
কয়লার অপ্রতুলতা, লোডশেডিং মোকাবিলায় 'বিদ্যুৎ-ব্যাকআপ'-এর ভাবনা TCS, Infosys-র
সম্প্রতি কয়লা সরবরাহের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে দেশের কিছু অংশ৷ একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে দেশে প্রায় ২০টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ কয়লার অপ্রতুলতার কারলে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছু শহরে ব্ল্যাকআউট ঘটিয়েছে বলেও খবর৷ এরকম অবস্থায় ভারতীয় আইটি পরিষেবা প্রদানকারীরা কোম্পানিগুলির অন্যতম বড় টিসিএস ও ইনফোসিস 'ব্ল্যাকআউট' মোকাবিলায় বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে। টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস) এবং ইনফোসিস সম্প্রতি কর্মীদের কাছে আবেদন জানিয়েছে যে তারা প্রধান প্রকল্পগুলিতে ব্যাঘাত এড়াতে পাওয়ার ব্যাকআপের ব্যবস্থা করুক৷

টিসিএস ইমফোসিসের বিদেশি গ্রাহকরা ভারতে কয়লার ঘাটতির খবরে আশঙ্কিত৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে খবর করেছে। সম্প্রতি ইকোনমিক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিসিএস এবং ইনফোসিস উভয়েই তাদের সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের কাছে ইমেইল পাঠিয়েছে যাতে তারা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের ব্যাকআপ প্রস্তুত করে। এবং রাজ্যে লোডশেডিং অব্যাহত থাকলে তাড়াতাড়ি সতর্কবার্তা দেশ৷ করোনা মহামারী রোধে লকডাউন বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২০ সালের মার্চ থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ ভারতীয় আইটি পেশাদার বাড়ি থেকে কাজ করছেন। সম্প্রতি কয়লার ঘাটতিজনিত লোডশেডিং এদের কাজে প্রভাব ফেলছে৷
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিতে কয়লার সরবরাহ বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ এবং গত কয়েক দিন ধরে পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং হরিয়ানায় কয়লার কোনও অভাব নেই বলেও কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে৷ কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ সচিব অলোক কুমার আগেই বলেছিলেন যে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার ঘাটতির কারণে রাজ্যগুলিতে বিদ্যুতের ঘাটতি ১ শতাংশের এরও কম। পাওয়ার সিস্টেম অপারেশন কর্পোরেশন লিমিটেড (POSOCO), রাষ্ট্র পরিচালিত কোম্পানি, যা ভারতীয় পাওয়ার সিস্টেমের সর্বক্ষণের সমন্বিত অপারেশন মনিটর এবং নিশ্চিত করে। সংস্থার তরফে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়ছে যে কম কয়লা মজুতের কারণে আউটেজ-এ থাকা ইউনিটগুলির মোট ক্ষমতা ঘাটতি ১১ জিডব্লিউ থেকে কমে ৫ জিডব্লিউতে নেমে আসবে ২১ অক্টোবরের মধ্যে।
১৩ অক্টোবর এক টুইটে কেন্দ্রীয় কয়লা, খনি এবং সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী বলেছেন যে কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড সহ সামগ্রিক কয়লা সরবরাহে গতকাল ২ মিলিয়ন টনেরও বেশি রেকর্ড মাত্রাকে স্পর্শ করেছে। তিনি আরও বলেন যে সারা দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ মজুদ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে কয়লা প্রেরণ আরও বাড়ানো হবে। করোনার প্রথম ওয়েভের পর থেকেই ভারত এবং বিদেশে টিসিএস-এর হাফ-মিলিয়নেরও বেশি কর্মচারীর বাড়ি থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এই কোলবিভ্রাট জনিত লোডশেডিংয়ে এবার বেশিরভাগ আইটি কোম্পানি তাদের কর্মীদের অফিসে ফেরত ডাকার পরিকল্পনা করছে। এর অন্য একটি কারণ হল কোভিড-১৯এর ক্ষেত্রে দেশজুড়ে ভ্যাকসিনেশন বৃদ্ধি পাচ্ছে৷
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সারা দেশে কয়লার উৎপাদন এবং বিভিন্ন রাজ্যে যোগানের পরিমানের সঙ্গে শেষ দু'বছরের কয়লার উৎপাদনের তুলনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে৷ যেমন ২০১৯ বা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গড় কয়লার উৎপানদের চেয়ে এবারে বেশি কয়লা তুলেছে দেশ৷ গত মাসে সারা দেশে সামগ্রিক কয়লার উৎপাদন ছিল ৫১.৭০ মিলিয়ন টন। যেখানে একই মাসে ২০১৯ সালে ৩৯.৪৮ মেট্রিক টন এবং ২০২০ সালে সেপ্টেম্বরে ৩৮.৯০ মেট্রিক টন কয়লা উৎপাদিত হয়েছিল ভারতে৷
একইভাবে, সেপ্টেম্বরে সামগ্রিকভাবে সারা দেশে কয়লা পাঠানো হয়েছে ৫৯.৮০ মেট্রিকটন। ২০২০-র সেপ্টেম্বর এবং ২০১৯ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে সারাদেশে কয়লা পাঠানো হয়েছিল ৫৪.৬৩ মেট্রিক টন এবং ৪৪.৩৬ মেট্রিকটন।