসবাস করছেন প্রায়১০০টি পরিবার। এরাই পণ না নিয়ে ভারতীয় সমাজের এই আদিম প্রথার বিরুদ্ধে নিদর্শন রাখছেন। এটিই দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম অঞ্চল যারা বন্ধ করেছে পণ প্রথাকে। বছর তেইশের জুবেদা বানো জানিয়েছেন, 'দেশের অনেক জায়গাতেই এখনও পণ নেওয়া হয়, কিন্তু আমাদের গ্রামে কেউ পণ দেয় না। একটা পরিবার থেকেও পণ না দেওয়ার জন্য কোনও মহিলা অত্যাচারিত হচ্ছেন তেমন খবরও পাবেন না।
তথ্য বলছে ভারতে পণপ্রথার জেরে নববধূর মৃত্যুহার বিশ্বে সর্বাধিক৷ ২০১৫ সালে ৭৬ হাজারেরও বেশি নববধূকে পুড়িয়ে মারা হয় কিংবা এঁরা অনেকেই অত্যাচার সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন৷ অথচ অভিযুক্তদের মাত্র ৩৫ শতাংশের সাজা হয়েছে৷ এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বরপক্ষের দাবিমতো পণ না দিতে না পারার কারণে ভারতে প্রতিদিন গড়ে প্রাণ হারাতে হয় ২০ জন নববধূকে৷ রাজধানী দিল্লিতেই গত কয়েক বছরে পণপ্রথার কারণে প্রাণ হারান ৭১৫ জন নববধূ৷ এই সংখ্যা ক্রমশই উর্ধ্বমুখী৷ এ বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত পণ সংক্রান্ত কারণে ১০৫ জন নববধূর প্রাণ হারান৷
কুপ্রথা ক্রমে সামাজিক সংক্রমণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে ভারতে পণপ্রথা পারিবারিক হিংসার এক বড় কারণ৷
জাতীয় অপরাধ ব্যুরোর রেকর্ড অনুসারে, গত তিন বছরে পণপ্রথার কারণে প্রাণ হারাতে হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার নববিবাহিত বধূকে৷ সবথেকে বেশি হয়েছে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে- ৭০৪৮ জন৷ তারপর বিহার ও মধ্যপ্রদেশে, যথাক্রমে ৩৮২০ এবং ২২৫০ জন৷ স্বামী বা শ্বশুর বাড়ির লোকেদের হাতে দৈহিক ও মানসিক পীড়নের অভিযোগের সংখ্যা সাড়ে তিন লাখের মতো৷ এসবের মাঝেই এক অন্য নিদর্শন রাখছে বাবা ওয়াইল গ্রাম।