মোদীর কাশ্মীর অভিযান: ট্রাম্প-ইমরান বৈঠক, আফগানিস্তান পরিস্থিতিও অন্যতম কারণ
সোমবার, ৫ অগাস্ট কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেয়।
সোমবার, ৫ অগাস্ট কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেয়। সংবিধানের বহুবিতর্কিত ৩৭০ নম্বর ধারাকে বিলোপ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার যার ফলে জম্মু ও কাশ্মীরকে আর বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হবে না এর পরে। সঙ্গে সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে দু'টি পৃথক কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। অর্থাৎ, সংবেদনশীল কাশ্মীর এখন থেকে আর রাজ্য হিসেবে পরিগণিত হবে না। রাজ্যের পৃথক সংবিধান,পতাকা বা আংশিক স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারই আর থাকবে না।
মোদী সরকারের এই পদক্ষেপ যে যথেষ্ট সাহসী, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। অনেক বিরোধী দল-নেতা এবং সমালোচক মোদীকে সমর্থন করেছে এই সিদ্ধান্তের জন্য। সাধারণ মানুষের বেশিরভাগই মোদীকে সাধুবাদ জানিয়েছে কারণ তাঁদের মতে কাশ্মীরকে আলাদা চোখে দেখার ব্যবস্থাটাই ছিল ত্রুটিপূর্ণ। দেশের বাকি রাজ্যগুলির থেকে কাশ্মীরকে আলাদা নজরে দেখার মধ্যেই ছিল একটি ভুল বার্তা, এমনটিই তাঁরা মনে করছেন।
আবার অন্যদিকে আরেক পক্ষের মতে, ভারত কাশ্মীরের বিশেষ তকমা বিলোপ করে আদতে ওই রাজ্যের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ভারতকে এখন আদতে কাশ্মীরে 'অকুপেশনাল ফোর্স' বা দলখলদার হিসেবে দেখা হবে। যদি কাশ্মীরে এরপরে স্বচ্ছ নির্বাচন এবং উন্নয়ন হয় তো ভালো, নচেৎ মোদী সরকারের এই চূড়ান্ত পদক্ষেপকে দেখা হবে বিশ্বাসঘাতকতার নিরিখেই।
এই বিতর্ক চলবে কিন্তু মোদী সরকারের এই আচমকা সিদ্ধান্তের পিছনে কি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বৈঠক দায়ী অনেকাংশেই?
সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ট্রাম্প ইমরানের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছিলেন যে মোদী তাঁকে কাশ্মীরে মধ্যস্থতা করতে অনুরোধ করেছিলেন।
মোদী বোঝালেন যে ট্রাম্পের 'মধ্যস্থতার' দাবি সঠিক নয়
ট্রাম্পের এই বক্তব্যে পাকিস্তান খুশি ব্যক্ত করে এবং ভারত ক্ষোভপ্রকাশ করে। মোদীর কণ্ঠে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি সেবারে। কিন্তু সোমবারের ঘটনা প্রমাণ করল যে মোদী নেহাত হাত পা গুটিয়ে বসে ছিলেন না ট্রাম্পের এই দাবির জবাব দিতে। কাশ্মীর নিয়ে তাঁর সরকারের পদক্ষেপে প্রমাণিত হল যে মোটেই তিনি ট্রাম্পের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে রাজি নন। আর কাশ্মীর নিয়ে নয়াদিল্লির সিদ্ধান্তের পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের "ওটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার" অবস্থানে বোঝা গেল দাওয়াই ঠিক জায়গাতেই পড়েছে। পাকিস্তানের কাছে এটি অত্যন্ত হতাশাজনক ঘটনা।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতিও মাথায় রেখেছে মোদী সরকার
আরেকটি প্রেক্ষিতেও মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এবং তা হল আফগানিস্তান। আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে অনেক পক্ষেরই উদ্বিগ্নতা বেড়েছে এবং তার মধ্যে ভারতও রয়েছে। ট্রাম্পের মেয়াদকালে ওয়াশিংটন আফগানিস্তানের পাঁক থেকে বেরোতে মরিয়া এবং সেই জন্যে তারা তালিবানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতেও পিছপা হয়নি। আফগানিস্তানের নির্বাচিত সরকারের গুরুত্ব বিশেষ নেই ধরে নিয়ে তারা তালিবান এবং পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকেছে।
আফগানিস্তানের ভারতের অবস্থান ক্রমেই দুর্বল হয়েছে এবং সেই কারণে নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করার দায়িত্ব নয়াদিল্লি নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি সেনা বেরিয়ে গেলে সেখানে চূড়ান্ত অশান্তি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তার প্রভাব কাশ্মীরের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলে পড়বে সর্বাগ্রে। অনেক পর্যবেক্ষকের মতে আফগানিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীরের নিরাপত্তা জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। এই অবস্থায় কাশ্মীরের প্রশাসনকে ভেঙে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় এনে মোদী সরকার সেখানকার সুরক্ষার উপরেই যে বেশি জোর দিল আগামী দিনের কূটনৈতিক বাস্তবতার কথা মনে করে, তা বুঝতেও ভুল হয় না।